গাজীপুরে এতিম শিশু ইমনের মৃত্যু দেখতে প্রস্তুত হচ্ছেন মা

Slider জাতীয় ঢাকা ফুলজান বিবির বাংলা

1. child imon

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

গাজীপুর: ৩বছর বয়সে বাবা মারা গেছেন। ৭বছর ধরে খেয়ে না খেয়ে মায়ের কোলে বেড়ে উঠা ইমনের বয়স এখন ১০ বছর। বাড়ির পাশে খোলা মাঠে খেলা করার সময় মাঠের পাশে এক ফ্যাক্টরীর ৬তলা ভবন থেকে একটি ইটের বস্তা পড়ে আহত হয় সে। প্রাথমিকভাবে স্থানীয় ক্লিনিকে চিকিৎসা দেয়ার পর শরীরে ৩৫টি সেলাই নিয়ে পাঠানো হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। অভিযুক্ত শিল্প প্রতিষ্ঠান চিকিৎসার ব্যবস্থা না করে উল্টো হুমকি দেয়ার কারণে টাকার অভাবে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভতি করতে না পেরে গাজীপুরে বাসায় নিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছেন তার মা। বাবাহারা এতিম ইমনকে নিয়ে তার মা এখন অধপাগল। টাকার অভাবে বিনা চিকিৎসায় ছেলের মৃত্যু দেখতে প্রস্তুত হতে হচ্ছে তাকে।

শুক্রবার(২জানুয়ারী) দুপুরে ইমনের মা মজিনা বেগম ছেলে ইমনকে নিয়ে আসেন গাজীপুরে। ইমনের বাবার নাম লূৎফর রহমান। স্থায়ী বাড়ি নরসিংদি জেলার শরীফপুর গ্রামে। মায়ের সঙ্গে গাজীপুরের সাইনবোড এলাকায় থাকে ইমন।

ইমনের মা মজিনা বেগম  জানান, গত ৩০শে, ডিসেম্বর বিকেল ৩টার দিকে ইমন ও তার বন্ধুরা সাইনবোর্ড ভ’সিরমিল এলাকায় প্রীতি গ্রুপের ৬তলা ভবনের পার্শে খোলা জায়গায় খেলাধুলা করছিল। এমন সময় প্রীতি গ্রুপের ৬তলার উপর থেকে ইটের খোয়াবর্তি একটি বস্তা ইমনের উপর পড়লে ইমন সঙ্গে সঙ্গে চিৎকার করলে এলাকাবাসিরা ইমনকে উদ্ধার করে সাইনবোর্ড বাসট্যান্ড এলাকায় অবস্থিত আইন সামস জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন।

মজিনা বেগম আরো জানান, সামস হাসপাতালে ইমনের শরীরে ৩৫টি শেলাই দেয়া হয়। ডান হাতের তিনটি আঙুল থেতলে গেছে। জরুরী ভিত্তিতে মাথায় একটি সিটিস্ক্যান করতে হবে। কিন্তু ফ্যাক্টরী কতৃপক্ষ দায় অস্বীকার করায় স্থানীয় ভোগড়া পুলিশ ফাঁড়ির উপ-পরিদশক(এসআই) মোবারক হোসেনের সরণাপন্ন হয় মা মজিনা বেগম। মোবারক হোসেনের সহযোগিতায় বৃহসপতিবার রাতে গাজীপুরের সামস জেনারেল হাসপাতাল থেকে ইমনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। কিন্তু টাকার অভাবে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে না পেরে শুক্রবার দুপুরে তাকে গাজীপুরে নিয়ে আসনে তার মা। বতমানে টাকার অভাবে বিনা চিকিৎসায় শিশুটি মৃত্যুর প্রহর গুনছে।

এদিকে প্রীতি গ্রুপের খাম খেয়ালির কারনে ইমন গুরুতর আহত হয়ে ২দিন হাসপাতালে ভর্তি থাকার কথা জানলেও প্রীতি গ্রুপের কেউই ছেলেটিকে দেখতে আসেননি। নির্মাণাধীন ওই ভবনে গিয়ে দেখা যায়, ভবনের নিচে বেশকিছু ইটও ইটের বস্তা পড়ে আছে। ছেলেটির চিকিৎসার ব্যাপারে কি পদক্ষেপ না হয়েছে তা জানতে প্রীতি গ্রুপের জি,এম,মজিবর রহমানের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করতে চাইলে তিনি দেখা করেননি। পরে তার মোবাইলে (০১৮১৬৪২৪৫৬৪) ফোন করলে তিনি উত্তেজিত কন্ঠে বলেন, আমার ফ্যাক্টরী থেকে ইট পড়ে কোন শিশু আহত হয়নি। এগুলো মিথ্যে কথা। তাছাড়া ঘটনাটি ঘটেছে ফ্যাক্টরীর বাহিরে। ফ্যাক্টরীর বাউন্ডারীর ভিতর কোন ঘটনা ঘটলে তার দায়ভার কোম্পানী বহন করত।

তবে ফ্যাক্টরীর সিকিউরিটি ইনচাজ আঃ করিম ঘটনার সত¦তা স্বীকার করে বলেছেন, আহত ছেলেটির চিকিৎসা করানোর জন্য জিম এম সাহেব ব্যবস্থা নিচ্ছেন।

গোপন সূত্রে জানা গেছে, জি,এম,মুজিবর রহমান এই প্রতিনিধির নিকট ঘটনার দায় স্বীকার না করলেও ইমনের মাকে মামলা বা কোন মিডিয়ার নিকট ঘটনা প্রকাশ না করতে নজর রাখার জন্য ফ্যাক্টরীর ঠিকাদার জনৈক ইব্রাহিম এবং ফ্যাক্টরীর সিকিউরিটি ইনচাজ আঃ করিমকে গোপনে দায়িত্ব দিয়েছেন মজিবুর রহমান। আর ইব্রাহিম ও করিম ইমনের মাকে শ্বাসিয়ে যাচ্ছেন নিয়মিত। এর সত্যতাও মিলিছে ইমনের মায়ের সঙ্গে কথা বলে।

এ ব্যাপারে জয়দেবপুর থানার ভোগড়া পুলিশ ফাঁড়ির উপ-পরিদশক(এসআই) মোবারক হোসেন  জানান, এ ব্যাপারে অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয় হবে।

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *