পৃথিবীর কাছেই বাসযোগ্য গ্রহের সন্ধান

Slider জাতীয় বাংলার মুখোমুখি সারাদেশ

পরাণের উপযোগী আরো একটি গ্রহের সন্ধান পেয়েছে মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা। সংস্থাটির গ্রহ খোঁজার স্যাটেলাইট টেস এই গ্রহটির উপস্থিতি ও অবস্থান নিশ্চিত করেছে। এটির আকৃতি প্রায় পৃথিবীর সমান। গবেষণায় নিশ্চিত হওয়া গেছে যে গ্রহটি যে নক্ষত্রের চারদিকে ঘুরছে সেটি থেকে এটি বাসযোগ্য দূরত্বেই অবস্থান করছে। অর্থাৎ, সেখানে তরল পানি থাকার ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। এ খবর দিয়েছে আল-জাজিরা।

নতুন আবিষ্কৃত গ্রহটির নাম টিওআই ৭০০ডি। এটি পৃথিবী থেকে অন্য গ্রহগুলোর তুলনায় অনেক কাছে। এর দূরত্ব আমাদের থেকে মাত্র ১০০ আলোকবর্ষ।
হাওয়াইতে গত সোমবার নাসার জেট প্রোপুলশন ল্যাবরটরির বার্ষিক সম্মেলনে এসব তথ্য প্রকাশ করা হয়। নাসা এস্ট্রোফিজিক্স বিভাগের পরিচালক পল হার্টজ বলেন, টেস স্যাটেলাইটটির নকশা ও উৎক্ষেপণ করা হয়েছিলো পৃথিবী আকৃতির যেসব গ্রহ নিকটস্থ নক্ষত্রগুলোকে ঘিরে ঘুরছে সেসবের সন্ধান পাওয়ার উদ্দেশ্যে। প্রাথমিকভাবে টেসের কিছু ত্রুটি ধরা পড়েছিলো। এরফলে চিহ্নিত হওয়ার পর গ্রহগুলোকে সত্যিকারের আকারের তুলনায় বড় ও উত্তপ্ত দেখাতো। কিন্তু পরবর্তীতে মহাকাশ গবেষকরা ত্রুটিটি সনাক্তে সক্ষম হয় এবং সারিয়ে তোলে।

শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গ্রাজুয়েট ও গবেষক এমিলি গিলবার্ট বলেন, যখন আমরা ত্রুটি সারিয়ে ফেললাম গ্রহের আকৃতি ছোটো হয়ে এলো। এরপর আমরা বুঝতে পারলাম টিওআই ৭০০ডি গ্রহটি আমাদের পৃথিবীর আকৃতির এবং বাসযোগ্য জোনেই এটির অবস্থান। এই আবিষ্কার পরবর্তিতে স্পিতজার মহাকাশ টেলিস্কোপ দিয়ে পুনরায় নিশ্চিত করা হয়েছে।

বাসযোগ্য জোন
সম্প্রতি আবিষ্কার হওয়া টিওআই ৭০০ডির মতো আরো গ্রহ এর আগে অল্প কয়েকটিই আবিষ্কৃত হয়েছে। এরমধ্যে সবথেকে বেশি আবিষ্কার করেছে সাবেক কেপলার মহাকাশ টেলিস্কোপ। ২০১৮ সালে প্রথম টেস স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করা হয়। এটি সন্ধান পাওয়া প্রথম গ্রহই টিওআই ৭০০ডি। এই স্যাটেলাইট নিকটবর্তী নক্ষত্রগুলো পর্যবেক্ষণ করে থাকে। ওই নক্ষত্রগুলোর চারদিকে ঘুরতে থাকা গ্রহগুলোর কারণে যে ছায়ার সৃষ্টি হয় সেটি সনাক্ত করে ওই গ্রহের আকার, নক্ষত্র থেকে দূরত্ব ও কক্ষপথ নির্ধারণ করে স্যাটেলাইটটি।

টিওআই ৭০০ যে নক্ষত্রের চারদিকে ঘুরছে সেটি সূর্যের তুলনায় ৪০ শতাংশ ছোটো। এর তাপমাত্রাও সূর্যের অর্ধেক। ওই নক্ষত্রের চারদিকে আরো তিনটি গ্রহ আবিষ্কার করেছে টেস। গ্রহগুলির নাম, টিওআই ৭০০বি, টিওআই ৭০০সি ও টিওআই ৭০০ডি। এরমধ্যে শুধুমাত্র টিওআই ৭০০ডি বাসযোগ্য জোনের মধ্যে রয়েছে। বাসযোগ্য জোন হচ্ছে কোনো একটি নক্ষত্র থেকে তার চারদিকে ঘুরতে থাকা গ্রহগুলোর জন্য একটি নির্দিষ্ট এলাকা। সেখানে তাপমাত্রা এমন থাকে যে পানি তরল আকারে থাকতে পারে। অর্থাৎ, মানুষের জন্য সহনশীল তাপমাত্রা বিরাজ করতে পারে। যেমন সূর্যের চারদিকে ঘুরতে থাকা গ্রহগুলোর মধ্যে পৃথিবীতেই তাপমাত্রা মানুষ বসবাসের উপযোগী। সূর্যের কাছাকাছি গ্রহগুলিতে তাপমাত্রা অনেক বেশি ও পৃথিবীর পরের গ্রহগুলির তাপমাত্রা অত্যাধিক কম।

টিওআই ৭০০ডি গ্রহটি পৃথিবী থেকে ২০ শতাংশ বড়। এর নক্ষত্রের চারদিকে এটি প্রতি ৩৭ দিনে একবার ঘুরে আসে। সূর্য থেকে পৃথিবী যে পরিমান শক্তি গ্রহণ করে টিওআই ৭০০ডি তার নক্ষত্র থেকে এর ৮৬ শতাংশ গ্রহণ করে থাকে। এর ওপর ভিত্তি করে গবেষকরা গ্রহটির বায়ুমণ্ডলের গঠন ও তাপমাত্রা নির্ধারণ করতে সক্ষম হয়েছেন। নাসা ধারণা করছে এর উপরিভাগে রয়েছে সমুদ্র ও বায়ুমণ্ডলে রয়েছে কার্বন ডাই অক্সাইডের আধিক্যতা। গ্রহটির এক অংশ সবসময় তার নক্ষত্রের দিকে তাক হয়ে আছে অনেকটা পৃথিবী ও চাঁদের মতো। ধারণা করা হচ্ছে, গ্রহটির একাংশ সবসময় মেঘে ঢাকা থাকে। বর্তমানে গ্রহটি সম্পর্কে আরো বিস্তারিত তথ্য উদ্ধারে বিশ্বজুড়ে বেশ কয়েকটি সংস্থা গবেষণা করে যাচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *