ইরানের কুদস ফোর্সের কমান্ডার কাসেম সোলাইমানিকে হত্যায় যেমন যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিকরা বিভক্ত হয়ে পড়েছেন, তেমনি বিশ্বের বড় বড় শক্তিগুলোতে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। সোলাইমানিকে হত্যার নিন্দা জানিয়েছে রাশিয়া, ফ্রান্স, জার্মানি, সিরিয়া, চীন ও ইউরোপিয়ান কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট চার্লস মিশেল। তবে প্রতিক্রিয়া দেয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করেছে বৃটিশ সরকার। রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, এই হত্যাকা- মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে উত্তেজনাকে বৃদ্ধি করবে। জেনারেল কাসেম সোলাইমানি হত্যাকে একটি ‘অ্যাডভেঞ্চারিস্ট’ পদক্ষেপ হিসেবে দেখছে রাশিয়া। দেশটির রাষ্ট্র পরিচালিত বার্তা সংস্থা তাস’কে এ কথা বলেছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কূটনীতিক। রাশিয়ার পার্লামেন্টের উচ্চ কক্ষের পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটির প্রধান যুক্তরাষ্ট্রের ওই বিমান হামলাকে একটি ভুল পদক্ষেপ হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেছেন, এটা হামলাকারীদের বিরুদ্ধেই বুমেরাং হতে পারে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন ইউরোনিউজ।
এতে বলা হয়, শুক্রবার কোনস্টান্টিন কোসাচেভ তার ফেসবুকে লিখেছে, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে সমাধানের শেষ আশাটুকুও ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে।
তিনি আরো বলেছেন, এখন ইরান তার পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির পদক্ষেপ দ্রুততর করতে পারে, যদিও এর আগে তাদের এমন পরিকল্পনা ছিল না। রাশিয়া ইস্ট ওয়েস্ট সেন্টারের স্ট্রাজেটিক স্টাডিজ অ্যান্ড এনালাইসিসের পরিচালক ভøাদিমির সন্তেকোভ বলেছেন, সোলাইমানিকে হত্যা একটি বড় ভুল। হতে পারে পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টারা পুরোপুরি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে অবহিত করেন নি সংশ্লিষ্ট বিষয়ে। এ বিষয়ে মার্কিনিরা কোনো স্ট্রাটেজিক অবস্থান নেয় নি। কিন্তু কৌশলগত দিক দিয়ে এটা একটা ভুল। এর ফলে ইরানে নতুন করে মার্কিন বিরোধিতা উসকে উঠবে। নির্বাচনী প্রচারণায় ইরানের সঙ্গে সমঝোতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন ট্রাম্প। তাতে আঘাত লাগবে। এর ফলে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যে তার অংশীদারদের সম্পর্কে টান ধরতে পারে।
ওদিকে হত্যাকান্ডের পর উভয় পক্ষকে শান্ত ও বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছে ইরানের ঘনিষ্ঠ মিত্র চীন। তারা এ ঘটনায় উচ্চ মাত্রায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র জেং শুয়াং ৩রা জানুয়ারি এমন কথা বলেন। এতে তিনি আরো বলেন, আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে শক্তির ব্যবহারের সব সময় বিরোধিতা করে চীন। উত্তেজনা আরও বৃদ্ধি পাওয়ার বিরুদ্ধে তারা সতর্ক করেছে। ইরানকে একঘরে করে দেয়া এবং তার অর্থনীতিকে ধসিয়ে দিতে যুক্তরাষ্ট্রের যে প্রচেষ্টা তার বিরোধিতা করে আসছে সেব দেশ, তার মধ্যে অন্যতম চীন। গত মাসে ভারত মহাসাগরে প্রথমবারের মতো ইরান ও রাশিয়ার নৌবাহিনীর সঙ্গে মহড়ায় যোগ দিয়েছে চীন।
হত্যাকান্ডকে ঘিরে উত্তেজনা বৃদ্ধিতে উদ্বেগ জানিয়েছে ফ্রান্স। দেশটির পররাষ্ট্র বিষয়ক উপমন্ত্রী আমেলি ডি মন্টচালিন বলেছেন, আমরা ঘুম থেকে উঠলাম আরো বিপজ্জনক এক পৃথিবীতে। সামরিক উত্তেজনা সব সময়ই বিপজ্জনক। এই উত্তেজনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর পরে প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রন। তিনি নতুন বিপজ্জনক উত্তেজনা এড়ানোর পক্ষে এবং সবাইকে বিরত থাকার অনুরোধ করেন।
বৃটিশ সরকার সতর্কতার সঙ্গে বলেছেন, আরো যুদ্ধ আমাদের কারো পক্ষে যাবে না। বৃটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোমিনিক রাব বলেছেন, কাসেম সোলাইমানি নেতৃত্বাধীন ইরানের কুদস বাহিনী যে আগ্রাসী হুমকি হয়ে আছে, সে বিষয়টি সব সময়ই স্বীকার করে বৃটেন। তবে এই বিবৃতিতে ওই হত্যাকান্ডের পক্ষে বা বিপক্ষে সুনির্দিষ্ট কোনো মন্তব্য করা হয় নি।
কড়া প্রতিক্রিয়া দিয়েছে জার্মানি। বলা হয়েছে, এই হত্যাকা-ে মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি ভয়াবহ এক উত্তেজনাকর অবস্থায় উপনীত হয়েছে। এই সংঘাত শুধুমাত্র কূটনৈতিক উপায়েই সমাধান করা যেতে পারে। তবে ইরান এরই মধ্যে তেলবাহী ট্যাংকার ও সৌদি আরবের তেল স্থাপনায় যে হামলা করেছে, সেদিকে ইঙ্গিত করে জার্মান সরকারের মুখপাত্র উলরিক ডেমার মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন, ওইসব ঘটনার মধ্য দিয়ে সামরিক উস্কানি দিয়েছিল ইরান। তারই জবাবে যুক্তরাষ্ট্র এমন হামলা চালিয়েছে। ইউরোপিয়ান কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট চার্লস মিশেল যেকোনো মূল্যে সব পক্ষকে উত্তেজনা এড়িয়ে চলার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ইরাকে সহিংসতা থেকে পুরো অঞ্চলে তা ছড়িয়ে পড়তে পারে।