ভারতে নাগরিকত্ব আইন সংশোধন হওয়ার পরের দুই মাসে ৪৪৫ জন বাংলাদেশি দেশে ফিরেছেন। এরা অবৈধভাবে ভারতে অবস্থান করছিলেন। গত এক বছরে সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে প্রবেশ ও সীমান্ত পার করার চেষ্টা করায় আটক করা হয়েছে এক হাজার জনকে। ভারত থেকে বাংলাদেশে বা বাংলাদেশ থেকে ভারতে অবৈধভাবে প্রবেশের সময় তাদের আটক করা হয় বলে জানিয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এর মহাপরিচালক মেজর জেনারেল সাফিনুল ইসলাম। গতকাল পিলখানায় এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব তথ্য জানান। গত ২৫ থেকে ৩০শে ডিসেম্বর নয়াদিল্লিতে অনুষ্ঠিত দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তা পর্যায়ের বৈঠকের বিষয়ে সাংবাদিকদের অবগত করতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। বিজিবি প্রধান সাফিনুল ইসলাম বলেন, ৫ই জানুয়ারি মিয়ানমার সীমান্ত রক্ষা বাহিনীর সঙ্গে বৈঠক হবে। ভারত সীমান্তে বাংলাদেশের কাঁটা তারের কোনো বেড়া নেই।
তবে মিয়ানমার সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়া দেয়া হবে। সেই পরিকল্পনা আছে এবং তা খুব শিগগিরই করা হবে। তিনি বলেন, সীমান্তরক্ষী বাহিনী হিসেবে আমাদের দায়িত্ব, অবৈধভাবে কেউ সীমান্ত যাতে অতিক্রম করতে না পারে তা নিশ্চিত করা।
বিএসএফের সঙ্গে এনআরসি নিয়ে কোনো আলোচনা হয়েছে কি-না- জানতে চাইলে বিজিবি’র ডিজি বলেন, এনআরসি বা সিএএ ভারতের অভ্যন্তরীণ বিষয়। সেটা নিয়ে আমাদের উদ্বেগের কোনো কারণ নেই। বৈঠকে এটি নিয়ে বিএসএফের সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়নি।
বিজিবি প্রধান সাফিনুল ইসলাম বলেন, ভারত থেকে বাংলাদেশে অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে গত বছর নারী ও শিশুসহ ৯৯৮ জনকে আটক করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। তাদের বিরুদ্ধে দেশের বিভিন্ন থানায় ২৫৩টি মামলা করা হয়েছে। ভারতে নাগরিকত্ব তালিকা (এনআরসি) এবং সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) সঙ্কটের পর গত দুই মাসে (নভেম্বর-ডিসেম্বর) সীমান্ত এলাকা দিয়ে অনুপ্রবেশের দায়ে বিজিবি ৪৪৫ জনকে আটক করেছে। বিশেষ করে ঝিনাইদহ, মহেশপুর এবং সাতক্ষীরা সীমান্ত দিয়ে এসেছে তারা। তারা সবাই বাংলাদেশের নাগরিক, কাজের সন্ধানে তারা সেই দেশে পাড়ি দিয়েছিলেন। অনেকে বেঙ্গালুরুতে কাজ করতেন। আটক ৪৪৫ জন যে বাংলাদেশি তা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে ও ইউয়িন পরিষদের কাগজপত্র দেখে নিশ্চিত হওয়া গেছে। বাংলাদেশি অনেকে বিভিন্ন উৎসব পালনে যুগ যুগ ধরে ভারতে যায়। সেখানে অনুষ্ঠান শেষে আবার চলে আসে। তবে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, যারা এমন অনুষ্ঠানে যায় তাদের ৪৮/৭২ ঘন্টার জন্য পাস দেয়া যেতে পারে। বিজিবির ডিজি জানান, এক বছরে সীমান্ত হত্যা হয়েছে ৩৫টি। চার বছরের মধ্যে এটি সর্বোচ্চ। বিএসএফ মহাপরিচালক এ বিষয়ে আশ্বস্ত করেছেন জানিয়ে ডিজি বলেন, তারা (বিএসএফ) সীমান্ত হত্যার বিষয়ে আরো সতর্ক থাকবেন বলে জানিয়েছেন। যাতে করে সীমান্ত হত্যা কমিয়ে আনা যায়। অস্ত্রের দিক থেকে বিজিবিও দুর্বল অবস্থানে নেই। তবে বিজিবি নিরস্ত্র কারো উপর কখনো গুলি করে না। শুধু মাত্র আত্মরক্ষার্থ ছাড়া।
গেল বছর ঠাকুরগাঁও সীমান্তে বিজিবির গুলিতে তিন বাংলাদেশি নিহত হওয়ার প্রসঙ্গে ডিজি বলেন, এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। এটি আদালতের বিষয়। তবে আমরা ওই ঘটনায় দায়ী বিজিবি সদস্যদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় পর্যায়ে যা করণীয়, তা করেছি।
চ্যালেঞ্জ ও সীমাবদ্ধতার কথা তুলে ধরে সাফিনুল ইসলাম বলেন, সীমান্ত এলাকায় আমাদের ৬৯৩টি বিওপি রয়েছে। কিন্তু আরো বেশি বিওপি দরকার। দু’টি হেলিকপ্টার কিনেছি, এর একটি এ মাসেই আসবে। স্পিট বোট কেনা হচ্ছে। এতে করে নাফ নদীসহ সীমান্ত সংলগ্ন নদীতে টহল দিতে সহজ হবে। সীমান্ত সড়ক নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। এ সড়ক সম্পন্ন হলে সড়ক পথে টহল দিতে সহজ হবে। চোরাকারবারীরা নিত্য নতুন কৌশল নিচ্ছে। প্রযুক্তিসহ বিভিন্ন মাধ্যমে এই কৌশল মোকাবিলা করা চ্যালেঞ্জ। তবে সীমান্ত হত্যা কমিয়ে আনা সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বলে উল্লেখ করেন তিনি।
দিল্লিতে অনুষ্ঠিত ছয় দিনের বিজিবি-বিএসফ বৈঠকে সীমান্ত অতিক্রম ও মানব পাচাররোধে পদক্ষেপ এবং একযোগে সমন্বিত টহল জোরদার করতে উভয় পক্ষ সম্মত হয়েছে বলে বিজিবির পক্ষ থেকে জানানো হয়। সম্মেলনে বাংলাদেশের ১১ সদস্যের এবং ভারতের ১৯ সদস্যের প্রতিনিধিদল অংশ নেয়।