রাতুল মন্ডল শ্রীপুর: গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মাওনা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় ও মাওনা জে এম সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রায় ২৫ শত শিক্ষার্থী এবার বই উৎসবে মেতে উঠতে পারেনি।
জানাযায় হস্ত ও কুটির শিল্প ফাউন্ডেশনে আবেদনের প্রেক্ষিতে ইতিমধ্যেই মাওনা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় ও মাওনা জেএম সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠ শর্ত সাপেক্ষ ১ মাসের জন্য অনুমতি দিয়েছে জেলা প্রশাসন।
আর মেলা আয়োজক কমিটি ইতিমধ্যে দখলেও নিয়ে নিয়েছেন স্কুল দুটির খেলার মাঠ। যার কারণে জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া নির্দেশ বই উৎসবে মেতে উঠতে পারেনি ২৫ শত শিক্ষার্থী।
মাওনা জেএম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী আহমেদ জান্নাত ইকরা জানায়, খেলার মাঠ দখল হওয়ার কারণে আমরা বই উৎসবে মেতে উঠতে পারিনি শ্রেণি কক্ষে আমাদের বই দিয়েছেন।
পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী প্রিন্স জানায়, আমাদের খেলার মাঠ দখল হওয়ার কারণে আমরা নিয়মিত খেলাধুলা করতে পারছিনা।
মাওনা জে এম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আব্দুল হালিম জানান, বিদ্যালয় মাঠ দখল হয়ে যাওয়ার কারণে আমার বিদ্যালয়ের পাঠদান নিয়মিত সমস্যা হচ্ছে। আর দখল হয়ে যাওয়ার কারণে বই উৎসবও করতে পারিনি আমরা। তাই বাধ্য হয়ে শ্রেণিকক্ষে বই বিতরণ করেছি। আর মেলা আয়োজনের ব্যাপারে উপর থেকে আমাদের কোন ধরনের কোনো অনুমতি পত্র বা কোনো কাগজপত্র দেখায়নি মেলা আয়োজক কমিটি ।
অপরদিকে দিকে মাওনা বহুমুখী উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শাহ্জাহান সিরাজ জানান, উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে শর্তসাপেক্ষে মাঠ ব্যবহার করার জন্য অনুমতি দিয়েছি। তারপরও আমার দাবী আমাদের স্কুল মাঠে যাতে মেলা না। প্রশাসনের কাছে জোর দাবি যাতে মেলাটা অন্যত্র স্থানান্তর করা হয়। কারণ আগামী ২ ফেব্রুয়ারি থেকে এই বিদ্যালয়ে এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হবে।
জেলা প্রশাসন অনুমতির শুরু থেকেই স্কুল মাঠটি দখলে রেখে মেলার স্টল নির্মাণ করছে আয়োজকরা। এ নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। তাদের ধারণা ছিল স্থানীয় সাংসদের হস্তক্ষেপ হলে এই দুটি স্কুল মাঠ থেকে মেলাটি অন্যত্র স্থানান্তর হবে।
স্কুল মাঠ দখল করে এ মেলা নিয়ে ফেসবুকে ব্যাপক সমালোচনাও চলছে কয়েকদিন ধরেই।
মেলা আয়োজনের ক্ষেত্রে এবার জেলা পুলিশ যেসব শর্ত দিয়েছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে- মেলায় পুতুল নাচ, সার্কাস, যাত্রা, ভেরাইটি শো, অশ্নীল ও জনগণের বিরক্তিকর কিছু প্রদর্শন করা যাবে না। নাগরদোলা, হাউজি, লাকি কুপন, কোনো ধরনের র্যাফেল ড্র, পটকাবাজি করা যাবে না।
মেলার গুরুত্বপূর্ণ স্থানে সিসি ক্যামেরা বসাতে হবে।
শ্রীপুর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. কামরুল হাসান বলেন, সারাদেশের ন্যায় মাওনা জে এম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা বই উৎসব করতে পারেনি বিষয়টি আমার কাছে খুবই দুঃখজনক মনে হয়েছে। বিদ্যালয়ের মাঠ দখল করে মেলার অনুমতি কে বা কাহারা দিয়েছে এটা আমার জানা নেই। তবে বিষয়টি আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাবো।
অপরদিকে শ্রীপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম জানান, বিদ্যালয়ের মাঠ দখল করে মেলা চলছে কিনা বিষয়টি আমার জানা নেই। প্রধান শিক্ষকের কাছে বিস্তারিত জেনে আপনাকে জানাবো।
শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ শামসুল আরেফিন জানান, বিদ্যালয়ের মাঠ দখল করে হস্ত কুটির শিল্প মেলা হচ্ছে কিনা বিষয়টি আমার জানা নেই।
হস্ত কুটির শিল্প ফাউন্ডেশন ও মেলা আয়োজক কমিটির সভাপতি আব্দুল গনি মিয়া বলেন, জেলা প্রশাসক জেলা প্রশাসনসহ স্ব-স্ব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কাছ থেকে যথাযথ অনুমতি নিয়ে ২৫ জানুয়ারি থেকে ২৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মাসব্যাপী হস্ত ও কুটির শিল্প মেলা করার অনুমতি পেয়েছি।
গাজীপুর পুলিশ সুপার শামছুন নাহার বলেন, পুলিশের পক্ষ থেকে এবার শর্ত সাপেক্ষে ১ মাসের জন্য হস্ত ও কুটির শিল্প মেলা করার জন্য পুলিশ সুপারের কার্যালয় থেকে জেলা প্রশাসকের কাছে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। সেই আবেদনের প্রেক্ষিতে অনুমতি দেয়া হয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, এই দুটি বিদ্যালয় মাঠে এভাবে মাসব্যাপী মেলা করা হলে আশপাশের আরো বেশ কয়েকটি বিদ্যালয় ও কলেজের বহু শিক্ষার্থীসহ স্থানীয় লোকজন বেশ ভোগান্তির শিকার হতে হবে। তারা মেলাটি অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার দাবি জানান।
মাসব্যাপী এ বিদ্যালয় মাঠে মেলা চলেল মাওনা কালিয়াকৈর সড়কে প্রতিদিন যানজট লেগে থাকবে।
মেলায় মাইকের শব্দ ও লোকজনের শোরগোলে মাওনা বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়, মাওনা জেএম সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের, পিয়ার আলী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, গাজীপুর শাহীন স্কুল, টাঙ্গাইল শাহীন স্কুল, মেরিট একাডেমীসহ বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়া লেখায় ব্যাঘাত ঘটবে।
পাশাপাশি মাসব্যাপী শিক্ষার্থীদের খেলাধুলা বন্ধ রাখতে হয়।
খেলার মাঠ দখল করে মেলা বিষয়ে জানতে চাইলে গাজীপুর জেলা প্রশাসক এস এম তরিকুল ইসলাম বলেন, যেসব শর্তে সাপেক্ষে মেলার অনুমতি দেওয়া হয়েছে সেসব শর্ত ভঙ্গ করলে আয়োজকদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
খেলার মাঠ দখল করে মেলা এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে , স্থানীয় সাংসদ ইকবাল হোসেন সবুজ বলেন , কে বা কাহারা স্কুলের খেলার মাঠে মেলার অনুমতি দিয়েছে আমি জানি না । তবে প্রশাসন কে সাথে নিয়ে আমি এই মেলা ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিবো, স্কুল মাঠে কোন মেলা করতে দেওয়া হবে না।