ইরাকের জনপ্রিয় শিয়া সশস্ত্র দল হাশদ আল-শাবির ঘাটিতে মার্কিন হামলার প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে উঠেছে দেশটি। মঙ্গলবার রাস্তায় মানুষের ঢল ঘেরাও করেছে ইরাকে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাস। এসময় তারা বিভিন্ন যুক্তরাষ্ট্র বিরোধী স্লোগান দিতে থাকে। রোববার ইরাকের ইরানপন্থী সশস্ত্র দল হাশদ আল-শাবির ঘাটিতে বিমান হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। এর প্রতিবাদেই মার্কিন দূতাবাস ঘেরাও ও তার ভেতরে জোরপূর্বকভাবে প্রবেশের চেষ্টা চালায় ইরাকি আন্দোলনকারীরা। এ খবর দিয়েছে আল-জাজিরা।
ঘটনার সূত্রপাত হয় শুক্রবার। এদিন ইরাকের একটি সামরিক ঘাঁটিতে রকেট হামলা চালায় ইরানপন্থি হাশদ আল-শাবি। এতে নিহত হন একজন মার্কিন বেসামরিক কন্ট্রাক্টর।
ওই হামলার প্রতিশোধ নিতেই দুদিন পর পাল্টা হামলা চালায় যুক্তরাষ্ট্র। ইরাকের নিরাপত্তা ও মিলিশিয়া সূত্রগুলো বলেছে, ইরাকে মার্কিন ওই হামলায় কমপক্ষে ২৫ যোদ্ধা নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৫৫ জন। ইরাক এই মার্কিন হামলার তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। ইরাকের তত্ত্বাবধায়ক প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ওই হামলা ইরাকের সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন। এর ফলে ইরাক ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। এর আগে বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী আবেল আবদেল মাহদি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের ওই অভিযান ইরাকের সার্বভৌমত্বের লঙ্ঘন। ইরান হামলাটিকে সন্ত্রাসবাদ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।
মঙ্গলবার শত শত আন্দোলনকারীদের ‘যুক্তরাষ্ট্রের পতন হোক’ স্লোগান দিতে দেখা যায়। তারা এসময় দূতাবাসের মধ্যে প্রবেশের চেষ্টা চালায়। ভেতরে পানির বোতল ছুঁড়ে মারে এবং বাইরে থাকা নিরাপত্তা ক্যামেরাগুলো ভেঙ্গে দেয় তারা। আন্দোলনকারীদের হাতে এসময় ছিলো হাশদ আল-শাবির পতাকা। কাউকে কাউকে দূতাবাসের দেয়াল বেয়ে উঠে যেতে দেখা যায়। সেখান উঠে তারা ‘যুক্তরাষ্ট্র ধ্বংস হোক’ বলে স্লোগান দিতে থাকে।
এদিন রোববারের ঘটনায় নিহত ইরানপন্থি যোদ্ধাদের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া শেষে মানুষ মিছিল বের করে। সেই মিছিলই পরে সরাসরি মার্কিন দূতাবাসের দিকে যাত্রা শুরু করে। নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের দেখা যায় দূতাবাসের মধ্যে বসেই আন্দোলনকারীদের থামানোর চেষ্টা করছেন। দূতাবাসের দেয়ালে আল শাবির পতাকাও উড়িয়ে দেয় আন্দোলনকারীরা। রাজধানী বাগদাদ থেকে আল-জাজিরার সাংবাদিক সিমোনা ফলটিন জানান, আন্দোলন বড় হওয়া সত্বেও সেখানে কোনো সশস্ত্র অভিযান পরিচালিত হয়নি। মার্কিন দূতাবাস অভিমুখে আসা ওই মিছিলে কোনো বাধাই দেয়নি ইরাকের নিরাপত্তা বাহিনীগুলো। এর আগে ক’টনৈতিক এলাকায় কোনো আন্দোলনকারীকেই প্রবেশ করতে দেয়নি পুলিশ। কিন্তু এবার সেরকমটি ঘটেনি। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত এ নিয়ে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি যুক্তরাষ্ট্র।
এদিকে ইরাক থেকে মার্কিন সেনাদের উৎখাত করতে ইরানপন্থি মিলিশিয়াদের সঙ্গে কাজ করতে ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন দেশটির প্রভাবশালী শিয়া নেতা মুক্তাদা আল-সদর। সোমবার নিজের রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে রাজনৈতিক ও বৈধ উপায়ে কাজ করার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন তিনি। দেশটি থেকে মার্কিন সেনাদের উৎখাত করার কথা জানিয়েছেন। এজন্য নিজের রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বীদের সঙ্গে হাত মেলাতেও সমস্যা নেই তার। তিনি আরো জানিয়েছেন, যদি এতেও কাজ না হয়, তাহলে অন্য পন্থা অবলম্বন করবেন তিনি। প্রসঙ্গত, ২০০৩ সালে ইরাকে অনুপ্রবেশ করে যুক্তরাষ্ট্র। তৎকালীন প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসাইনের অভ্যুত্থানের পর সদর নেতৃত্বাধীন মিলিশিয়ারা মার্কিন সেনাদের বিরুদ্ধে বহু বছর লড়াই করেছে। নিজেকে জাতীয়তাবাদী হিসেবেই দাবি করেন সদর। পূর্বে ইরাক থেকে ইরানি ও মার্কিন উভয় শক্তির বিপক্ষে প্রচারণা চালিয়েছেন তিনি।