ছেলে ও ২ নাতনিকে হারিয়ে তার চোখে এখন শুধুই অশ্রু

Slider জাতীয় বিচিত্র


চট্টগ্রাম: সড়কে প্রাণ হারানো বাংলাদেশ ব্যাংকের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সাইফুজ্জামান মিন্টুর ৯৫ বছর বয়সী মা বারান্দার গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে। বাকরুদ্ধ হয়ে ছেলে মিন্টুর বড় মেয়ে তাসফিয়ার (১৪) মরদেহের দিকে তাকিয়ে আছেন। এর আগে ছেলে মিন্টু ও তার ছোট মেয়ে তাসনীনকে চিরবিদায় দিয়েছেন। শেষ বয়সে এই শূন্যতা এই মাকে পাথর করে দিয়েছে। ছোট্ট দুই নাতনি ও ছেলেকে হারিয়ে এই মায়ের চোখে এখন শুধুই অশ্রু ঝরছে।

শহর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে অজপাড়াগাঁয়ে বেড়ে ওঠা এই মায়ের সন্তানরা আজ আলোকিত। বড় ছেলে আবুল হাশেম খান অগ্রণী ব্যাংকের ম্যানেজার ছিলেন। সম্প্রতি তিনি অবসরে গেছেন। দ্বিতীয় ছেলে কর্নেল ডা. নজরুল ইসলাম, তৃতীয় ছেলে নর্থসাউথ ইউনিভার্সিটির প্রভাষক মোস্তফা কামাল খান, চতুর্থ ছেলে মিজানুর রহমান কুমিল্লা জেলা সমবায় কর্মকর্তা ও ছোট ছেলে ঝন্টু জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক।

পঞ্চম ছেলে সাইফুজ্জামান মিন্টু ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের চট্টগ্রাম কার্যালয়ের যুগ্ম পরিচালক। অনেক আগেই তারা বাবাকে হারিয়েছেন। মেধাবী এই কর্মকর্তার মৃত্যুতে তার সাজানো সংসার তছনছ হয়ে গেল।

রত্নগর্ভা এই মায়ের এখন দিন কাটে সন্তানের বাসায় এবং গ্রামের বাড়িতে। শেষ বয়সে এসে তিনি বড় মানসিক আঘাত পেলেন। এ দুর্ঘটনায় ছেলের স্ত্রী কনিকা আক্তার (৪০) ও ১০ বছর বয়সী নাতি মন্টি আশঙ্কাজনক অবস্থায় চিকিৎসাধীন।

মায়ের জ্ঞান ফিরলেও এখনও অচেতন শিশুসন্তান: সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ব্যাংক কর্মকর্তা ও তার দুই শিশুসন্তানের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। রোববার সকালে চাঁদপুরের হাজীগঞ্জের নিশ্চিন্তপুরে পারিবারিক কবরস্থানে তাদের দাফন হয়। এদিকে, ওই দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত ব্যাংক কর্মকর্তার স্ত্রী কনিকা আক্তারের জ্ঞান ফিরলেও এখনও অচেতন তার ১০ বছরের সন্তান মন্টি।

কনিকা জ্ঞান ফিরে আসার পর থেকে বারবার দুই মেয়ে আর স্বামীর কথা জানতে চাইছেন। আহত মা-ছেলে চট্টগ্রামের সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

সাইফুজ্জামানের বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের বন্ধু চট্টগ্রাম নগর পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার (উত্তর) বিজয় বসাক বলেন, ভাবির (কনিকা আক্তার) জ্ঞান ফিরলেও এখনও অনেকটা অজ্ঞান ছেলে। তবে তাদের অবস্থা অনেকটা শঙ্কামুক্ত বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। জ্ঞান ফেরার পর থেকে স্বামী আর দুই মেয়ের খোঁজ করছেন কনিকা। কীভাবে বলি এমন করুণ ঘটনা? তাদের সান্ত্বনা দেওয়ার ভাষাও হারিয়ে ফেলেছে সবাই।

এই কর্মকর্তা জানান, রোববার হাজীগঞ্জের নিশ্চিন্তপুরের পারিবারিক কবরস্থানে জানাজা শেষে সাইফুজ্জামান ও তার দুই মেয়ের দাফন হয়। একই পরিবারের তিন সদস্যের মর্মান্তিক মৃত্যুতে পুরো গ্রামে নেমে এসেছে শোকের ছায়া।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *