যে কারণে আতিক-তাপস

Slider জাতীয় বাংলার মুখোমুখি


ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র ও কাউন্সিলর পদে দলের প্রার্থী ঘোষণা করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। মেয়র পদে ঢাকা দক্ষিণের বর্তমান মেয়র সাঈদ খোকনকে সরিয়ে নতুন প্রার্থী হিসেবে ফজলে নূর তাপসের নাম ঘোষণা করেছে দলটি। এ ছাড়া উত্তরে বর্তমান মেয়র আতিকুল ইসলাম আতিককেই বহাল রাখা হয়েছে। তবে দক্ষিণে সাঈদ খোকন কেন ছিটকে পড়লেন আবার তাপসকেইবা কেন বেছে নেয়া হলো তা নিয়ে দলের ভেতরে-বাইরে আলোচনার শেষ নেই।

রাজনীতি বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, শেখ পরিবারের অন্যতম সদস্য ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসের মনোনয়ন সংগ্রহ এবং বর্তমান মেয়র সাঈদ খোকনের আবেগাপ্লুত হয়ে কেঁদে ফেলাতেই বিষয়টি অনেকটা নিশ্চিত হয়ে যায়। শুধু আনুষ্ঠানিক ঘোষণাটিই ছিল বাকি। রাজনীতিতে নিজের জন্য কঠিন সময় যাচ্ছে জানিয়ে নগরবাসীসহ পুরো দেশবাসীর কাছে দোয়াও চেয়েছিলেন সাঈদ খোকন। গতকাল রোববার দলীয় প্রার্থী হিসেবে তাপসের নাম ঘোষণায় তার সেই কঠিন সময়ের বিষয়টি আরো স্পষ্ট হলো।
বিশ্লেষকদের মতে, আগেই ধারণা করা হচ্ছিল এবার দক্ষিণ সিটিতে নতুন মুখ দেবে আওয়ামী লীগ। তার কারণ হিসেবে অনেকেই মনে করছেন, ঢাকাবাসীর আশা-আকাক্সক্ষা পূরণে ব্যর্থতা, প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করতে না পারা, নাগরিক সুযোগ-সুবিধা প্রসার ও উন্নয়ন না করা এবং বিশেষত কয়েক মাস আগে মহামারি ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে অপ্রত্যাশিত কিছু বক্তব্য তাকে মনোনয়ন বোর্ডের নজর থেকে খানিকটা দূরে ঠেলে দেয়।
সাঈদ খোকন বলেছিলেন, মশা নিয়ে রাজনীতি কাম্য নয়। সাড়ে তিন লাখ আক্রান্তের যে তথ্য এসেছে সেটিকে কাল্পনিক ও গুজব হিসেবেও উড়িয়ে দেন তিনি। ছেলেধরা আর সাড়ে তিন লাখ ডেঙ্গু আক্রান্তের তথ্য একই সূত্রে গাঁথাÑ তার এই বক্তব্যে তাৎক্ষণিকভাবে ঢাকাসহ সারা দেশে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকদের সাথে আলাপকালে জানা যায়, মেয়র পদে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে শুরু থেকেই নানা বিতর্কিত ঘটনার জন্ম দেন সাঈদ খোকন। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সদস্য সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদের সাথে তার বিরোধ ছিল প্রকাশ্যে। মেয়রের অসহযোগিতার কারণে নগর আওয়ামী লীগের কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে বলে বিভিন্ন সময় দলের নীতিনির্ধারকদের কাছে অভিযোগ করেছিলেন শাহে আলম মুরাদ। বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার দুইজনকে নিয়েই বৈঠক করেন দলের নীতিনির্ধারকেরা। ২০১৭ সালের ১৬ নভেম্বর আজিমপুরের পার্ল হারবার কমিউনিটি সেন্টার সংলগ্ন আওয়ামী লীগের কর্মী সমাবেশের পাশে পাল্টা কর্মসূচি দেন সাঈদ খোকন। এমনকি আওয়ামী লীগের ওই সমাবেশের সামনে ট্রাকে করে সিটি করপোরেশনের ময়লা ফেলার ঘটনায় তাকেই দোষারোপ করা হয়। ওই সময় মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ ও মেয়র খোকনের মধ্যে দ্বন্দ্ব ব্যাপক আলোচিত হয়।

জানা যায়, সাঈদ খোকনের সাথে দূরত্ব রয়েছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদেরও। কিছু ছাড়া দক্ষিণের বেশির ভাগ নেতাকর্মীই তার দিক থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। তার মেয়াদকালে দক্ষিণ ঢাকার উন্নয়নে নানা প্রতিশ্রুত দেয়া হলেও বাস্তবায়নের সাথে ছিল বিস্তর ফারাক। কাজের চেয়ে কথা বেশি বলে মিডিয়াতেই সরব ছিলেন তিনি। এ ছাড়া রাজধানীর বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প থেকেই তার ‘পারসেন্টেজ’ নেয়ার অভিযোগ আসে। এসব বিষয় নিয়ে দলের হাইকমান্ডও ছিল তার ওপর অসন্তুষ্ট। নীতিনির্ধারক পর্যায়ও তাই প্রার্থী পরিবর্তনের পক্ষে ছিল সরব।
সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, দলীয় মনোনয়ন না পাওয়া সাঈদ খোকনের নিজের কৃতকর্মেরই মাসুল।

দলের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক সূত্র জানায়, বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্য শেখ ফজলে নূর তাপসকে যুবলীগের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নিতে বলা হয়েছিল আওয়ামী লীগের হাই কমান্ড থেকে। কিন্তু তিনি সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে ঢাকার মেয়র পদে নিজের আগ্রহ প্রকাশ করেন। সেজন্য তাপসকে মেয়র পদে চিন্তাভাবনা করা হয়।

এ ছাড়া ঢাকা দক্ষিণ সিটিতে বিএনপি জোটের প্রার্থী হিসেবে সাবেক জনপ্রিয় মেয়র মরহুম সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইঞ্জিনিয়ার ইশরাকের নাম শোনা যায়। শেষ পর্যন্ত তাকেই চূড়ান্ত করে বিএনপি। সেজন্য তরুণ ইঞ্জিনিয়ার ইশরাকের মতো শক্ত প্রার্থীর সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য দলে অত্যন্ত ক্লিন ইমেজধারী তাপসকেই বেছে নেন নীতিনির্ধারকরা।
আর উত্তর সিটিতে অত্যন্ত কম সময়ের জন্য মেয়র হওয়া ব্যবসায়ী আতিকুল ইসলাম আতিককে আরেক ব্যবসায়ী প্রার্থী তাবিথ আউয়ালের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য চূড়ান্ত করা হয়। এ ছাড়া কাউন্সিলর প্রার্থীদের বেলায়ও সাম্প্রতিক সময়ে ওঠা ক্যাসিনো কাণ্ডে সম্পৃক্ততার বিষয়টি বিবেচনায় নেয়া হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *