কলকাতা: নতুন নাগরিকত্ব আইন (সিএএ), জাতীয় নাগরিকপঞ্জী (এনআরসি) এবং জাতীয় পপুলেশন রেজিস্টার (এনপিআর) বাতিলের দাবিতে শুক্রবার উত্তাল হয়ে উঠেছিল গোটা পশ্চিমবঙ্গ। রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে দাবি উঠে অবিলম্বে বাতিল করতে হবে এই সিএএ, এনআরসি এবং এনপিআর। এটা বাতিল না করা পর্যন্ত চলবে বিজেপি বিরোধীদের আন্দোলন। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এদিন উত্তর ২৪ পরগনার নৈহাটিতে সিএএ, এনআরসি, এনআরপি বিরোধী এক সমাবেশ থেকে ঘোষণা দিয়েছেন, বিজেপির বিভাজনের ষড়যন্ত্রের জবাব দেবে রাজ্যের মানুষ। মমতা বলেছেন, এই রাজ্যের সবাই এদেশের নাগরিক। কেন আবার তাদের নতুন করে নাগরিকত্ব নিতে হবে? আমরা সিএএ, এনআরসি এবং এনআরপি মানছি না। এই রাজ্যে তা কার্যকর করতেও দেব না। জীবন দিয়ে হলেও আমরা আমাদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করবো।
কাউকে এই বাংলা ছাড়তে হবে না। কাউকে আমরা বাংলা ছাড়তেও দেব না। সবাই আমরা ভারতের নাগরিক। নতুন করে আর নাগরিকত্বের প্রয়োজন নেই। এদিকে, এদিন দুপুরে এই প্রথম সিএএ, এনআরসি এবং এনপিআর বাতিলের দাবিতে কলকাতায় বামদল ও কংগ্রেস যৌথভাবে প্রতিবাদ মিছিল বের করেছিল। মিছিল থেকে সিএএ, এনআরসি এবং এনপিআর বাতিলের আওয়াজ উঠে। মিছিলে ছিলেন বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসু, সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র, বামপরিষদীয় দলের নেতা সুজন চক্রবর্তী, প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি সোমেন মিত্র, সাবেক সভাপতি প্রদীপ ভট্টাচার্য প্রমুখ। মিছিল থেকে বাম ও কংগ্রেস নেতারা ঘোষণা দিয়েছেন, এই রাজ্যে এই আইনগুলো কখনও কার্যকর করতে দেয়া হবে না। রাজ্যের নাগরিকদের মধ্যে যুগযুগ ধরে থাকা সাম্প্রদায়িক বন্ধনকে ভাঙতে দেয়া হবে না। ধর্মনিরপেক্ষ বাম দল এবং জাতীয় কংগ্রেস মেনে নেবে না বিজেপির ধর্মীয় বিভাজনকে। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি সোমেন মিত্র বলেছেন, বাম এবং কংগ্রেস ছাড়া এই আন্দোলন জারি রাখার আর কোনো বিকল্প নেই। এরাই সমুন্নত রাখবে এই বাংলার অসাম্প্রদায়িক চেতনাকে। এই মিছিল এবং প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে আগমী ৮ই জানুয়ারি ১৭ বামদল আহুত সাধারণ ধর্মঘট সফল করার জন্য আবেদন জানানো হয়েছে। এই ধর্মঘটকে সমর্থন দিয়েছে জাতীয় কংগ্রেসও। এ ছাড়া হুগলির সিঙ্গুরে তৃণমূলের কৃষক সংগঠনের উদ্যোগে প্রতিবাদ মিছিল হয়েছে। কলকাতার সল্টলেকে তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্যের নেতৃত্বেও প্রতিবাদ মিছিল হয়েছে। এসব মিছিল থেকে দাবি উঠেছে সিএএ, এনআরসি এবং এনপিআর বাতিলের। আর অন্যদিকে এদিন বিজেপিও পথে নেমে সিএএ, এনআরসি ও এনপিআর’-এর সমর্থনে অভিনন্দন মিছিল করেছে। পূর্বমেদিনীপুরের কাঁথিতে এই অভিনন্দন মিছিলের নেতৃত্ব দিয়েছেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তিনি বলেন, নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন পাস হয়েছে। এবার এই রাজ্যে নিগৃহীত হয়ে আসা বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আফগানিস্তানের উদ্বাস্তু ও শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দেয়া হবে। তাদের নাগরিকত্ব দেয়ার জন্য আনা হয়েছে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন।