ডেস্ক: নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে ভারতে চলমান গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে কাঠগড়ায় তুললেন দেশটির সেনাপ্রধান বিপিন রাওয়াত। বৃহস্পতিবার রাজধানী দিল্লিতে দেশজুড়ে চলা বিক্ষোভ নিয়ে দেয়া এক বক্তব্যের মধ্যে তিনি বলেন, আমরা দেখেছি যে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নেতৃত্ব দিয়ে শহরে অগ্নিসংযোগ ও সহিংসতা ছড়াচ্ছেন। এটা কখনোই নেতৃত্ব হতে পারে না। যারা মানুষকে ভুল পথে চালিত করে, তারা কখনোই নেতা নয়। এরপরই প্রকৃত নেতা কে তার ব্যাখ্যা দেন বিপিন রাওয়াত। বলেন, এক জন নেতা হলেন তিনি, যে কিনা আপনাকে ঠিক দিকে চালনা করবে, আপনাকে ঠিক পরামর্শ দেবেন এবং আপনার আশেপাশের মানুষদের খেয়াল রাখবেন। তার এই মন্তব্যকে ঘিরেই শুরু হয়েছে নতুন বিতর্ক। একজন সেনাপ্রধান হয়ে কি তিনি এমন রাজনৈতিক বক্তব্য দিতে পারেন কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন বিরোধীরা।
সেনাপ্রধান বিপিন রাওয়াতের মন্তব্যের সমালোচনা করতে গিয়ে স্বরাজ ইন্ডিয়ার প্রধান যোদেন্দ্র যাদব বলেন, আমি তার সঙ্গে একমত। হ্যা, নেতাদের উচিৎ মানুষদের ঠিক দিকে পরিচালনা করা। কিন্তু আমি পুরোপুরি নিশ্চিত যে এই কথা বলার সময় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কথাই তার মাথায় ছিলো। তিনি আরো বলেন, জেনারেল রাওয়াতের মন্তব্যের মধ্য দিয়ে ভারতীয় সেনাবাহিনী তার ৭০ বছরের নীতি ছেড়ে স্পষ্টভাবে সরে এসেছে। তার ভাষ্য, এমনটি সাধারণত ঘটে পাকিস্তান ও বাংলাদেশে।
কংগ্রেসের মুখপাত্র ব্রিজেশ কালাপ্পাও ভারতীয় সেনাপ্রধানের মন্তব্যের নিন্দা জানিয়েছেন। এক টুইট বার্তায় তিনি লিখেন, চলমান সিএএ বিরোধী আন্দোলন নিয়ে সেনাপ্রধানের এমন মন্তব্য সরাসরি দেশের সাংবিধানিক গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে। আজ যদি তাকে রাজনৈতিক ইস্যুতে কথা বলতে দেয়া হয় তাহলে কাল তাকে দেশের দখল নিতেও উতসাহ দেয়া হবে।
এদিকে, আগামী ৩১ ডিসেম্বর সেনাপ্রধানের পদ থেকে অবসর নিচ্ছেন বিপিন রাওয়াত। ভারতে নতুন করে তিন বাহিনীর প্রধান ‘চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ’ নামের যে পদ তৈরি করা হয়েছে, ধারণা করা হচ্ছে বিপিন রাওয়াতকেই বসানো হবে সে পদে। ভারতের মোদি বিরোধীদের দাবি, এমন এক সময়ে মোদি সরকারকে ইতিবাচক বার্তা দিতেই কি গণআন্দোলন নিয়ে এমন প্রশ্ন তুলেছেন তিনি। বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা করেছেন প্রাক্তন সেনা কর্মকর্তারাও। দেশটির সাবেক সেনাপ্রধান শঙ্কর রায়চৌধুরী বলেন, পুরো বিষয়টি ঠিক জানি না। এক জন নেতার সংজ্ঞা হিসেবে সেনাপ্রধান ঠিক কথাই বলেছেন। তবে সেনা আইনে কর্মরত অবস্থায় রাজনৈতিক বিষয়ে মন্তব্য করা যায় না। সাবেক আরেক নৌবাহিনী প্রধান এল রামদাস সরাসরি সমালোচনা করে বলেন, একদমই অনুচিত মন্তব্য। আইনে বলা আছে, সেনাবাহিনী কোনো রাজনৈতিক দলের নয়, দেশের সেবায় নিয়োজিত থাকবে। এখন এক জন সেনাপ্রধানের মুখ থেকে যে কথা শুনলাম, তা অন্যায়। তা তিনি সেনাপ্রধান হোক বা নিম্নপদস্থ কর্মীই হোক।
উল্লেখ্য, প্রতিবেশী পাকিস্তানের ইতিহাসের বেশিরভাগ সময় দেশটি সেনা শাসনের অধীনে ছিলো। তারপরেও সেখানে একাধিক সেনা অভ্যুত্থান হওয়া সত্যেও ভারতে তার কোনো প্রভাব পরেনি। এরমধ্যে বিপিন রাওয়াতের মন্তব্য নিয়ে ভারতের সমাজবিজ্ঞানী আশিস নন্দী বলেন, এই ধরনের প্রবণতা সম্ভবত এই দেশে প্রথম। অতীতে কোনো সেনাপ্রধানকে এ ভাবে রাজনৈতিক মন্তব্য করতে দেখা যায়নি।