বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের প্রস্তাবিত ব্রেক্সিট চুক্তি নিয়ে ভোট দেবেন পার্লামেন্ট সদস্যরা (এমপি)। জনসনের চুক্তি অনুসারে, আগামী ৩১শে জানুয়ারির মধ্যে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে বেড়িয়ে যাবে বৃটেন। স্থানীয় সময় শুক্রবার চুক্তিটি নিয়ে ভোট অনুষ্ঠিত হবে বৃটিশ পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউজ অব কমন্সে। বাংলাদেশ সময় রাত নয়টার দিকে ভোটের ফলাফল প্রকাশ পাওয়ার কথা রয়েছে। জনসনের বিলটির প্রতি এমপিরা সমর্থন দিলে, বৃটিশ সরকারের জন্য বন্ধ হয়ে যাবে ‘ট্রানজিশন পিরিয়ড’ সম্প্রসারণের সকল পথ। ৩১শে জানুয়ারির মধ্যে ইইউ থেকে বৃটেন বেরিয়ে গেলেও দুই পক্ষের মধ্যে বাণিজ্য সহ নানা ইস্যুতে চুক্তি সম্পন্ন করতে সময় লাগবে। এর আগ পর্যন্ত অমীমাংসিত বিষয়গুলোয় ইইউ’র নিয়ম মেনে চলতে হবে বৃটেনকে। জনসনের প্রস্তাবিত বিল অনুসারে, ২০২০ সালের মধ্যে এসব চুক্তি শেষ করতে হবে।
এর বেশি এ সময়সীমা বৃদ্ধি করা যাবে না। এ খবর দিয়েছে বিবিসি।
বিরোধীরা বলছেন, জনসনের বিল যুক্তরাজ্যের ভবিষ্যতকে অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দেবে। ইইউ’র সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি করতে কয়েক বছর লেগে যেতে পারে। কিন্তু সরকারের দাবি, তারা যথাসময়ের মধ্যেই চুক্তি স্থাপন করতে পারবে। জনসন বলেন, এটি বিলম্ব ও তিক্ততার অবসান ঘটাবে। দেশকে নিশ্চয়তা দেবে।
বিলটির ভোট নিয়ে জনসন বলেন, আমরা জনগণের কাছে করা প্রতিশ্রুতি পূরণ করবো ও ক্রিস্টমাসের আগেই ব্রেক্সিট নিয়ে ভোটাভুটি শেষ করবো। তিনি বলেন, কয়েক বছরব্যাপি বিলম্ব ও তিক্ততা শেষে পার্লামেন্ট নিশ্চয়তা সরবরাহ করবে। কঠোর পরিশ্রমী ব্যবসায়ী ও জনগণকে ভবিষ্যতের পরিকল্পনা ঠিক করার ভিত্তি গড়ে দেবে।
গত অক্টোবরেই ইইউ’র সঙ্গে চুক্তির খসড়ায় সম্মত হন জনসন। কিন্তু তৎকালীন পার্লামেন্ট তার চুক্তির প্রতি সমর্থন না জানানোয় তখন এ নিয়ে কোনো অগ্রগতি হয়নি। পরে চলতি মাসে নির্বাচনে ফের সংখ্যাগরিষ্ঠ আসনে নির্বাচিত হয় জনসন নেতৃত্বাধীন কনজারভেটিভ পার্টি। পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন এখন তাদের দখলে। ধারণা করা হচ্ছে, চুক্তিটি সহজেই পাস হয়ে যাবে। বৃহ¯পতিবার রাণীর ভাষণের (কুইন’স স্পিচ) মধ্য দিয়ে জনসন সরকার আগামী বছরের জন্য তাদের অগ্রাধিকারগুলো উপস্থাপন করেছে। এদিন, বিলটি ফের উপস্থাপিত হয়। প্রসঙ্গত, পার্লামেন্ট বিল পাস করাতে ব্যর্থ হয়ে আগাম নির্বাচনের ডাক দিয়েছিলেন জনসন। ব্রেক্সিট সম্পন্ন করার প্রতিশ্রুতিই ছিল তার দলের ইশতেহারের কেন্দ্রবিন্দু।
বিবিসি জানায়, শুক্রবার পার্লামেন্টে প্রথমে বিলটি নিয়ে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করবেন সরকার ও বিরোধীদলীয় এমপিরা। এরপর এর শর্তগুলো নিয়ে ভোট হবে। নিম্নকক্ষ থেকে পাস হলে তা যাবে উচ্চকক্ষ হাউজ অব লর্ডসে। কমন্সে বিলটি নিয়ে বিতর্ক করতে এমপিদের আরো অতিরিক্ত তিন দিন সময় দেয়া হবে- ৭, ৮ ও ৯ই জানুয়ারি। সরকারের দাবি, জানুয়ারি শেষ হওয়ার আগেই বিলটি আইনে পরিণত হবে।
অক্টোবরের বিলটি থেকে এবারের বিলটিতে কিছু সূক্ষ্ম পরিবর্তন আনা হয়েছে। পরিবর্তনগুলোর মধ্যে রয়েছে, ট্রানজিশন পিরিয়ড সম্প্রসারণ নিষিদ্ধ করা, ব্রেক্সিটের পর ইউরোপিয়ান কোর্ট অব জাস্টিসের যেসব নিয়মাবলী বৃটেনে আইন হিসেবে নথিবদ্ধ হয়েছে সেগুলো পুনর্বিবেচনা করতে দেশের আদালতগুলোকে সুযোগ দেয়া, ইইউ’র সঙ্গে বিলটি নিয়ে সরকারের নানা বিবাদ বিষয়ে পার্লামেন্টে প্রতিবেদন জমা দিতে মন্ত্রী নিয়োগ দেয়া, যেসব আইনের কোনো প্রয়োজন নেই সেগুলো বাতিল করে দেয়া ও শ্রমিক অধিকার জোরদার করা বিষয়ক একটি নিয়ম বাতিল করে দেয়া।