সরকারের পাওনার বিষয়ে সালিশে (আর্বিট্রেশন) যেতে প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদকে উকিল নোটিশ পাঠিয়েছে গ্রামীণফোন কর্তৃপক্ষ। আজ সচিবালয়ে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার টেলিকম খাতে কর্মরত সাংবাদিকদের সংগঠন টেলিকম রিপোর্টার্স নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ (টিআরএনবির) সদস্যদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এ তথ্য জানান। মন্ত্রী বলেন, গ্রামীণফোন সিঙ্গাপুরের একটি ল’ ফার্মের মাধ্যমে আমাদের প্রেসিডেন্টকে উকিল নোটিশ দিয়েছে। এটি খুব দুঃখজনক। বাংলাদেশে ব্যবসা করবে একটি প্রতিষ্ঠান, সেই প্রতিষ্ঠানটি আমাদের প্রসিডেন্টকে উকিল নোটিশ দিয়ে আর্বিট্রেশনের জন্য চাপ দেবে, এটা বোধহয় খুব সহজে গ্রহণ করার মতো অবস্থা না। অডিট রিপোর্টের ভিত্তিতে গ্রামীণফোনের কাছে বকেয়া ১২ হাজার ৫৭৯ কোটি ৯৫ লাখ টাকা চেয়ে গত এপ্রিলে চিঠি দিয়েছিল টেলিযোগাযাগ নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি। এতে কাজ না হওয়ায় কড়াকড়ি আরোপ করা হয়। আরেক অপারেটর রবির কাছে বকেয়া ৮৬৭ কোটি ২৩ লাখ টাকার দাবিতে একই পদক্ষেপ নেয় বিটিআরসি।
ফলে দুই অপারেটরই উচ্চ আদালতে যায়।
মন্ত্রী জানান, রবি মামলা প্রত্যাহার করবে বলে জানিয়েছে। সরকারের কড়াকড়ি অবস্থানের কারণে দেশে বিদেশি বিনিয়োগ কমে যাবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে মোস্তাফা জব্বার বলেন, বরং এখন চিত্র বিপরীত। দেশে ফাইভ-জি সেবা দিতে নতুন অপারেটর আসতে চায়। টেলিটকে বিনিয়োগ করতে চায় বিদেশি প্রতিষ্ঠান। বরং পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে। আগের মতোই আছে। মন্ত্রী আরও জানান, যে নোটিশ দেয়া হয়েছে তা সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত জানানো হয়েছে। সবাই বিষয়টা জানেন। এটা নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। তারা (গ্রামীণফোন) বোঝাতে চেয়েছে আর্বিট্রেশন চায়। কিন্তু বিষয়টা তো আদালতে। আদালতের বাইরে আর্বিট্রেশনের কোনও সুযোগ নেই বলে মন্তব্য করেন তিনি। ডিজিটাল বাংলাদেশ পৃথিবীতে নেতৃত্বের জায়গায় পৌঁছেছে দাবি করে মন্ত্রী বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশের লক্ষ্য হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠা। ২০২১ সালের মধ্যে প্রথম ধাপটি বাস্তবায়িত হবে। এরপর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ, ২০৭১ সালে স্বাধীনতার শতবর্ষ উপলক্ষে পরিকল্পনা এবং ২১০০ সালে ব-দ্বীপ পরিকল্পনা করে রেখেছেন।
তিনি জানান,২০০৮ সালে ডিজিটাল বাংলাদেশ ঘোষণা করার পরে ভারত, যুক্তরাজ্য নিজেদের ডিজিটাল হিসেবে ঘোষণা করে। ২০১৫ সালে মালদ্বীপ ডিজিটাল হওয়ার জন্য বাংলাদেশের সঙ্গে চুক্তি করে। তারা বাংলাদেশের সহযোগিতা নিয়েছে। সর্বশেষ গত ৫ ডিসেম্বর পাকিস্তান নিজেদের ‘ডিজিটাল পাকিস্তান’ হিসেবে ঘোষণা দেয়। ইন্টারনেটের দাম কমানোর বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, প্রথমবার মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর আমি এই কথা বলেছিলাম। দাম কমানোর বিষয়ে উদ্যোগ থেমে নেই। তবে প্রক্রিয়াটা দীর্ঘ। কাজ শুরু হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে তিনি আরেকটা এনএনটিটিএন (ভূগর্ভস্থ ক্যাবল সেবা) লাইসেন্স দেয়া হয়েছে বলে জানান।
তিনি বলেন, ইন্টারনেট মানুষের মৌলিক অধিকারের পর্যায়ে পড়ে। আমাদের দেশে ইন্টারনেটের দাম যে তুলনামূলকভাবে উচ্চ তা বলবো না। তবে ইন্টারনেটের দাম বেঁধে দেয়া নেই। এটাও সমস্যার কারণ। মোবাইল অপারেটররা ইচ্ছেমতো ইন্টারনেটের দাম নিচ্ছে। আমরা এসব সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছি। ঢাকা শহরসহ দেশের অনেক জায়গায় পেশিশক্তি দিয়ে, রাজনৈতিক পরিচয়ে নিম্নমানের ইন্টারনেট সেবা দেয়া হচ্ছে। ভালো কোনও প্রতিষ্ঠানকে সেসব জায়গায় সেবা দিতে বাধা দেয়া হচ্ছে। সাংবাদিকরা এসব বিষয়ে তিনি বলেন,আমরা যত লাইসেন্স দিয়েছি তার দ্বিগুণ হলো অবৈধ লাইসেন্স। তারা সেবা দিচ্ছে। বিষয়টি আমাদের নজরে আছে। এজন্য আমরা কাজ করছি। এর সমাধান হয়ে যাবে বলে তিনি জানান। মতবিনিময় অনুষ্ঠানে টিআরএনবির সভাপতি মুজিব মাসুদ ও সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল আনোয়ার খান শিপুসহ সাধারণ সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।