নেতৃত্ব নিয়ে শেষ মুহূর্তে কৌতূহল বাড়ছে আওয়ামী লীগে। চলছে নানা আলোচনা। হিসাব-নিকাশ। পদ প্রত্যাশীরা আছেন উৎকন্ঠায়। বিশেষ করে যারা মন্ত্রিসভায় রয়েছেন তাদের নিয়ে আলোচনা সবচেয়ে বেশি। দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা এরইমধ্যে বিষয়টি নিয়ে বার্তা দিয়েছেন। মন্ত্রিত্ব থাকলে বাদ দেয়া হবে দলীয় পদ থেকে। আবার যারা দলীয় পদে নেই তাদের দেয়া হতে পারে মন্ত্রিত্ব।
কাউন্সিলের পর পরই মন্ত্রিসভার পুনর্বিন্যাস করা হবে। দলীয় সভাপতির ঘনিষ্ঠজনদের কাছ থেকে এমন বার্তা পেয়েছেন বলে দাবি আওয়ামী লীগ নেতাদের। কাউন্সিল ইস্যুতে বেশ কয়েক শীর্ষ নেতার সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা যায়। আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান মানবজমিনকে বলেন, দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের একাধিক দায়িত্ব না দেয়াই ভালো বলে মনে করি। যেসব নেতা সরকারে দায়িত্ব পালনে পারদর্শী তাদেরকে সেখানেই রাখা উচিত। এতে সরকারের বিশাল কাজকে তারা ত্বরান্বিত করতে পারবেন দক্ষতার সঙ্গে। আবার যারা দল পরিচালনায় পারদর্শী তাদেরকে সেখানে দায়িত্ব দেয়াই ভালো। এতে দল ও সরকারের মধ্যে সমন্বয়ের পাশাপাশি দারুন ভারসাম্য থাকবে। তবে সবকিছু নির্ভর করছে দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার উপর। নেতৃত্ব পরিবর্তন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কাউন্সিল ঘিরে এসব কৌতুহল রাজনীতির সবচেয়ে বড় সৌন্দর্য বলে মনে করি। দেশের রাজনীতি নিয়ে যারা সচেতন তারা এসব বিষয় নিয়ে নানা আলোচনা করতেই পারেন।
আমাদের দলের মধ্যেও এ নিয়ে নানা আলোচনা রয়েছে। সব আলোচনার ফলাফল জানা যাবে কাউন্সিলেই। আগামীকাল ও শনিবার আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন অনুষ্ঠিত হবে কাউন্সিল অধিবেশন। এই কাউন্সিল অধিবেশনেই পরবর্তী নেতৃত্ব নির্বাচিত হবেন। তবে সাধারণত দেখা যায়, আওয়ামী লীগের কাউন্সিলে দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নির্বাচনের পর কাউন্সিলররা পুরো নির্বাচনের দায়িত্ব দেন দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ওপর। এবারও এর ব্যতিক্রম হবে না বলেই মনে করা হচ্ছে। এরকম পরিস্থিতিতে কাউন্সিলের শেষ মুহুর্তে এসে নতুন করে আলোচনা হচ্ছে আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক পদ নিয়ে। দলের নেতা-কর্মীরা এ নিয়ে মিশ্র ধারনার কথা বলেছেন। কেউ বলছেন, সাধারণ সম্পাদক পদে পরিবর্তনের কোন ইঙ্গিত দেননি দলীয় সভাপতি। পদ্মা সেতুর দায়িত্ব থাকায় হয়তো মন্ত্রীত্ব তার হাতে থাকবে। তবে একই সঙ্গে দলীয় পদ ও মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব থাকবে কিনা এটি স্পষ্ট হয়নি এখনও। বিষয়টি দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনার ওপর নির্ভর করছে। তাই অনেকেই অনেকভাবে তার কাছে আগ্রহের কথা ব্যক্ত করছেন। কেউ কেউ আবার সামাজিক যোগযোগ মাধ্যমেও নানা ধরনের তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। এসব প্রসঙ্গে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, দলের আসন্ন সম্মেলন ঘিরে কোনও অনিয়ম সহ্য করা হবে না।
এ সম্মেলন হবে স্মরণকালের সবচেয়ে বড় সম্মেলন। এটা রাষ্ট্রের শেকড়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত। সেজন্য এই সম্মেলনে সামান্যতম অনিয়ম সহ্য করা হবে না। যে কেউ যে কোনও পদে প্রার্থী হওয়াটা দলের অভ্যন্তরীণ গণতন্ত্রের অংশ বলে উল্লেখ করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তবে এ প্রতিযোগিতায় অপপ্রচার এবং নেতিবাচক প্রচারণা নিরুৎসাহিত করেন তিনি। ওবায়দুল কাদের বলেন, পদ পদবীর ইচ্ছা সবার থাকতে পারে, তবে সেটি যেনো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চরিত্র হনন না হয়। সাধারণ সম্পাদকসহ যে কোনও পদে যাবার ইচ্ছা সবারই থাকতে পারে। তবে নেত্রীর সিদ্ধান্তই শেষ কথা। দলটির কেন্দ্রীয় কয়েক নেতা জানান, শনিবার কাউন্সিল শেষ হওয়ার পর ২৫শে ডিসেম্বরের মধ্যেই পুর্ণাঙ্গ কেন্দ্রীয় কমিটির তালিকা প্রকাশ করা হতে পারে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দলের অপর একজন যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মানবজমিনকে বলেন, দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা এরইমধ্যে কয়েক মন্ত্রীর কাছে তাদের আগ্রহের কথা জানতে চেয়েছেন। আবার কয়েকজনকে দলকে সামনের দিকে এগিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা করতে বলেছেন। এর মাধ্যমেই মূলত তার বার্তা স্পষ্ট।
এছাড়া কয়েকজন তরুন নেতাকে বড় দায়িত্ব পালনে প্রস্তুত হতে বলেছেন। তারা জানান, মন্ত্রিসভায় থাকা নেতাদের দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে রাখতে চান না আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এতে দলের সাংগঠনিক কার্যক্রম ব্যাহত হয়। আগের সম্মেলনগুলোতেও এটা হয়েছে। ধারাবাহিকতা অনুসরণ করা হলে বর্তমানে মন্ত্রিসভায় আছেন এমন অনেকেই দলের নতুন কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে বাদ পড়বেন। বর্তমানে আওয়ামী লীগের ৮৩ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটিতে থাকা ১২ জন মন্ত্রিসভায় আছেন। দলের সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ছাড়া আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সভাপতিমন্ডলী থেকে বর্তমান ৪৮ সদস্যের মন্ত্রিসভায় আছেন মাত্র দুই জন। তারা হলেন- কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের (সাধারণ সম্পাদক-পদাধিকার বলে সভাপতিমন্ডলীর সদস্য)। সম্পাদকমন্ডলী থেকে মন্ত্রিসভায় আছেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. দীপু মনি, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, একেএম এনামুল হক শামীম, ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, অর্থ সম্পাদক টিপু মুনশি, আইন বিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট শ ম রেজাউল করিম, ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক শেখ মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ, মহিলা বিষয়ক সম্পাদক ফজিলাতুন্নেছা ইন্দ্রিরা, কাযনির্বাহী সদস্য নুরুল মজিদ হুমায়ুন ও মুন্নুজান সুফিয়ান। এর আগের মেয়াদে দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে থাকা মন্ত্রীর সংখ্যা ছিলো ১৯ জন। দলীয় পদে থেকে ২০১৪ থেকে ২০১৮ মেয়াদের মন্ত্রিসভায় ছিলেন কিন্তু বর্তমান মন্ত্রিসভায় অনেকেই আসতে পারেননি।
এদিকে কাউন্সিলের পরই সম্প্রতি শেষ হওয়া সহযোগী সংগঠনগুলোর পুর্নাঙ্গ কমিটির ঘোষণা দেয়া হবে। এ প্রসঙ্গে স্বেচ্ছাসেবক লীগ ঢাকা উত্তরের সভাপতি দেওয়ান মো. ইমতিয়াজ মানবজমিনকে বলেন, কাউন্সিলের পরই তিন দফায় আমাদের ১৫১ সদস্য বিশিষ্ট কমিটির ঘোষণা দেয়া হবে। কমিটি গঠনে নেতাদের যাচাই-বাচাই চলছে। এদিকে উপদেষ্টা পরিষদ, কেন্দ্রিয় কার্যনির্বাহী সংসদ, যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক, বিষয়ভিত্তিক সম্পাদকমন্ডলী, সাংগঠনিক সম্পাদক ও উপ-সম্পাদকে ব্যাপক পরিবর্তন করা হবে। দুটি কারণে বড় ধরনের পরিবর্তন হতে পারে বলে জানিয়েছেন দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা। প্রথমত ক্ষমতায় থাকতে থাকতে সাংগঠনিক কাঠামো আরও মজবুত করা। দ্বিতীয়ত আগামী বছর জুড়ে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী পালন করা হবে। এজন্য ব্যাপক পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। দল সাংগঠনিকভাবে চাঙ্গা না থাকলে বছরব্যপী আয়োজন সফল করা সম্ভব নয়। এজন্য নতুন ও তরুনদের সম্পৃক্ততা বাড়ানো হবে। তিন বছর পর পর আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলন হয়। আওয়ামী লীগের সর্বশেষ জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় ২০১৬ সালের ২২ ও ২৩ অক্টোবর।