মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে সদ্য প্রকাশিত রাজাকারের তালিকা নিয়ে বিতর্ক যেন পিছু ছাড়ছেই না। ভাতাপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের নাম ওই তালিকায় থাকায় সারা দেশে চলছে তীব্র ক্ষোভ, নানা সমালোচনা। এবার সেই বিতর্কে নতুন মাত্রা যোগ করেছে একটি ‘পেনড্রাইভ’।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় দাবি করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া তালিকাটি তারা প্রকাশ করেছে। অন্যদিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়কে তারা কোনো তালিকা দেয়নি। অবশ্য মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় আরেকটি দাবি করছে। তাহলো- যে তালিকা তারা পেয়েছে তা পেনড্রাইভে করেই পাঠানো হয়। ১৯৭২ সালের দালাল আইনে যাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছিল সেই তালিকাই ওই পেনড্রাইভে পাঠানো হয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে।
জানা যায়, চলতি বছরেই মুক্তিযুদ্ধের সময় বেতন ভাতা নেয়া রাজাকারদের তালিকা জেলা-প্রশাসন ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সংগ্রহের জন্য মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়-সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি সুপারিশ করে। এর মধ্যে ডিসেম্বর পর্যন্ত মাত্র ১১টি জেলা থেকে প্রতিবেদন আসে। বাকি জেলার রেকর্ডরুম থেকে রাজাকারের তালিকা পাওয়া যায়নি বলে জানা যায়।
এরই মধ্যেই মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় হুট করে ১০ হাজার ৭৮৫ জন রাজাকারের একটি তালিকা প্রকাশ করে দেয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দাবি, ‘মন্ত্রীর’ টেলিফোনে দেয়া নির্দেশেই সেই তালিকা পাঠিয়ে দেয়া হয়।
মন্ত্রণালয় জননিরাপত্তা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব আবু বকর ছিদ্দীক একটি জাতীয় দৈনিককে বলেন, আমরা খোঁজ করে দালাল আইনের ৯০২টি নথির খোঁজ পাই, যেখানে ১০ হাজার ৭৮৫ জনের নাম উল্লেখ ছিল। সেখানে রয়েছে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারের নামও। কোনো কোনো মামলায় ৪২১ জনের নামও রয়েছে। আমরা বিভাগ অনুযায়ী ভাগ করে পুরো তালিকাটি যোগ করে দিয়েছি নিজেদের সংগ্রহে রাখার জন্য। এরই মধ্যে মন্ত্রী মৌখিকভাবে টেলিফোনে তালিকাটি পাঠানোর নির্দেশ দেন। আমরা বলেছি আমাদের কাছে রাজাকারের তালিকা নেই। আছে দালাল আইনে যাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, সেই তালিকা। তালিকায় যাদের নাম রয়েছে তাদের মধ্যে ৯৯৬ জন সাধারণ ক্ষমাও পেয়েছিলেন।
এদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, যে তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে তা প্রকাশ করা হবে এমনটা মন্ত্রণালয়ের জানা ছিল না। এমনকি এটা রাজাকারের তালিকা বলতেও নারাজ মন্ত্রী। তিনি জানিয়েছেন, যে তালিকা প্রকাশ হয়েছে সেটি শুধুমাত্র দালাল আইনের মামলার তালিকা। এ ধরণের তালিকা প্রকাশের আগে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যাচাই বাছাই করা উচিৎ ছিল বলেও মনে করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।