নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন ঘিরে উত্তপ্ত ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বিভিন্ন জেলা। মুর্শিদাবাদ থেকে বীরভূম, উত্তর ২৪ পরগনা, হাওড়াতে বিক্ষোভের আঁচ সবচেয়ে বেশি। বৃহস্পতিবার থেকেই বিভিন্ন ট্রেনকে আক্রমণ করছে নয়া নাগরিকত্ব আইনের বিরোধী মানুষেরা। আগুন জ্বালিয়ে চলছে পথ অবরোধ। চরম দুর্ভোগে সাধারণ মানুষ। এই অবস্থায় শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের আর্জি জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তবে, তাতে বিশেষ কাজ হয়নি। এই পরিস্থিতির জন্য রাজ্য প্রশাসনকেই দায়ী করেছেন বিজেপির কেন্দ্রীয় সম্পাদক রাহুল সিনহা।
পশ্চিমবঙ্গে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে রাহুল সিনহা বলেন, ‘এইভাবে চলতে থাকলে পশ্চিমবঙ্গে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করা ছাড়া কেন্দ্রের অন্য কোনো উপায় থাকবে না। রাজ্য বিজেপির তরফেও আমরা এখানে রাষ্ট্রপতি শাসন জারির পক্ষে।’
রাজ্য বিজেপি সভাপতি তথা এমপি দিলীপ ঘোষের অভিযোগ, নাগরিকত্ব আইন ঘিরে যে প্রতিবাদ চলছে তা আসলে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন। মমতা ব্যানার্জির প্রশয়েই এই হিংসাশ্রয়ী আন্দোলন চলছে বলে দাবি তার। দিলীপ ঘোষের কথায়, ‘পুলিশ প্রশাসন নীরব দর্শকের মতো সব দেখছেন, কিন্তু কোনো পদক্ষেপ করতে ভয় পাচ্ছেন।’ এর আগেও বেশ কয়েকবার নাগরিকত্ব আইন হলেও তা ঘিরে এই ধরণের প্রতিবাদ হয়নি বলে জানান রাজ্য বিজেপি সভাপতি।
নাগরিকত্ব সংশোধী আইন ২০১৯ অনুশারে ২০১৪ সালে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত যেসব হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, খ্রিষ্টান ও পারসি সম্প্রদায়ের মানুষ পাকিস্তান, বাংলাদেশ, আফগানিস্তান থেকে ভারতে এসেছেন তাদের নাগরিকত্ব দেয়া হবে। এই তিন দেশই মুসলিম প্রধান দেশ। তাই সে দেশে বিভিন্ন কারণে অত্যাচারিত এই ছয় সম্প্রদায়ের সংখ্যালঘুরাই এই সুবিধা পাবেন। নয়া আইনে মুসলমানদের বাদ রাখা হয়েছে, এমনটাই জানিয়েছে কেন্দ্র। তবে, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আশ্বাস, এর ফলে ভারতীয় মুসলমানদের কোনো ভয়ের কারণ নেই। তাদের অস্তিত্ব ঘিরে কোনো প্রশ্ন নেই।
দিলীপ ঘোষের প্রশ্ন, ‘বহু উদ্বাস্তু, শরনার্থীর ভোট দেয়া অধিকার থাকলেও উপযুক্ত নাগরিকত্ব ছিল না। বিজেপি তাদের বহু দিনের দাবি পূরণের চেষ্টা করেছে। এতে ভুলের কী আছে?’ তার ব্যাখ্যা, ‘ওই তিন রাষ্ট্রই মুসলিম প্রধান হওয়ায় সেখানে তাদের নিরাপত্তাহানীর কোনো বিষয় নেই। ফলে সেদেশের মুসলমানদেরও ভারতে প্রবেশের প্রয়োজন হয়নি। তাই আইনে মুসলমানদের কথা বলা হয়নি।’
নতুন আইনের অপব্যাখ্যা করে তৃণমূল সংখ্যালঘু মুসলমানদের প্ররোচিত করছে বলে অভিযোগ করেন গেরুয়া দলের রাজ্য সভাপতি। জানা গেছে, রোববার অন্ডালে রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে রিপোর্ট দিয়েছেন বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব।
সূত্র : ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস