আওয়ামী লীগের কারা কারা মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন তাদের তালিকা প্রকাশ করার আহবান জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। রোববার সুপ্রীম কোর্ট বার মিলনায়তনে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে বিএনপি আয়োজিত আলোচনা সভায় এ আহ্বান জানান তিনি। ফখরুল বলেন, আমি স্মরণ করে দিতে চাই, আজকে তাদের হাতেই গণতন্ত্র নিহত হয়েছে, যারা দাবি করে তারাই স্বাধীনতা যুদ্ধের একমাত্র ধারক বাহক। তারাই ১৯৭২ সাল থেকে ৭৫ সাল পর্যন্ত এই দেশ শাসন করেছে। তারা একে একে গণতন্ত্রের সকল প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস করেছে। সর্বশেষ একদলীয় শাসনব্যবস্থা বাকশাল প্রতিষ্ঠা করেছে। এ দেশের মানুষ সেটা অতো সহজে ভুলে যায়নি। আজকে আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ, এই সরকারের মন্ত্রীরা অনেক বড় বড় কথা বলেন, আমাদেরকে বাণী দেন, উপদেশ দেন।
আমি তাদের জিজ্ঞাসা করতে চাই, আপনার ১৯৭১ সালে কতজন বংলাদেশের রণাঙ্গনে থেকে যুদ্ধ করেছেন। হিসাব চাই আমি।
তিনি বলেন, আজকে আপনাদের নেতা এই সরকারের প্রধানমন্ত্রী যখন বলেন, জিয়াউর রহমান ৭৫’র হত্যাকাণ্ডে সঙ্গে জড়িত ছিলেন। জিয়াউর রহমান কোন মুক্তিযোদ্ধাই ছিলেন না। তাদের একবার চিন্তা করা উচতি। তাদের অতীতটা কি ছিল, আর জিয়াউর রহমানের ভূমিকা কি ছিল। সেদিন আপনারা পালিয়েছিলেন। কিন্তু জিয়াউর রহমান পুরো জাতিকে মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ার জন্য অনুপ্রেরণা জানিয়েছেন। শেখ হাসিনা বলেছেন, খন্দকার মোশতাক জিয়াউর রহমানকে আর্মির চীফ বানিয়ে সুবিধা দিয়েছিলেন। আপনি কোথায় ছিলেন তখন? আপনি কি জানেন সেই সময় দেশ কি অবস্থায় ছিল? আপনি কি জানেন সেই সময় মানুষ কি পরিস্থিতির মধ্যে পরেছিল। খন্দকার মোশতাক শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ ছিলেন। মোশতাক এবং ওই সময়ের আওয়ামী লীগের নেতারা মিলেই শেখ মুজিবকে হত্যা করেছিলেন। আপনারা মামলা করে নির্যাতন করে আমাদের মুখ বন্ধ করে দিতে চান। কিন্তু এই মুখতো বন্ধ হবার নয়। সত্য কথা সব সময় উচ্ছারিত হবে।
ভবিষ্যতে দেশে কোন সুষ্ঠু নির্বাচন হবে কি-না সংশয় জানিয়ে ফখরুল বলেন, এই সরকার আজ ভোট চুরি করে ক্ষমতা দখল করেছে। দেশের সব ধরণের নির্বাচন ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে ফেলেছে। এই দেশে কখনো আর সুষ্ঠু নির্বাচন হবে কি-না আমি জানি না। আমরা জানি দেশে এখন দশ ভাগ মানুষও ভোট কেন্দ্রে যায় না। কারণ ভোট দেয়ার উপর থেকে মানুষের আস্থা চলে গেছে। সব জায়গায় আগের রাতেই এখন ভোট হয়ে যায়। এটা এখন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে শুরু করে দিয়েছে তারা। মানুষের আস্থা এই বিচার বিভাগের প্রতি। যেখানে গেলে মানুষ মনে করে যে, একটু আশ্রয় পাবে। কিন্তু সেই আশাও শেষ হয়ে যাচ্ছে। আজ বেগম খালেদা জিয়াকে একটি মিথ্যা মামলায় আটক করে রাখা হয়েছে। তাকে তার প্রাপ্য জামিন দেয়া হচ্ছে না। কারণ আজতো বিচারবিভাগ স্বাধীন নেই। যদি এটা স্বাধীন থাকতো তাহলে আমাদের নেত্রী অনেক আগেই জামিন পেতেন।
তিনি বলেন, আমি আজকে দেশের প্রতিটি বুদ্ধিজীবীদের আহবান জানাতে চাই, যারা এখন আছেন উঠে দাঁড়ান আপনাদের পূর্বসূরীদের মত। জেগে উঠুন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা, মুক্তিযুদ্ধ, সর্বভৌমত্ব এবং গণতন্ত্র রক্ষার জন্য সবাই এগিয়ে আসুন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আজকের এই দেশে গুম, খুন, অন্যায়, অনাচার এবং দেশনেত্রীকে কারাগারে রাখা এই সবকিছুর জন্যই দায়ী এই অবৈধ সরকার। তাই এই ফ্যাসিবাদের হাত থেকে জনগণকে রক্ষা করতে হবে। গণতন্ত্রকে মুক্ত করতে হবে। আর এর জন্য বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ছাড়া বা তার নেতৃত্ব ছাড়া এই দেশে গণতন্ত্রের অধিকার, জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হবে না। তাই আমরা এখন আর আশা করি না যে, আইনের মাধ্যমে দেশনেত্রী মুক্তি পাবে। এর জন্য এই স্বৈরাচার সরকারকে পতন করতে হবে।
আন্দোলনের বিষয়ে মোশাররফ বলেন, আমরা কৌশলে অগ্রসর হচ্ছি। আমরা মনে করি এই সরকারের পতন ছাড়া দেশের কোন কিছু্ সম্ভব হবে না। তাই আজ হোক আর কাল হোক এই বাংলাদেশে আন্দোলন হবে। আর এই আন্দোলনে জাতীয়তাবাদী শক্তিকেই নেতৃত্ব দিতে হবে। এর জন্য আপনারা সবাই প্রস্তুত হোন।
আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, সেলিমা রহমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক এ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ, সহ জলবায়ু বিষয়ক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক শিরিন সুলতানা, যুবদল সাধারন সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাধারণ সম্পাদক সাদেক খান প্রমূখ।