১২ই ডিসেম্বর গোলাপগঞ্জ পাক হানাদার মুক্ত দিবস

Slider গ্রাম বাংলা বাংলার মুখোমুখি


হাফিজুল ইসলাম লস্কর, সিলেট :: ১৯৭১ সালের ১২’ই ডিসেম্বর সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলা পাক হানাদার তথা শত্রু মুক্ত হয়। দীর্ঘ ৯ মাস বাঙালি জাতি পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর সাথে লড়াই করে দেশ স্বাধীনের প্রায় ৪দিন আগে গোলাপগঞ্জ উপজেলা থেকে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীকে বিতাড়িত করে স্বাধীন বাংলাদেশের লাল সবুজের পতাকা গোলাপঞ্জ চৌমুহনীতে উড্ডয়ন করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা জিএন চৌধুরী হুমায়ূন।

ওইদিন মুক্তিযোদ্ধারা সুতারকান্দি-বিয়ানীবাজার হয়ে ভোর হওয়ার কিছুক্ষণ আগে উপজেলার নালিউরী গ্রামে এসে অবস্থান নেয়। নালিউরি গ্রাম থেকে মাত্র দেড় মাইল উত্তরে ঢাকাদক্ষিণ বাজারে পাকিস্থানি বাহিনী ও রাজাকারদের ঘাঁটি ছিল। বিকেলে মুক্তিবাহিনীর সদস্যরা রেকি করতে পরিকল্পনা মতো বেরিয়ে পড়েন। জানা যায়, তখন একটি হিন্দুবাড়িতে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা বিশ্রাম নিচ্ছিলেন।

এমন সময় একজন বালক এসে খবর দেয় কয়েকজন সেনা নিয়ে পাকিস্থানি হানাদার বাহিনীর একটি বাস ভাদেশ্বরের দিকে যাচ্ছে। এ সংবাদ পাওয়া মাত্র মুক্তিযোদ্ধারা সেই ছেলেটির সহযোগিতায় রাস্তায় গিয়ে একটি অ্যান্টিট্যাংক মাইন পুতে রাখেন। বাসটি ফিরে এসে মাইনের ওপর ওঠা মাত্রই বিস্ফোরিত হয়ে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারায় দুজন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সদস্য। বাকিরা লক্ষণাবন্দ ইউনিয়নের মুকিতলা গ্রামের দিকে পালিয়ে যায়।

ওইদিন দুপুরে মরহুম বীর মুক্তিযোদ্ধা জিএন চৌধুরী হুমায়ূন থানা সদরে স্বাধীন বাংলার লাল-সবুজের পতাকা উত্তোলন করেন। এসময় স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা এবং মুক্তিকামী জনতা অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। সারা দেশের মতো এভাবেই পাকিস্তানি বাহিনীকে পরাস্ত করে পাকহানাদার মুক্ত হয় গোলাপগঞ্জ। ত্রিমুখী আক্রমনে পাকিস্তানি বাহিনী আত্মসমর্পন করতে বাধ্য হয়। গোলাপগঞ্জ, সিলেট ঢাকা সহ একের পর এক জায়গা পাকহানাদার মুক্ত হতে থাকে। স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসাবে বিশ্বের মানচিত্রে স্থান করে বাংলাদেশ। বিশ্বের কাছে বাংলাদেশ একটি স্বাধীন রাষ্ট্রে পরিণত হয়।

তিনজন বীরউত্তম, বীরবিক্রম ও বীরপ্রতীক খেতাবধারীসহ প্রায় চারশত মুক্তিযোদ্ধার জন্মভূমি গোলাপগঞ্জ মুক্ত দিবস উপলক্ষে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ মুক্তিযোদ্ধা সন্তান কমান্ড, গোলাপগঞ্জ প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের উদ্যোগে প্রতি বছর বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে পালিত হয় দিবসটি। এবারও দিবসটি পালনের লক্ষ্যে নানা কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

মুক্ত দিবস উপলক্ষে গোলাপগঞ্জ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডের উদ্যোগে এক বর্ণাঢ্য বিজয় র‌্যালী ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হবে বলে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার অফিস সুত্রে জানা যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *