বাংলাদেশে আজ মানবাধিকার বলতে কিছুই নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আজ মঙ্গলবার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ মন্তব্য করেন। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে রাজধানীর নয়াপল্টন এলাকায় র্যালি করার কথা ছিলো বিএনপির। কিন্তু পুলিশি বাধায় র্যালিটি করতে পারেনি তারা। পরে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন দলটির নেতারা।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের দেশে একটা মানবাধিকার কমিশন আছে, জাতীয় মানবাধিকার কমিশন। যেটার বয়স প্রায় দশ বছর হয়েছে। এই দশ বছরে তারা একটি মাত্র রাজনৈতিক মামলা নিয়ে কাজ করেছে। আপনার জানেন বাংলাদেশে এখন প্রতি মূহুর্তে মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে।
গত ১০ বছরে আমাদের দেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড হয়েছে দেড় হাজার। এটাকে তারা বন্দুকযুদ্ধ নামে অবহিত করেছে। কিন্তু আমাদের হিসাব মতে এটা প্রায় দুই হাজারের ওপরে। আমাদের হিসাব মতে সারা বাংলাদেশে শুধু রাজনৈতিক ভিন্নমত পোষণ করার কারণে ৩৫ লাখ লোকের নামে মামলা দেয়া হয়েছে। প্রতিনিয়ত গুম করা হচ্ছে। যেটা মানবতাবিরোধী অপরাধ।
আজকে সারা বাংলাদেশে মানবাধিকার সমস্যাটি একটা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে উল্লেখ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এখানে যিনি ভিন্নমত পোষণ করবেন তার অধিকারকে হরণ করা হয়। হয় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়, হয় তাকে হুমকি দেয়া হয়, না হয় তাকে গুম করে ফেলা হয়। এসব বিষয় আমাদের দেশে এখন অহরহ হচ্ছে। এরকম পরিস্থিতি অতীতে কখনো কোন রাজনৈতিক সরকার আমলে হয়নি। গত দশ বছরে যেটা আমাদের দেশে হয়েছে সেটা আমরা কখনো দেখিনি।
ফখরুল বলেন, আজকে বাংলাদেশের সরকার শুধুমাত্র ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য মানবাধিকার লঙ্ঘনের সকল প্রক্রিয়া তারা করছে। যারা শ্রমিকের কাজ করছে, যারা গার্মেন্টসে কাজ করছে তাদের মানবাধিকার হরণ করে নেয়া হয়েছে। যারা বিদেশে মহিলা শ্রমিক কাজ করছে তাদের অধিকার প্রতিমূহুর্তেই লঙ্ঘিত হচ্ছে কিন্তু সরকার কিছুই করছে না। সরকার শুধু মানবাধিকারের কথা বলছে। আমাদের দেশে যে রোহিঙ্গা সমস্যা এই সমস্যা নিয়ে এখন পর্যন্ত সরকার কোনো পদক্ষেপ নেয়নি এমন কি আন্তর্জাতিক আদালতে সরকারের পক্ষ থেকে কোন কিছুই করা হয়নি। আজকে রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে গাম্বিয়া মামলা করেছে। কিন্তু বাংলাদেশ সরকারের কোন ভূমিকা নেই।
বিজেপি নেতা অমিত সাহার বক্তব্যের নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেন, ভারতীয় সংসদে বিজেপি নেতা অমিত শাহ বলেছেন- বিএনপি সরকারের আমলে এদেশে সংখ্যালঘুরা নির্যাতিত হয়েছে। আমরা ওনার এ বক্তব্যের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। জোর গলায় বলতে চাই বিএনপি সরকারের আমলে এদেশে সংখ্যালঘুরা সবচেয়ে বেশি নিরাপদে ছিলো এবং আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে সংখ্যালঘুরা যতোটা নির্যাতন হয়েছে অন্য কোন সময় এমন হয়নি।
ফখরুল বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেত্রী হওয়ার কারণেই তাকে অন্যায়ভাবে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে। তার যে প্রাপ্য জামিন সেটাও তাকে দেয়া হচ্ছে না। তার চিকিৎসার সুযোগ দেয়া হচ্ছে না। এটাকে চরম মানবাধিকার লঙ্ঘন। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আজকে আমাদের এই র্যালি করতে না দেয়ায় আমি মনে করি আমাদের মানবাধিকার হরণ করা হয়েছে।
জনগণকে তার অধিকার থেকে বঞ্চিত করা উচিত নয় মন্তব্য করে ফখরুল বলেন, সরকারের একটা জিনিস মনে রাখা উচিত সব দ্বার বন্ধ করে দিয়ে কোন সমস্যা সমাধান সম্ভব নয়। যদি দেশের সকল সমস্যার সমাধান করতে হয় তাহলে বিরোধী দলের সকল নেতাকর্মীদের মামলা প্রত্যাহার, খালেদা জিয়ার মামলা প্রত্যাহার এবং দেশে ভিন্নমত রাজনৈতিক চর্চা করার সুযোগ করে দিতে হবে। অন্যথায় তারা একনায়কতন্ত্র স্বৈরাচারের মধ্য দিয়ে দেশ শাসন করতে পারবে না। এটা মানুষ কখনো মেনে নেয়নি এবং এখনও সেটা মেনে নেবে না।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাংগঠনিক সম্পাদক এমরান সালেহ প্রিন্স প্রমুখ।