১৯ স্বর্ণ জয় : বাংলাদেশের রেকর্ড

Slider খেলা জাতীয়


সাফল্যের নতুন শিখরে পা রাখলো বাংলাদেশ। সাউথ এশিয়ান (এসএ) গেমসে আগের সেরা সাফল্য ছিল ঢাকায়, ২০১০ সালে। সেবার দেশের মাটিতে প্রাপ্তি ছিল ১৮ সোনা। কাল নেপালে পুরুষ ক্রিকেটে সোনা জয়ের মধ্যদিয়ে বাংলাদেশ এসএ গেমসের ইতিহাসে নিজেদের সাফল্যে ঢাকার আসরকে ছাপিয়ে গেল। এবার দীপু চাকমাকে দিয়ে শুরু হয়েছিল সোনা জয়ের উৎসব। গতকাল সকালে রোমান সানার হাত ধরে আসে ১৮তম সোনার পদক। এরপর শুরু নতুন ইতিহাস গড়ার ক্ষণ গণনা। বিকালে ছেলেদের ক্রিকেটে সোনা জয়ের মাধ্যমে এসএ গেমসের ইতিহাসে নিজেদের সাফল্যের নতুন ইতিহাস রচনা করে বাংলাদেশ।

সৌম্য-শান্তদের জয়ে ১৯ সোনায় ছাড়িয়ে যায় আগের সব আসরকে।
আগের দিন দেশের বাইরে পাওয়া সেরা সাফল্যকে ছুঁয়েছিল বাংলাদেশ। আসরের অষ্টম দিন সকালেই আরচারি রিকার্ভ দলগত ইভেন্টে সোনা জিতে এই আসরের অ্যাথলেটরা গড়ে সাফল্যের নতুন ইতিহাস। সেদিন বিকালে সেটিকে ছাড়িয়ে অন্য এক উচ্চতায় নিয়ে যায় আরচারি। তার সঙ্গে নারী ক্রিকেটের সাফল্য মিলে বাংলাদেশের স্বর্ণ সংখ্যা গিয়ে ঠেকে ১৪তে। কাঠমান্ডুতে বাংলাদেশ প্রথম স্বর্ণের দেখা পায় আসরের দ্বিতীয় দিনে। ছেলেদের তায়কোয়ান্দোতে ২৯ (প্লাস) বয়স ক্যাটাগরিতে ৮ দশমিক ২৮ ও ৭ দশমিক ৯৬ স্কোর গড়ে সোনা জিতেন দীপু চাকমা। পরের দিন তিনটি সোনা আসে কারাতে ইভেন্ট থেকে। পুরুষ একক কুমিতে অনূর্ধ্ব-৬০ কেজিতে জিতেন আল আমিন, কুমিতে মেয়েদের অনূর্ধ্ব-৫৫ কেজিতে মারজান আক্তার প্রিয়া এবং কুমিতে অনূর্ধ্ব-৬১ কেজিতে হুমায়রা আক্তার অন্তরা সোনা জিতেন। বাংলাদেশ ছুঁয়ে ফেলে গত আসরের সাফল্যকে। এই চারটি সোনা জিতে যেন থমকে গিয়েছিল বাংলাদেশ। এই চারটি সোনার পদকই এসেছিল কাঠমান্ডু থেকে। তিনদিন বিরতির পর পোখারা থেকে আসে সোনালি সুসংবাদ। ভারোত্তোলনে ৭৬ কেজি ওজন শ্রেণিতে মাবিয়া আক্তার সীমান্ত জিতেন সোনার পদক। এ নিয়ে টানা দ্বিতীয় বারের মতো এসএ গেমসে স্বর্ণ জিতেন মাবিয়া। ব্যক্তিগত ইভেন্টে বাংলাদেশের কোনো নারী ক্রীড়াবিদের টানা দুই আসরে স্বর্ণ এটিই প্রথম। একই দিন ভারোত্তোলনে ছেলেদের ৯৬ কেজি ওজন শ্রেণিতে স্ন্যাচ ও ক্লিন অ্যান্ড জার্ক মিলিয়ে ২৬২ কেজি তুলে জিয়ারুল ইসলাম এবং ফেন্সিংয়ে মেয়েদের সেইবার এককে ফাতেমা মুজিব সেরা হলে মাদ্রাজের সাফল্যকে স্পর্শ করে বাংলাদেশ। এরপর কেবল নিজেদের ছাড়িয়ে যাওয়ার পালা। পোখারার আরচারি স্টেডিয়ামে পুরুষদের দলগত রিকার্ভে রোমান সানা, হাকিম আহমেদ রুবেল ও তামিমুল ইসলাম ৫-৩ সেটে শ্রীলঙ্কান আরচারদের হারিয়ে সোনালি হাসিতে গেমসের অষ্টম দিন শুরু করে বাংলাদেশের পক্ষে। দুপুর নাগাদ আরচারদের সেই হাসি আরো চওড়া হয়েছে। পরের ইভেন্টগুলোতে বাংলাদেশের আরচারদের সঙ্গে কোনো রকম প্রতিদ্বন্দ্বিতাই গড়তে পারেননি অন্যরা। মেয়েদের দলগত রিকার্ভে ইতি খাতুন, মেহনাজ আক্তার মনিরা ও বিউটি রায়ের দল লঙ্কানদের ৬-০ সেটে উড়িয়ে দিয়ে সোনা জেতেন। মিশ্র রিকার্ভে দলটিতে ছিলেন রোমান সানা ও ইতি খাতুন। তারা হারান ভুটানকে ৬-২ সেটে। কম্পাউন্ড ইভেন্টে আশিকুজ্জামান, সোহেল রানা ও অসিম কুমার দাসের দল ভুটানের বিপক্ষে জিতেছে ২২৬-২১৩ পয়েন্টের ব্যবধানে। একই ইভেন্টে মেয়েরা জিতেছে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে। মেয়েদের দলটিতে ছিলেন সুস্মিতা বণিক, শ্যামলী রায় ও সোমা বিশ্বাস। আরচারিতে দিনের শেষ ইভেন্ট কম্পাউন্ড মিশ্র দ্বৈতে সাফল্যের ধারাবাহিকতা ধরে রাখেন জুয়েল রানা-সুম্মিতা বণিক জুটি। স্বাগতিক নেপালের জুটিকে তারা হারান ১৪৮-১৪০ ব্যবধানে। সব মিলিয়ে দিনের ৬ ইভেন্টের ৬টিতেই সেরা বাংলাদেশ। নারী ক্রিকেটের সাফল্য মিলে একদিনেই আসে ৭টি সোনা। ১৪টি সোনা জিতে গেমসের অষ্টম দিনে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে যায় বাংলাদেশ। গতকাল পোখারায় ন্যাশনাল আরচারি গ্রাউন্ডে সোনালি হাসির শুরু কম্পাউন্ড এককের ফাইনালের মধ্যদিয়ে। শ্রীলঙ্কার প্রতিযোগীকে ১৪২-১৩৪ স্কোরে হারিয়ে বাংলাদেশকে দিনের প্রথম সোনার পদক এনে দেন সুমা বিশ্বাস। এরপর পুরুষ এককের ফাইনালে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পর ১৩৭-১৩৬ স্কোরে ভুটানের প্রতিযোগীকে হারিয়ে দেন সোহেল রানা। কম্পাউন্ডের সাফল্যের রেশ রিকার্ভেও ধরে রাখে বাংলাদেশ। মেয়েদের রিকার্ভ এককে ভুটানের প্রতিযোগী দেমা সোনমের বিপক্ষে ৭-৩ সেট পয়েন্টে ইতি জিতলে দিনের তৃতীয় সোনার পদক পায় বাংলাদেশ। শেষ হাসিটা হাসেন রোমান সানা। ভুটানের কিংলে শেরিংকে ৭-১ সেট পয়েন্টে হারিয়ে আরচারিতে দশম সোনা এনেদেন দেশ সেরা এই আরচার। বিকালে পুরুষ ক্রিকেটে সোনা জয়ের মধ্যদিয়ে ঢাকাকে ছাড়িয়ে ১৯ সোনা জিতে নেয় কাঠমান্ডু।
১৯৮৪ সালে কাঠমান্ডুতে বসে সাউথ এশিয়ান গেমসের প্রথম আসর। গেমসে প্রথমবার অংশ নিয়ে বাংলাদেশ জিতেছিল দুটি স্বর্ণ। ১৯৮৫ সালে ঘরের মাঠে আয়োজন করে ৯ সোনা জেতেন অ্যাথলেটরা। ১৯৮৭ সালে ইসলামাবাদে অনুষ্ঠিত গেমসে লাল সবুজের প্রতিনিধিরা জিতেছিল ৩টি। ১৯৮৯ সালে মাত্র একটি সোনা জিতে সন্তুষ্ট থাকতে হয় বাংলাদেশকে। ১৯৯১ সালে ৪টি। ১৯৯৩ সালে অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ আসরে বাংলাদেশ জিতেছিল ১১টি সোনা। ১৯৯৯ সালে ২টি। ২০০৪ সালে জিতেছিল ৩টি। ২০০৬ সালেও ৩টি। ২০১০ সালে আগের সব আসরকে ছাপিয়ে ১৮টি সোনা জেতে বাংলাদেশ। সর্বশেষ শিলং গৌহাটির আসরে এসেছিল চার সোনা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *