মিশরের রাজধানী কায়রোর একটি ছোট অখ্যাত অঞ্চল। শুক্রবার সকাল। ভোরবেলা বাড়ি ফিরলেন বছর ৩৯-এর সামিয়া। গায়ে তখনও গত রাতের হোটেলের সস্তা সাবানের গন্ধ খানিকটা লেগে রয়েছে। ভোরবেলা ফেরা কারণ, সকালে অত সেজেগুজে ফিরলে প্রতিবেশীদের কৌতুহল বাড়বে। তবে যদি বাড়েও, তবুও কিছু করার নেই। তিনি যে পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন, তাঁর সন্তানদের কিছুতেই যেতে দেবন না। সে জন্যেই মাসের চারটে বৃহস্পতিবার টাকার বিনিময়ে দেহ বিক্রি করেন সামিয়া।
তাঁর কথায়, ‘এতে আমি লজ্জা পাই না। আমি যা করি, তাতে আবেগ থাকে না। আর কি হবে লজ্জা করে?’ প্রশ্নটা সমাজের মুখে সপাটে একটা চড়। স্বামী ও পাঁচ সন্তান নিয়ে তাঁর সংসার। স্বামী সরকারি কর্মচারী। কিন্তু খরচের বহরে মাসের শেষে কিছুই থাকে না। ছেলেমেয়ের পড়াশোনা প্রায় বন্ধ হওয়ার মুখে। তখন এই সাহসী পদক্ষেপ নেন তিনি। এর জন্য একটি ফোনও কিনেছেন তিনি। সপ্তাহের নির্দিষ্ট কয়েকটি দিনে তা অন করে রাখেন। প্রত্যাশিত ‘খদ্দের’ মেলার আশায়।
তিনি জানান, ‘মাসের বৃহস্পতিবার গুলিতে বাড়ির কাজ যত তাড়তাড়ি সম্ভব শেষ করে, ব্যাগের মধ্যে কিছু জামাকাপড় নিয়ে বেরিয়ে পড়ি। রাতে কাজ শেষ করে ভোর ভোর বাড়িতে ফিরে আসি। আমার স্বামী সবই জানেন। কিন্তু তিনি কিছুই বলেন না। অন্তত এটা বুঝেছেন, আমি বাধ্য হয়েছি। মাঝে মাঝে নিজেকে প্রশ্ন করি, আমি কি স্বৈরিণী? জানি না। বাড়ি ফিরে আগের রাতের কোনও ঘটনাই মনে করতে চাই না। অনেক ক্ষেত্রে সঙ্গমের সময়ও চোখের সামনে সন্তানদের মুখ ভেসে ওঠে। এখন শুধু আশায় থাকি। ওরা যেন মানুষের মতো মানুষ হয়।’
এই কাজ করতে গিয়ে বহুবার হেনস্থাও হতে হয়েছে সামিয়াকে। এক বার তো পুলিশের হানায় গ্রেপ্তার হন তিনি। পাক্কা তিনটি বছর জেলও খাটতে হয়। তবু তিনি মুখ বুজে সহ্য করছেন। ভালো দিনের আশায়। –