বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জামিন আবেদনের শুনানি আজ। প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগে এ শুনানি হবে। এর আগে ২৮শে নভেম্বর বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা জানতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভ্যাইস চ্যান্সেলরকে মেডিকেল বোর্ডের রিপোর্ট দাখিল করার নির্দেশ দেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের ৬ বিচারপতির বেঞ্চ। আজকের মধ্যে এই রিপোর্ট দাখিল করতে বলা হলেও ওই রিপোর্ট গতকাল প্রস্তুত হয়নি বলে মেডিকেল বোর্ড সূত্র জানিয়েছে। এটি আজ দিনের প্রথম ভাগে প্রস্তুত করার সুযোগ কম। তাই আজ ওই মেডিকেল রিপোর্ট আদালতে জমা দেয়া নিয়ে অনিশ্চতা দেখা দিয়েছে। গতকাল রাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক কনক কান্তি বড়ুয়া মানবজমিনকে বলেন, রিপোর্ট প্রস্তুত হয়নি। কাল (বৃহস্পতিবার) সকালের মধ্যে রেডি না হলে এর্টনি জেনারেলের মাধ্যমে সময়ের আবেদন করা হবে।
২৭শে অক্টোবরে করা মেডিকেল রিপোর্টটি দাখিল করা হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, না। একসাথেই দুটি রিপোর্ট দাখিল করা হবে।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় সাজা বৃদ্ধি করে হাইকোর্টের দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে গত বছরের ১৯শে নভেম্বর আপিল বিভাগে আপিল করেন খালেদা জিয়া। ওই আপিলের সঙ্গে তার একটি জামিনের আবেদনও রয়েছে। এ মামলায় নিম্নআদালত খালেদা জিয়াকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিলেও দুদকের সাজা বাড়ানোর আবেদন গ্রহণ করে হাইকোর্ট তাকে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেন। এ রায় বাতিল ও খালাস চেয়ে খালেদা জিয়া আপিল বিভাগে আপিল করেন। এখন এই আপিল ও জামিনের আবেদন আপিল বিভাগে বিচারাধীন। এছাড়া, খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে বর্তমানে ৩৭টি মামলা রয়েছে বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবীরা। এর মধ্যে বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলের ৫টি দুর্নীতির অভিযোগে দায়ের হয়। এগুলো হলো-জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট, জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট, গ্যাটকো, নাইকো ও বড়পুকুরিয়া কয়লার খনি দুর্নীতি মামলা। এগুলোর মধ্যে দণ্ডপ্রাপ্ত দুটি ছাড়া বাকিগুলোর বিচার চলছে ঢাকার বিভিন্ন আদালতে। বাকি ৩২টি মামলা বর্তমান সরকারের দুই মেয়াদে হয়। যানবাহনে আগুন দিয়ে মানুষ হত্যা, সহিংসতা, নাশকতা, রাষ্ট্রদ্রোহ, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কটূক্তি ও ভুয়া জন্মদিন পালনের অভিযোগে এসব মামলা হয়। এর মধ্যে কুমিল্লায় ৩টি ও নড়াইলে ২টি মামলা রয়েছে। বাকিগুলো ঢাকার। ৩৭ মামলার মধ্যে ১৮টি মামলার কার্যক্রম স্থগিত রয়েছে উচ্চ আদালতের নির্দেশে। এ ছাড়া কিছু মামলা তদন্তাধীন ও কিছু মামলার বিচার চলমান। বর্তমানে দণ্ডপ্রাপ্ত দুটি ছাড়া অন্য সব মামলায় খালেদা জিয়া জামিনে আছেন বলে জানিয়েছেন তার আইনজীবীরা। গত বছরের ৮ই ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় সাজার রায় ঘোষণার পর খালেদা জিয়াকে কারাগারে নেয়া হয়।
গত ৩০শে এপ্রিল জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাত বছরের দণ্ডের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়ার আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে অর্থদণ্ড স্থগিত এবং সম্পত্তি জব্দের ওপর স্থিতাবস্থা দিয়ে দুই মাসের মধ্যে ওই মামলার নথি তলব করেছিলেন আদালত। এরপর ২০শে জুন বিচারিক আদালত থেকে মামলার নথি হাইকোর্টে পাঠানো হয়। গত বছরের ১৮ই নভেম্বর হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় আপিল করা হয়। এর আগে ২০১৮ সালের ২৯শে অক্টোবর পুরান ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রশাসনিক ভবনের সাত নম্বর কক্ষে স্থাপিত ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫ এর বিচারক মো. আখতারুজ্জামান জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলায় খালেদা জিয়াকে সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ড দেন।