বাংলাদেশের সঙ্গে শক্তিশালী প্রতিরক্ষা সম্পর্ক চায় যুক্তরাষ্ট্র

Slider জাতীয় বাংলার মুখোমুখি সারাবিশ্ব


এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের নিরাপত্তা দেখভালের দায়িত্বপ্রাপ্ত পেন্টাগনের কর্মকর্তা র‌্যান্ডল জি শ্রাইভার বলেছেন, প্রতিবেশীসহ বিশ্বের যে কোনো দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের সুসম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো সমস্যা নেই। তবে ওয়াশিংটন চায় বন্ধু বাংলাদেশের সঙ্গে ‘শক্তিশালী প্রতিরক্ষা সম্পর্ক’ এবং আরও ‘ঘনিষ্ঠ অংশীদারিত্ব’ গড়ে তুলতে প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প প্রণীত ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজির বিষয়ে তিনি খোলাসা করেই বলেন, এটি চীন প্রস্তাবিত বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের ‘ডিরেক্ট কাউন্টার’ নয়। তবে এটি একান্তই চীনের স্বার্থে করা, যা অন্যদের স্বার্থে আঘাত করবে। আর এ কারণেই বিআরআই নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্বেগ রয়েছে। শ্রাইভার দাবি করেন, ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি সকলের জন্য উন্মুক্ত একটি ধারণা।

যা সুরক্ষা এবং মৌলিক নীতির আলোকে প্রণীত। কাউকে দমনে এর উদ্ভাবন নয়। এ বিষয়ে তিনি আরও বলেন, আমরা নিশ্চিত ইন্দো-প্যাসেফিক অঞ্চলের অর্থনৈতিক জোটে কার্যকরিভাবে একত্র হতে পারবো।
ঢাকার বৈঠকগুলোতে শ্রাইভার ইন্দো-প্যাসেফিক স্ট্র্যাটেজি নিয়ে আলোচনা করেছেন জানিয়ে বলেন, অর্থনীতি, সুশাসন ও নিরাপত্তাই হচ্ছে এর প্রধান স্তম্ভ। ওই জোটে যুক্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক আরো সুদৃঢ় হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, এই জোটে বাংলাদেশসহ সব দেশই তাদের কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন গন্তব্যে পৌঁছানোর জন্য স্বাধীনভাবে পরিকল্পনা গ্রহণ করতে পারবে। এতে কেউ বাধা হবে না বা কেউ নির্দেশনা দেবে না। তিনি এও বলেন, ইন্দো-প্যাসিফিক স্ট্র্যাটেজি একটি ইতিবাচক এবং সামগ্রিক ধারণা। চীনও এর বাইরে নয়। উল্লেখ্য, অর্থনৈতিক দিক বিবেচনায় ইন্দো-প্যাসেফিক জোটে কার্যকরিভাবে যুক্ত হতে বাংলাদেশের আগ্রহ রয়েছে। তবে এ নিয়ে এখনও স্পষ্ট ঘোষণা আসেনি। চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের সঙ্গে শুরু থেকেই রয়েছে বাংলাদেশ।

যুক্তরাষ্ট্র প্রস্তাবিত প্রতিরক্ষা বিষয়ক চুক্তি ‘আকসা’ ও ‘জিসোমিয়া’ নিয়ে আলোচনায় মঙ্গলবার ঢাকায় আসেন ট্রাম্প প্রশাসনের সহকারী প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা র‌্যান্ডল। গতকাল বুধবার ঢাকা ছাড়ার আগ পর্যন্ত তিনি এ নিয়ে সরকারি-বেসরকারী বিভিন্ন পর্যায়ে বৈঠক করেছেন। সফরের প্রথম দিনে পৃথক বৈঠক করেন প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভীর সঙ্গে। ওই দিনে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গেও কথা হয় তার। গতকাল দিনের শুরুতে প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা বিষয়ক বাংলাদেশ সরকারের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে বৈঠক করেন। মধ্যাহ্নে গণমাধ্যম প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময়ে সফরের আউটকাম জানান তিনি। জিসোমিয়া ও আকসা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে শ্রাইভার বলেন, যুক্তরাষ্ট্র এই চুক্তিগুলো সঠিক ও সম্পূর্ণভাবে বাস্তবায়ন করতে চায়। এর মধ্য দিয়ে পারসপরিক স্বার্থ ও লাভের বিষয়টি নিশ্চিত করতে চায় যুক্তরাষ্ট্র। একই সঙ্গে তিনি বলেন, প্রতিরক্ষার সঙ্গে যুক্ত চুক্তি দু’টি দ্রুততার সঙ্গে করা জরুরি। শ্রাইভার বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতিরক্ষা বিষয়ক সমপর্ক এগিয়ে নেয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করে বলেন, প্রস্তাবিত প্রতিরক্ষা চুক্তিদ্বয় বাংলাদেশের সঙ্গে আরো তথ্য আদান-প্রদান ও সহযোগিতার সমপর্ক বৃদ্ধি করবে। বৈঠকে তিনি আরও বেশ কিছু বিষয়ে আলোচনা করেন জানিয়ে বলেন, যার মধ্যে রয়েছে, সন্ত্রাসবাদ দমন, সমুদ্রে নিরাপত্তা এবং রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে আভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা।

প্রতিরক্ষা চুক্তিতে আরও সময় নিতে চায় বাংলাদেশ: ওদিকে যুক্তরাষ্ট্র প্রস্তাবিত প্রতিরক্ষা বিষয়ক চুক্তি ‘আকসা’ ও ‘জিসোমিয়া’ সইয়ে আরও সময় নিতে চায় বাংলাদেশ। চুক্তি দু’টির বিষয়ে যে আলোচনা শুরু হয়েছে তা অব্যাহত রাখতে উভয়ের তরফেই আগ্রহ পূনর্ব্যক্ত করা হয়েছে। গত বছর দুই চুক্তির প্রস্তাব আলোচনার টেবিলে তোলে ওয়াশিংটন। কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, প্রথমবারের মত মঙ্গলবার ঢাকায় আসা পেন্টাগনের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা র?্যান্ডল শ্রাইভার প্রধানমন্ত্রীর দুই উপদেষ্টার সঙ্গে পৃথক বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে গুরুত্বের সঙ্গে আলোচনা করেছেন জানিয়ে সূত্র বলছে প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা খাতে ঢাকা-ওয়াশিংটন বিদ্যমান সহযোগিতা বাড়ানোর ওপর জোর দিয়েছে দুই পক্ষ। বিশেষত: দুই দেশের সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর মধ্যে সরাসরি যোগাযোগ ও পারস্পরিক সহযোগিতার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন মার্কিন কর্মকর্তা। জবাবে যুক্তরাাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশেষায়িত প্রশিক্ষণে বাংলাদেশি কর্মকর্তাদের সংখ্যা বাড়ানোর অনুরোধ ছিল ঢাকার।

আলোচনায় প্রস্তাবিত অস্ত্র কেনাকাটা সংক্রান্ত চুক্তি-আকসা (একুইজেশন অ্যান্ড ক্রস-সার্ভিসিং অ্যাগ্রিমেন্ট) এবং অস্ত্র বিষয়ক গোপন তথ্য বিনিময় ও সুরক্ষা চুক্তি-জিসোমিয়ার (জেনারেল সিকিউরিটি অব মিলিটারি ইনফরমেশন অ্যাগ্রিমেন্ট) বিষয়ে আরও আলোচনা-পর্যালোচনার তাগিদ অনুভব করেছে ঢাকা। ওয়াশিংটনের প্রতিনিধিও এতে সায় দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের উন্নত প্রযুক্তির হেলিকপ্টার ও রাডার বিক্রির প্রস্তাব রয়েছে, বাংলাদেশ এতে গররাজি নয়। কিন্তু মার্কিন আইনে কোনো দেশের কাছে উন্নত প্রযুক্তির সমরাস্ত্র বিক্রির আগে সে দেশের সঙ্গে জিসোমিয়া সই করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কূটনৈতিক সূত্র জানিয়েছে, ঢাকার বৈঠকে সমুদ্র নিরাপত্তা প্রসঙ্গে আলোচনায় মার্কিন সহকারি প্রতিরক্ষা মন্ত্রী সাগরের বুকে নতুন চ্যালেঞ্জের বিষয়টি তুলেন। অবশ্য চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় দুই দেশের এক সঙ্গে কাজের সুযোগের কথাও উল্লেখ করেন তিনি। সন্ত্রাসবাদ দমনে সহযোগিতায় সাফল্যের প্রসঙ্গ টেনে দুই পক্ষ সন্তোষ প্রকাশ করে। র‍্যান্ডাল শ্রাইভার সন্ত্রাসবাদ দমনে বাংলাদেশের সামর্থ্য বাড়াতে যুক্তরাষ্ট্র আগ্রহী বলেও জানান। বৈঠকে আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার প্রেক্ষাপটে রোহিঙ্গা সঙ্কটের বিষয়টি আলোচনায় উঠে। পুঞ্জিভূত এ সঙ্কটের টেকসই সমাধানে আসিয়ান জোটভুক্ত দেশগুলোকে আরও ঘনিষ্ঠভাবে সম্পৃক্ত করতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার অঙ্গীকার করেন শ্রাইভার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *