ছাত্রলীগের দু’গ্রুপে সংঘর্ষ, পুলিশ ও প্রক্টরের গাড়িতে হামলা

Slider চট্টগ্রাম জাতীয়


চবি: আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দফায় দফায় সংঘর্ষে জড়িয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের উপ-গ্রুপ সিএফসি ও ভার্সিটি এক্সপ্রেস। এর মধ্যে গত রোববার সন্ধ্যায় হাটহাজারী উপজেলার এগারো মাইল এলাকায় সিএফসি গ্রুপের নেতা শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি নাসির উদ্দিন সুমন ও ছাত্রলীগ কর্মী আব্দুল্লাহ আল নাহিয়ান রাফিকে কুপিয়ে জখম করে প্রতিপক্ষের নেতাকর্মীরা। এমন খবর ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়লে দুইপক্ষ ফের সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ ও জলকামান ব্যবহার করে। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের জিরো পয়েন্টে থাকা পুলিশের পাঁচটি গাড়ি, প্রক্টরের গাড়ি ও ওয়াচ-টাওয়ারে ভাঙচুর করা হয়। পরে ছাত্রলীগ নেতার ওপর হামলার মদতদাতা হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক সিরাজ উদ দৌল্লাহকে দায়ী করে তার পদত্যাগ, হামলার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের দাবিতে অনির্দিষ্টকালের অবরোধের ডাক দেয় সিএফসি উপ-গ্রুপের নেতাকর্মীরা।
জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার শহীদ আব্দুর রব হলের টিভি রুমে মিটিং বসাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়। বিবদমান পক্ষ দুইটি হলো সিটি মেয়র আ জ ম নাসির উদ্দীনের অনুসারী ভিএক্স ও শিক্ষা উপমন্ত্রী মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী সিএফসি। এ ছাড়াও গত ৭২ ঘণ্টায় দু’পক্ষের মধ্যে থেমে থেমে সংঘর্ষ হয়েছে চারবার।

এতে উভয় পক্ষের অন্তত ১০ নেতাকর্মী আহত হয়েছেন। সংঘর্ষ এড়াতে গত শুক্রবার সন্ধ্যার পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারটি আবাসিক হলে তল্লাশি চালায় পুলিশ। এ সময় বেশকিছু দেশীয় অস্ত্র ও পাথর উদ্ধার করলেও কাউকে আটক করা হয়নি। পরে গতকাল ক্যাম্পাসের অদূরে হাটহাজারীর এগারো মাইল এলাকায় সিএফসির দুইজনকে মারধর করার প্রতিবাদে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক সিরাজ উদ দৌল্লার পদত্যাগ, হামলাকারীদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও স্থায়ী বহিষ্কারের দাবিতে অনির্দিষ্টকালের অবরোধের ডাক দেয় সিএফসি। অনির্দিষ্টকালের অবরোধে শাটল ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক থাকলেও ক্যাম্পাস থেকে ছেড়ে যায়নি শহরগামী শিক্ষক বাস। ফলে স্থগিত করা হয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১টি বিভাগের পরীক্ষা ও বিভিন্ন বিভাগের ক্লাস। সকাল ১১টার দিকে অবরোধ শিথিলের ঘোষণা দিলে শিক্ষক বাস শহরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে গেলেও কার্যত অচল ছিল বিশ্ববিদ্যালয়। অবরোধ শিথিলের বিষয়টি নিশ্চিত করে শাখা ছাত্রলীগ সভাপতি রেজাউল হক রুবেল বলেন, ‘চট্টগ্রামে রাষ্ট্রপতির আগমন উপলক্ষে এবং শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল ভাইয়ের নির্দেশে আমরা অবরোধ শিথিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তবে অবরোধ স্থগিত করা হয়নি। তিনদিনের মধ্যে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনতে হবে। এই সময়ে আমরা কোনো অবরোধ কর্মসূচি গ্রহণ করবো না। তবে অপরাধীদের গ্রেপ্তার এবং শাস্তির আওতায় না আনা হলে আমাদের অবরোধ চলবে।’

অপরদিকে সুমনকে কুপিয়ে আহত করার বিষয়টি সম্পূর্ণ অস্বীকার করে ভিএক্স পক্ষের নেতা প্রদীপ চক্রবর্তী দুর্জয় বলেন, এটা ক্যাম্পাসের বাইরের ঘটনা। এতে আমাদের সমপৃক্ততা নেই। তিনি বলেন, শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রেজাউল হক রুবেল একজন অছাত্র এবং বয়োজ্যেষ্ঠ। তার সভাপতি পদে থাকার কোনো যোগ্যতা নেই। তার পদত্যাগ করা উচিত নতুবা কেন্দ্র থেকে তাকে বহিষ্কার করা হোক। তার গ্রুপের কর্মীরা গত রোববার রাতে প্রক্টরের গাড়ি ও ওয়াচ টাওয়ার ভাঙচুর করেছে। তাদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হোক।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক সিরাজ উদ দৌল্লার অপসারণ ও চাকরিচ্যুত, শাখা ছাত্রলীগের উপ-পক্ষ ভিএক্সের নেতা মিজানুর রহমান বিপুল ও প্রদীপ চক্রবর্তী দুর্জয়কে গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও স্থায়ী বহিষ্কার করার দাবিতে ভিসি বরাবর স্মারকলিপি দেন সিএফসি।
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এস এম মনিরুল হাসান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিবদমান শিক্ষার্থীদের কর্মকাণ্ড গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। বিশৃঙ্খলা এড়াতে প্রশাসন সতর্কতা অবলম্বন করছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান শিক্ষা ও গবেষণার সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিনষ্টকারীদের আইনের আওতায় এনে যেকোনো ধরনের শাস্তি প্রদানে প্রশাসন বদ্ধপরিকর। ইতিমধ্যে চলমান ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত করা শুরু হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *