৫ ডিসেম্বরকে ঘিরে পাল্টাপাল্টি হুসিয়ারী, রাজনীতিতে উত্তাপ বাড়ছে

Slider জাতীয় ফুলজান বিবির বাংলা সারাদেশ


ঢাকা: কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জামিন নিয়ে মুখোমুখি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। গতকাল পৃথক অনুষ্ঠান থেকে এ দুই নেতা কড়া মন্তব্য করেন। খন্দকার মোশাররফ বলেছেন, আগামী ৫ই ডিসেম্বর সর্বোচ্চ আদালতে খালেদা জিয়ার জামিন না হলে সরকার পতনের এক দফার আন্দোলন শুরু হবে। তিনি আরো বলেন, ওইদিন জামিন না হলে বুঝবো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপে এটি হচ্ছে না। অন্যদিকে ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আন্দোলনের নামে নৈরাজ্য হলে সমুচিত জবাব দেয়া হবে। তিনি বলেন, আমরা বারবার বলেছি, আইনি লড়াই করে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করুন। এতে সরকারের কোন হস্তক্ষেপ থাকবে না।

আন্দোলনের নামে নৈরাজ্য হলে সমুচিত জবাব দেয়া হবে: ওবায়দুল কাদের

বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আন্দোলনের কর্মসূচি দিয়ে নামা বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আন্দোলনের নামে নৈরাজ্য হলে সমুচিৎ জবাব দেয়া হবে। গতকাল রাজধানীর খামারবাড়ির কৃষিবিদ ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে আওয়ামী মৎস্যজীবী লীগের সম্মেলনে দেয়া বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

ওবায়দুল কাদের বলেন, আজকে খালেদা জিয়ার মুক্তির কথা তারা বলছে। আমরা বারবার বলেছি, উনি আদালতের রায়ে দন্ডিত, সে কারণে জেলে। আপনারা আইনি লড়াই করে তাকে মুক্ত করুন। এতে সরকারের কোনো হস্তক্ষেপ থাকবে না। কিন্তু বিএনপি আদালত মানে না, আইনের শাসন মানে না, বিচার মানে না। তারা খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য আদালতের উপর চাপ দিতে সেখানে ভাংচুর করেছে। পুলিশের উপর হামলা করেছে। আদালত প্রাঙ্গণকে রণাঙ্গনে পরিণত করেছে। বিএনপিকে সতর্ক করে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, শান্তিপূর্ণ আন্দোলন গণতান্ত্রিক পথে, রাজনৈতিকভাবে আমরা মোকাবিলা করব। কিন্তু আপনারা যদি মনে করেন সহিংসতা সৃষ্টি করে, দেশে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে, ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করবেন, তাহলে আপনারা বোকার স্বর্গে আছেন। দলের নেতা-কর্মীদের সতর্ক করে তিনি বলেন, সবাই প্রস্তুত হয়ে যান, এখনও ষড়যন্ত্র চলছে, এখনও চক্রান্ত চলছে। শেখ হাসিনার জনপ্রিয় সরকারকে হটানোর চক্রান্ত চলছে। এই চক্রান্ত রুখতে হবে।

আওয়ামী লীগ সরকার আমলে দেশের উন্নয়ন দেখে বিএনপি তা ব্যাহত করতে চাইছে বলে দাবি করেন ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, দেশে এত উন্নয়ন, এত অর্জন, বিএনপি এবং তার দোসররা উন্নয়ন দেখে না। তারা চোখে কালো চশমা পরেছে। কালো চশমা দিয়ে তারা উন্নয়ন দেখতে পায় না। জনগণ তাদের চায় না, তারা আন্দোলন করতে ব্যর্থ, নির্বাচনে ব্যর্থ। এখন তাদের অবলম্বন হচ্ছে প্রেস ব্রিফিং, তাদের অবলম্বন নালিশ। এখন দেশে ঠাঁই না পেয়ে বিদেশিদের কাছে নালিশ আর দ্বারে দ্বারে ধরনা দিচ্ছে। মৎস্যজীবী লীগ নেতাকর্মীদের অভিনন্দন জানিয়ে তিনি বলেন, আপনাদের সম্মেলন সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে করার মতোই। সারাদেশ থেকে প্রতিনিধিরা এসেছেন এবং বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

এটা আমি আমাদের নেত্রী আমাদের সকলের অভিভাবক দেশরত্ন শেখ হাসিনাকে জানিয়েছি। আপনাদের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি মৎস্যজীবী লীগকে আগামী দিনে আরও শক্তিশালী করবে, আরও গতিশীল করবে, আরও প্রাণবন্ত করবে। মৎস্যজীবী লীগের নেতৃত্ব প্রকৃত মৎস্যজীবীদের হাতে থাকার উপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, কোনো চাঁদাবাজের দোকান আমরা চাই না। মৎস্যজীবীদের সাথে সম্পর্ক নেই, ঢাকায় বসে বসে একটা কার্ড বানিয়ে জায়গায় জায়গায় দিয়ে চাঁদাবাজি করবে, এমন নেতা আমাদের দরকার নেই। দেখলাম যে মৎস্য উৎপাদনে আমরা তৃতীয় স্থানে। কাজেই এখানে একটা সুন্দর ভালো ক্লিন ইমেজের নেতৃত্ব দরকার। সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক নারায়ণ চন্দ্র চন্দ’র সভাপতিত্বে সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ।

এক দফার আন্দোলনে যাবো: মোশাররফ

আগামী ৫ই ডিসেম্বর সর্বোচ্চ আদালতে কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জামিন না হলে লাগাতার সরকার পতনের আন্দোলনের হুমকি দিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। জাতীয় প্রেসক্লাবে ঢাকাস্থ ভোলা মনপুরা চরফ্যাশন জাতীয়তাবাদী ফোরাম আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ ঘোষণা দেন।
খন্দকার মোশাররফ বলেন, আগামী ৫ই ডিসেম্বর বেগম খালেদা জিয়ার জামিন শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে। ওইদিন যদি বেগম জিয়ার জামিন না হয় তাহলে আমরা বুঝতে পারবো, সরাসরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপে এটি হচ্ছে না। আর ওইদিন জামিন না হলে দেশনেত্রীর মুক্তির এক দফা দাবিতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল লাগাতার সরকার পতনের আন্দোলনে যাবে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্য যে বোর্ড গঠন করা হয়েছে, সেই মেডিকেল বোর্ডের রিপোর্ট চেয়েছেন আদালত। আমরা জানি, বিএসএমএমইউ’র প্রশাসন ও চিকিৎসকরাও স্বাধীন নন। এরপরও মনে করি, তাদের পেশার প্রতি সুবিচার করে বেগম খালেদা জিয়ার বর্তমান শারীরিক অবস্থা যা, আমি বিশ্বাস করি, যদি আপনাদের এখন পর্যন্ত নীতিবোধ ও পেশাগত সততা থেকে থাকে তাহলে বেগম খালেদা জিয়ার সঠিক রিপোর্ট সুপ্রিম কোর্টে দেবেন। আর সেই রিপোর্টটি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আসবে। আর সঠিক রিপোর্ট দিলে আমার বিশ্বাস, বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি না দিয়ে আপিল বিভাগের অন্য কোন বিকল্প নাই। আমাদের উচ্চতর আদালত আপিল বিভাগ আর চিকিৎসা বিজ্ঞানের সবচাইতে বড় প্রতিষ্ঠান বিএসএমএমইউ। যদি আমরা সুবিচার না পাই, যদি আমরা সুচিকিৎসা না পাই তাহলে আমাদের বিকল্প পথ নাই এই সরকারের পতন ঘটানো ছাড়া।

বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর উদ্যোগের সমালোচনা করে খন্দকার মোশাররফ বলেন, এই সরকার বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধিতে আবার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। তারা ক্ষমতায় আসার পর প্রায় ৮ বার বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি করেছে এবং এই বার ২৩ দশমিক ২৭ শতাংশ বৃদ্ধি করার জন্য প্রস্তাব করেছে। আমাদের সরকারের সময়ে ২০০৬ সালে যে বিদ্যুতের প্রতি ইউনিটের গড় দাম ছিল আড়াই টাকা, সেটা এখন ১০/১১ টাকা। আবার বিদ্যুতের দাম দাম বৃদ্ধি করবে। এসব কিছুর জন্য আওয়ামী লীগের ব্যবসায়ী সিন্ডিকেই দায়ী।
বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য নাজিম উদ্দিন আলমের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন প্রমুখ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *