কয়লাভিত্তিক ৩০ বিদ্যুৎকেন্দ্র হলে বাংলাদেশ ১১ শতাংশ স্থলভাগ হারাবে

Slider কৃষি, পরিবেশ ও প্রকৃতি জাতীয় ফুলজান বিবির বাংলা


ঢাকা: বাংলাদেশে ৩০টি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা করছে সরকার। এই ৩০টি বিদ্যুৎকেন্দ্র হলে বায়ুমণ্ডলে ১১ কোটি ৫০ লাখ টন অতিরিক্ত কার্বন ডাই-অক্সাইড নিসৃত হবে। ফলে, কার্বন বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে দেশের জনগোষ্ঠীকে চরম হুমকির মুখে ফেলবে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে ১১ শতাংশ স্থলভাগ হারাবে দেশ। সেই সঙ্গে ৪ ও ৫ মাত্রার ঘূর্ণিঝড় আঘাত হানার ঝুঁকি ১৩০ শতাংশ বেড়ে যাবে। এমন মত দিয়েছেন, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।

গতকাল রাজধানীতে টিআইবি’র কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে আসন্ন কপ-২৫ উপলক্ষ্যে প্যারিস চুক্তির আওতায় জলবায়ু অর্থায়নে দূষণকারী শিল্পোন্নত দেশসমূহ কর্তৃক ঋণের পরিবর্তে অনুদান নিশ্চিতসহ ১১ দফা দাবি তুলে ধরা হয়। দাবিগুলোর মধ্যে অন্যতম, প্যারিস চুক্তির আওতায় জলবায়ু অর্থায়নে উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশেরজন্য দূষণকারী কর্তৃক ক্ষতিপূরণ প্রদান নীতি বিবেচনা করে ঋণের পরিবর্তে প্রতিশ্রুত উন্নয়ন সহায়তার ‘অতিরিক্ত’ এবং ‘নতুন’ অর্থসরকারি অনুদান হিসেবে প্রদান নিশ্চিত করা।
জিসিএফ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক তহবিল হতে প্রয়োজনীয় তহবিল অগ্রাধিকার ভিত্তিতে যথাসময়ে ও সহজে সরবরাহ। ক্ষতিপূরণের অর্থ আদায়ে বাংলাদেশসহ ক্ষতিগ্রস্থ দেশগুলোর সমন্বিতভাবে (ক্লাইমেট ডিপ্লোম্যাসির মাধ্যমে) দাবি উপস্থাপন ও দর কষাকষিতে দক্ষতা প্রদর্শন।

জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সৃষ্ট ক্ষতি মোকাবিলায় ‘ওয়ারশো ইন্টারন্যাশনাল মেকানিজম’র চ্যালেঞ্জগুলো চিহ্নিত করে মেকানিজমটি বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং শুদ্ধাচার নিশ্চিতে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদল তথা সরকারের কাছে আসন্ন কপ-২৫ এ অগ্রাধিকার ভিত্তিতে উপস্থাপনের প্রস্তাব প্রদান করে টিআইবি।

ড. ইফতেখারুজ্জামান জলবায়ু অর্থায়নকে সম্পুর্ণ আলাদা উল্লেখ করে বলেন, এই অর্থায়ন হতে হবে উন্নয়ন সহায়তার ‘অতিরিক্ত’ ও ‘নতুন’ এবং এটি ক্ষতিপূরণ হিসেবে আসতে হবে। যদিও দূষণকারী দেশসমূহ প্রতিশ্রুতি প্রদান করেছে যে ২০২০ সাল থেকে প্রতি বছর তারা ১শ’ বিলিয়ন ডলার অর্থায়ন করবে অথচ এক্ষেত্রে কোনো ধরণের অগ্রগতি পরিলক্ষিত হচ্ছে না। জলবায়ু অর্থায়নের জন্য প্রদত্ত অঙ্গীকারের বিপরীতে বিভিন্ন ধরণের দীর্ঘসূত্রিতা ও জটিলতা সৃষ্টির পাশাপাশি অর্থ প্রাপ্তির জন্য নতুন ধরণের শর্ত যেমন বীমা ব্যবস্থা চালু করার মাধ্যমে নতুন ধরণের বোঝা চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক এবং বাংলাদেশসহ স্বল্পোন্নত দেশসমূহের জন্য প্রতিশ্রুত অর্থ প্রাপ্তিকে অনিশ্চিত করছে। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশ সবুজ জলবায়ু তহবিল (জিসিএফ) থেকে মাত্র ৮৫ মিলিয়ন ডলার পাওয়ার অনুমোদন পেয়েছে, যে অর্থ এখনও ছাড় করা হয়নি।

জলবায়ু অর্থায়নের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক উৎস থেকে মাত্র ৩৫০ মিলিয়ন ডলার পেয়েছে। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় জাতীয় বাজেট থেকে অর্থ বরাদ্দসহ বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন ইতিবাচক পদক্ষেপকে জলবায়ু অর্থায়নে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি উল্লেখ করে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, আন্তর্জাতিক উৎস থেকে প্রাপ্ত অর্থের পরিমাণের চেয়ে আমাদের জাতীয়ভাবে বরাদ্দ ও বিভিন্ন প্রকল্পব্যায়কৃত অর্থের পরিমাণ বেশি যা সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য। তবে এ ক্ষেত্রে আমাদের উদ্বেগের বিষয় হলো-ন্যাশনাল ডিটারমাইন্ড কন্ট্রিবিউশন অনুসারে শুধুমাত্র বাংলাদেশের অভিযোজন বাবদ বছরে ২.৫ বিলিয়ন ডলার দরকার সেখানে প্রয়োজনীয় অর্থ আমরা আন্তর্জাতিক উৎস থেকে পাচ্ছিনা। পাশাপাশি, অর্থায়ন বিরোধী একটি আন্তর্জাতিক চক্রান্ত পরিলক্ষিত হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র প্যারিস চুক্তি থেকে নিজেদেরকে প্রত্যাহার করে নিয়েছে যা অন্যান্য দেশসমূহে জলবায়ু অর্থায়নের ক্ষেত্রে ভুল বার্তা প্রদান করছে। এছাড়া, জিসিএফ নির্ধারিত কঠিন মানদণ্ড নিশ্চিত করে ক্ষতিগ্রস্থ দেশসমূহ প্রয়োজনীয় তহবিল সংগ্রহ করতে সক্ষম না হওয়ার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক অর্থ লগ্নিকারী প্রতিষ্ঠান ক্রমেই জিসিএফএ নিবন্ধিত হচ্ছে। এমন প্রতিষ্ঠানগুলো জলবায়ু তহবিলকে লাভজনক বিনিয়োগ বা ব্যবসার সুযোগ হিসাবে ব্যবহার করছে যা অনৈতিক এবং আন্তর্জাতিক প্রতিশ্রুতির লঙ্ঘণ।

সংবাদসম্মেলনে ড. সুমাইয়া খায়ের, এম. জাকির হোসেন খান, মো: মাহফুজুল হক উপস্থিত ছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *