বাজারে পিয়াজের মূল্য বাড়ার ঘটনায় সংসদে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সরকার ও বিরোধী দলের এমপিরা। বাজারে ঘাটতি না থাকলেও সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করতে কারসাজির মাধ্যমে মূল্য বাড়ানো হচ্ছে। তাই কারসাজির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা জরুরি।
বৃহস্পতিবার সংসদ অধিবেশনে অনির্ধারিত আলোচনায় অংশ নিয়ে তারা এমন মন্তব্য করেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অধিবেশনে এই আলোচনায় অংশ নেন সরকারী দল আওয়ামী লীগের তোফায়েল আহমেদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিম ও সাবেক চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ এবং বিরোধী দল জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নু ও বিএনপির মো. হারুনুর রশীদ। সংসদ অধিবেশনে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে আলোচনার সূত্রপাত করেন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। তিনি বলেন, এতো সুদক্ষ একটি মন্ত্রিসভা, তার দু’জন মন্ত্রী এখানে আছেন। তাদের অনুরোধ করতে চাই, পিয়াজের ঝাঁঝ বেশি হয়ে গেছে।
জনগণের মধ্যে একটা রিঅ্যাকশন হচ্ছে। আজকে পর্যন্ত যে খবর আছে, তাতে পিয়াজের কেজি প্রায় ২০০ টাকা হয়ে গেছে। তিনি বলেন, আমরা এতো জনপ্রিয় সরকার, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে কাজ করে যাচ্ছি। কি কারণে প্রতিদিন পিয়াজের দাম বেড়ে যাচ্ছে? বাণিজ্যমন্ত্রী যখন সংসদে বলেন ১০০ টাকার নিচে নামবে না, তখন তো ব্যবসায়ীরা সুযোগ পেয়ে যায়। মন্ত্রী প্রয়োজনে বিদেশ থেকে আমদানি করছেন বলেছেন। তারপরেও কেন দাম বাড়ছে? ব্যাপারটা বোধগম্য নয়। তিনি আরো বলেন, এতে আমাদের সুনাম ক্ষুণ্ন হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী ভারতে যেয়ে বলেছিলেন পিয়াজের ঝাঁঝ বেড়ে গেছে। প্রধানমন্ত্রী অনুরোধ করেছিলেন পিয়াজের রপ্তানি বন্ধ করবেন না।
এখন পিয়াজের ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া উচিত, আরো তৎপর হওয়া উচিত। সাবেক বাণিজ্য মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, কয়েকদিন আগে ঘুর্ণিঝড় বুলবুল হয়েছে। এই প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে দাম একটু বেড়েছে। একটু না আজকে পত্রিকায় দেখলাম ২০০ টাকা কেজি। এটা কোনো দিন আমরা ভাবি নাই। বর্ষার কারণে ভারতে পিয়াজের উৎপাদন হয়নি। সাধারণত এগুলো আমরা আগেই মূল্যায়ণ করি। আমাদের বাৎসরিক চাহিদা কতো আছে। আর যেটা ঘাটতি সেটা আগেই তুরস্ক বা মিশরসহ মিয়ানমার থেকে আগেই আমদানি করার ব্যবস্থা করি। টিসিবি সে ব্যাপারে পদক্ষেপ গ্রহণ করে। তিনি আরো বলেন, অর্থমন্ত্রীকে বলবো যারা পিয়াজ আমদানি করে তাদের সুযোগ-সুবিধা দেন এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আমাদের যখন কোন একটা পণ্যের দাম বাড়ে, আমরা তার উপর ডিউটি কমিয়ে দেই। আমি মনে করি এই মুহুর্তে পিয়াজ আমদানি করার জন্য অন্তত কিছু দিনের জন্য ডিউটি শূণ্য করে দেন।
অতীত অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, আমি যখন শিল্প বাণিজ্যমন্ত্রী ছিলাম তখন লবণের দাম বেড়েছিল। তখন অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়াকে অনুরোধ করার পর লবণ আমদানি ডিউটি ফ্রি করে দিয়েছিলেন। এই খবর পরিবেশিত হওয়ার সাথে সাথে লবণের মূল্য স্বাভাবিক হয়ে যায়। এরকম একটা ঘোষণা দেন পিয়াজ আমদানি করতে কোনো শুল্ক বা ডিউটি লাগবে না। তাহলে দেখবেন এর একটা প্রভাব পড়বে। মূল্য নিয়ন্ত্রণে আসবে। সাবেক চিফ হুইপ আ স ম ফিরোজ এ প্রসঙ্গে বলেন, আসলেই বাজারে প্রচুর পিয়াজ আছে। এটা নিয়ে কোনো সন্দেহ নাই। প্রধানমন্ত্রী এর আগে অনুরোধ করেছিলেন পিয়াজ কম খেতে। সেটাতে মানুষ সাড়া দিয়েছেন। পিয়াজের দাম বৃদ্ধি সরকারের বিরুদ্ধে একটি ষড়যন্ত্র। সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে অভিযান চালাচ্ছে। এজন্য দুর্নীতিবাজরা এটা করতে পারে। এটা মানা যায় না। এব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া দরকার। প্রধানমন্ত্রী, বাণিজ্যমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর প্রতি আমি আহবান জানাই। এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেবেন, যাতে পিয়াজের দাম কমে।