ঢাকা: সারা দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বেতন বাড়ছে। এর মধ্যে প্রশিক্ষণ পাওয়া ও প্রশিক্ষণবিহীন দুই ধরনের প্রধান শিক্ষকদের বেতন গ্রেড হবে ১১তম। আর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও প্রশিক্ষণবিহীন সহকারী শিক্ষকদের বেতন গ্রেড হবে ১৩তম।
বেতন বৃদ্ধির বিষয়ে অর্থ বিভাগ সম্মতি দিয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে। এ ছাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষকের পদ সৃষ্টির জন্য জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সম্মতিসহ প্রস্তাব পেলে এই পদেরও বেতন স্কেল নির্ধারণ করা হবে বলে জানিয়েছে অর্থ বিভাগ।
জানতে চাইলে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব মো. আকরাম-আল-হোসেন আজ মঙ্গলবার অর্থ বিভাগের সম্মতি পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, এখন বাকি আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে। অবশ্য আন্দোলনকারী শিক্ষকেরা প্রথম আলোকে বলেছেন, এ রকমভাবে বেতন বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত তাঁরা মানবেন না।
বর্তমানে প্রশিক্ষণ পাওয়া প্রধান শিক্ষকেরা ১১তম গ্রেডে এবং প্রশিক্ষণবিহীন প্রধান শিক্ষকেরা ১২তম গ্রেডে বেতন পান। অন্যদিকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষকেরা ১৪তম গ্রেডে ও প্রশিক্ষণবিহীন শিক্ষকেরা ১৫তম গ্রেডে বেতন পান। আর বর্তমানে সহকারী প্রধান শিক্ষকের কোনো পদ নেই।
বেতন গ্রেড ১১ তম হলে একজন শিক্ষকের শুরুতে মূল বেতন হবে ১২ হাজার ৫০০ টাকা। আর ১৩তম গ্রেডে শুরুতে একজন শিক্ষকের মূল বেতন হবে ১১ হাজার টাকা।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের বেতন ১০ম গ্রেডে এবং সহকারী শিক্ষকদের বেতন ১১ তম গ্রেডে উন্নীত করার দাবিতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন করে আসছেন। আন্দোলনের অংশ হিসেবে তাঁরা ঢাকায় সমাবেশ করে আসন্ন প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা বর্জনেরও হুমকি দিয়েছিলেন। অবশ্য পরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেন এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব মো. আকরাম-আল-হোসেনের সঙ্গে বৈঠক করার পর শিক্ষকেরা পরীক্ষা বর্জনের কর্মসূচি প্রত্যাহার করেন।
আন্দোলনের এমন পরিস্থিতিতে গত বৃহস্পতিবার বেতন বৃদ্ধির সম্মতি দেয় অর্থ বিভাগ, যা আজ মঙ্গলবার হাতে পেয়েছেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে আন্দোলনকারী বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক ঐক্য পরিষদের সদস্যসচিব মোহাম্মদ শামছুদ্দিন আজ প্রথম আলোকে বলেন, যেভাবে বেতন বৃদ্ধি করার বিষয়ে অর্থ বিভাগ সম্মতি দিয়েছে সেটা তাঁরা মানবেন না। তাঁরা এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাতের অপেক্ষায় আছেন। সাক্ষাৎ হলে প্রধানমন্ত্রী যে বেতন গ্রেড নির্ধারণ করে দেবেন সেটা তাঁরা মানবেন। যদি ১৭ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের ব্যবস্থা না করা হয় তাহলে আবারও আন্দোলনের কর্মসূচি দেবেন তাঁরা। তাঁদের চাওয়া প্রধান শিক্ষকদের বেতন গ্রেড হবে ১০ তম এবং সহকারী শিক্ষকদের বেতন গ্রেড হবে ১১ তম গ্রেডে।
অন্যদিকে বাংলাদেশ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক সমিতির মুখপাত্র এস এম ছায়িদ উল্লা বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৪ সালের মার্চে প্রধান শিক্ষকদের চাকরি দ্বিতীয় শ্রেণির মর্যাদার ঘোষণা দেন। কিন্তু পদমর্যাদা অনুযায়ী এখনো বেতন গ্রেড ১০ তম করা হয়নি। এ নিয়ে প্রথমে আন্দোলন এবং পরে আদালতে গেলে আদালত ১০ তম বেতন গ্রেড করার পক্ষে রায় দেন। এ অবস্থায় প্রধান শিক্ষকদের বেতন গ্রেড ১১ তম গ্রেডে রাখা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হবে না। এটা তাঁরা প্রত্যাখ্যান করছেন।