ঢাকা: অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ তর্জন-গর্জন করছে এ মুহূর্তে খুলনা-সুন্দরবনের কাছেই। বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূলের অদূরে উত্তর বঙ্গোপসাগরে প্রায় দুইশ’ কিলোমিটার ব্যবধানে (মংলা বন্দরের বিপরীতে দক্ষিণ-পশ্চিমে) এসে গেছে ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’। এর সক্রিয় প্রভাবে সারাদেশে বিরাজ করছে থমথমে আবহাওয়া। বৃহত্তর চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, বরিশাল ও বিশেষত খুলনা উপকূলের কোটি মানুষের মাঝে ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাস ঘিরে অজানা আতঙ্ক। সবার মনে শঙ্কা, কী হবে কী ঘটবে!
আজ শনিবার বিকেল পর্যন্ত প্রাপ্ত আবহাওয়ার সর্বশেষ বুলেটিনে জানা গেছে, উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’ উত্তর দিকে অগ্রসর হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছে। এটি আজ বিকেল নাগাদ চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দর থেকে ৪৭৫ কি.মি. পশ্চিম, দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্র বন্দর থেকে ৪৭০ কি.মি. পশ্চিম, দক্ষিণ-পশ্চিমে, মংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ২৮০ কি.মি. দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ৩১৫ কি.মি. দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল।
বুলবুল আরও উত্তর, উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে আজ সন্ধ্যা নাগদ পশ্চিমবঙ্গ-খুলনা উপকূল (সুন্দরবনের নিকট দিয়ে) অতিক্রম করতে পারে। অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘বুলবুল’-এর অগ্রবর্তী অংশের প্রভাবে সমুদ্র বন্দরসমূহ, উত্তর বঙ্গোপসাগর ও বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় দুপুর থেকে দমকা ও ঝড়ো হাওয়া অব্যাহত থাকতে পারে।
অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘন্টায় ১৩০ কি.মি.। যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১৫০ কি.মি. পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটে সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে।
মংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে ১০ (দশ) নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।
চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরকে ৯ (নয়) নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, ফেনী, চাঁদপুর এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ ৯ মহবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।
কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড় অতিক্রমকালে চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা জেলাসমূহ এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহে ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ সহ ঘন্টায় ১০০ থেকে ১২০ কি.মি. বেগে দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
ঘূর্ণিঝড় ও চাঁদের আকর্ষণে প্রভাবে উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, ভোলা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৫ থেকে ৭ ফুট অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।
উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।