ঢাকা: ঘূর্ণিঝড় বুলবুল ক্রমেই শক্তিশালী হয়ে বাংলাদেশের উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সাগর উত্তাল হয়ে ওঠায় বৃহস্পতিবার বিকেল নাগাদ মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দর ও এর আশেপাশের চরাঞ্চলে সতর্কতা সংকেত চার থেকে বাড়িয়ে সাত করা হয়েছে।
ভোলা, বরগুনা, পটু=য়াখালি, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, খুলনার উপকূলীয় এলাকায় সাত নম্বর সতর্কতা সংকেতের আওতায় রয়েছে। চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরে পণ্য খালাস সাময়িক বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেল।
ঘূর্ণিঝড়টি কখন ও কোথায় আঘাত হানতে পারে
শনিবার রাত থেকে রোববার সকালের মধ্যে যেকোনো সময় বাংলাদেশের উপকূলে ঘূর্ণিঝড়টি প্রবল বেগে আঘাত হানতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন আবহাওয়া অধিদপ্তরের কর্মকর্তা আবুল কালাম মল্লিক। সবচেয়ে ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে খুলনা ও বরিশাল জেলার উপকূলীয় অঞ্চল।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঘূর্ণিঝড়টি চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ৬২০ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। ঝড়ের অবস্থান পায়রা ও মোংলার আরো কাছাকাছি ছিল। আবহাওয়া অফিস বলছে ঘূর্ণিঝড়টি এখন পর্যন্ত প্রবল বেগে বাংলাদেশ অভিমুখী। তবে এর গতিপথ ও তীব্রতা যেকোনো মুহূর্তে পরিবর্তন হয়ে পশ্চিমবঙ্গের দিকে সরে যেতে পারে।
বাতাসের একটানা গতিবেগ এখন পর্যন্ত ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার যা দমকা ও ঝড়ো হাওয়া আকারে ঘণ্টায় ১২০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে। সেই সাথে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে।
সমুদ্রের ঢেউ স্বাভাবিকের চেয়ে আরো পাঁচ থেকে সাত ফুট পর্যন্ত উঁচু হতে পারে।
বিবিসিকে মল্লিক বলেন, ‘এই ঘূর্ণিঝড়টির গতিবেগ কখনো বেশি হচ্ছে, কখনো কম হচ্ছে। বঙ্গোপসাগরে যেসব ঘূর্ণিঝড়ের সৃষ্টি হয়, উপকূলে আঘাত করার আগে সাধারণত সেগুলোর শক্তি বৃদ্ধি পায়। আবার কখনো-কখনো দুর্বল হওয়ার নজিরও রয়েছে।’
সতর্ক অবস্থান
এরইমধ্যে চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরে পণ্য খালাস সাময়িক বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেল। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে উপকূলের কাছাকাছি নিরাপদে থাকতে বলা হয়েছে।
খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রামের উপকূলীয় এলাকায় অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল সাময়িক বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে। সাধারণ মানুষকে জরুরি সেবা দিতে উপকূলীয় বেশিরভাগ উপজেলায় স্থাপন করা হয়েছে কন্ট্রোল রুম। এরইমধ্যে উপকূলীয় বিভিন্ন এলাকায় মাইকিং করে স্থানীয় এলাকাবাসীকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন উপজেলা পর্যায়ের সরকারি কর্মকর্তা থেকে শুরু করে এনজিও কর্মী, রোভার ও স্কাউট সদস্যরা।
বুলবুল নাম হল কেন
প্রতিবছরই বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণিঝড় তৈরি হয়। এজন্য আর্কাইভে আগে থেকেই নাম সংরক্ষণ করা থাকে। নামগুলো নির্ধারণ করা হয় আরব সাগর ও বঙ্গোপসাগর তীরবর্তী রাষ্ট্রগুলো নিয়ে গঠিত ৮ সদস্যের একটি প্যানেল থেকে। সংস্থাটির নাম ইকোনমিক অ্যান্ড সোশ্যাল কাউন্সিল ফর এশিয়া অ্যান্ড প্যাসিফিক- এসক্যাপ।
তারা নিয়মিত বৈঠকের মাধ্যমে নাম প্রস্তাব করেন, এবং সবার সম্মতির ভিত্তিতে সেটা অনুমোদন করা হয়। বর্তমানের ‘বুলবুল’ নামটি পাকিস্তান থেকে দেয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
ঘূর্ণিঝড়ের উৎপত্তি
উত্তর আন্দামান সাগরে এই ঘূর্ণিঝড়ের উৎপত্তি বলে জানা গেছে। ৫ই নভেম্বর সেখানে প্রথমে নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়, ছয় তারিখে গভীর নিম্নচাপ এবং সাত তারিখে দুপুরের দিকে এটি ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেয়। ওইদিন রাত থেকে এটি শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেয়।
ঘূর্ণিঝড়টি ক্রমেই আরও শক্তিশালী হয়ে উঠছে বলে আবহাওয়া অধিদফতর থেকে বলা হয়েছে। সূত্র : বিবিসি