ঢাকা: সংসদ সদস্যদের কাছে নৈতিকতার প্রশ্ন রেখে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাবেক প্রেসিডিয়াম সদস্য নুহ-উল-আলম লেনিন। আজ রাতে তিনি এ স্ট্যাটাস দেন। পাঠকদের জন্য স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে ধরা হলো-
মাননীয় সংসদ সদস্যগণ আমাকে ভুল বুঝবেন না। প্রশ্নটা আপনাদের কাছে। আপনারা যখন নির্বাচনে দাঁড়ান, দেশের জন্য, জনগণের জন্য আপনারা কতটা ত্যাগ স্বীকার করেছেন, কত কী ভালো কাজ করেছেন তা যেমন প্রচার করেন, তেমনি ভবিষ্যতে কী করবেন সে প্রতিশ্রুতি দেন। নির্বাচনকালে কেউ রিক্সায় চড়ে, কেউ পুরনো জিপ গাড়িতে চড়ে এবং পায়ে হেঁটে প্রচারণা চালান। মুগ্ধ জনগণ আপনাদের ভোট দিয়ে সংসদে পাঠায়।
সংসদ সদস্য হিসেবে আপনারা সংবিধানের নামে শপথ গ্রহণ করেন। সংসদে আপনাদের কাজ হলো আইন প্রণয়ন, বাজেট পাশ, নীতিনির্ধারণ এবং সরকারের কাজের জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ। এ ছাড়া নিজ নির্বাচনী এলাকার জনগণের কল্যাণে কাজ করা। এত কাজ করার জন্য আপনাদের ব্যাক্তিগত রুজি রোজগার ক্ষতিগ্রস্ত হয় (অসুদুপায় অবলম্বন না করলে তাই হওয়ার কথা)। সময় ও শ্রম দিতে হয়। সে জন্য জনগণের ট্যাক্সের টাকা থেকে আপনাদের সম্মানি ভাতা, আবাসিক সুযোগ সুবিধা, যাতায়াত ভাতা, কোনো কোনো ক্ষেত্রে বিনা ভাড়ায় যাতায়াত সুবিধা, চিকিৎসা ভাতা, প্রতিটি অধিবেশনে যোগদানের (উপস্হিতি স্বাক্ষর করলেই হলো) বিশেষ ভাতা, সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভায় যোগদানের জন্য ভাতা, সরকারি প্লট, পুলিশ প্রোটেকশন এবং লোকবল/ অফিস ইত্যাদি পেয়ে থাকেন। তার উপর স্বৈরাচারী এরশাদের চালু করা ট্যাক্স ফ্রি গাড়িও আপনারা পেয়ে থাকেন।
একজন নাগরিক হিসেবে আমার বিনীত জিজ্ঞাসা এসব সুযোগ সুবিধার সবই কি নৈতিকভাবে সিদ্ধ? বিশেষ করে কোন নৈতিকতায় আপনারা ট্যাক্স ফ্রি গাড়ি পাবেন? কোন নৈতিকতায় বিশেষ সরকারি আবাসিক প্লট পাবেন? সংসদ সদস্য হিসেবে নির্ধারিত ভাতা পাওয়ার পরও কোন নৈতিকতায় সংসদ অধিবেশন চলাকালে অধিবেশনে যোগদানের জন্য অতিরিক্ত প্রাত্যহিক ভাতা নিচ্ছেন?
আপনারা কোনো বেআইনি সুযোগ সুবিধা নেন না। বেআইনি হবে কেন, আপনারা কি সুযোগ সুবিধা পাবেন, সে ব্যাপারে সিদ্ধান্তে নেওয়ার মালিক এবং আইন প্রণয়নের মালিক তো আপনারাই। সংসদ হচ্ছে সার্বভৌম। সুযোগ সুবিধা নেওয়ার প্রশ্নে সংসদের ডানপন্থি, বামপন্থি, সরকারি দল, বিরোধী দল সবাই একমত। কে বলেছে আমাদের দেশে জাতীয় ঐক্য নেই?
মান্যবরগণ আমার প্রশ্ন করাকে সংসদ অবমাননার শামিল বলে আপনারা শাস্তিযোগ্য অপরাধ মনে করতে পারেন। কিন্তু আমি আপনাদের খাট করার জন্য প্রশ্ন তুলিনি। তুলেছি এই ভরসায় যে ‘জনগণ প্রজাতন্ত্রের মালিক’ সংবিধানের এই অনুজ্ঞার ভরসায়, জনগণের একজন হিসেবে নিছক জানার জন্য। হয়তো না জেনে না বুঝেই প্রশ্ন করেছি। তবে সংবিধান পাঠ করে আমি নিশ্চিত হয়েছি আপনাদের সকল সুযোগ সুবিধা আইনসম্মত হলেও সংবিধানসম্মত নয়। অনেক কিছুই আছে সংবিধান ও নৈতিকতার সাথে সাংঘর্ষিক। যে কোনো একজন সংসদ সদস্য এই প্রশ্নের জবাব দিলে কৃতার্থ হবো। সদুত্তর পেলে বিনীতভাবে প্রশ্নগুলো প্রত্যাহার করব।