শরণখোলা (বাগেরহাট): অবরোধ শেষ হওয়ার পাঁচদিন পরও বাগেরহাটের শরণখোলার বলেশ্বর নদের ৯০ ভাগ ইলিশের পেটেই ডিম পাওয়া যাচ্ছে। জেলেরা জাল ফেললেই ধরা পড়ছে বড় বড় ডিমওয়ালা ইলিশ। যেনো পেট ফেটে ডিম বেরিয়ে যাবে এমন অবস্থা মাছগুলোর।
উপজেলা সদর রায়েন্দা ও পাঁচরাস্তা মোড় মাছের বাজারে অবরোধ শেষ হওয়ার পর থেকে প্রতিদিন কমপক্ষে আট থেকে দশ মণ ইলিশ বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া অন্যান্য বাজারগুলোতেও একইভাবে উঠছে ইলিশ। এসব ইলিশ বলেশ্বর ও ভোলা নদীতে জেলেদের জালে ধরা পড়ছে। দামও ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রয়েছে।
আজ মঙ্গলবার সকালে রায়েন্দা বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, ডিমওয়ালা দেড় কেজি ওজনের একটি ইলিশ এক হাজার টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। ৮০০ গ্রাম থেকে এক কেজি সাইজের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে সাড়ে সাত শ থেকে আট শ টাকা কেজি দরে।
এ সময় আউয়াল জমাদ্দার, মিলন শেখসহ অন্যান্য মাছ ব্যবসায়ীরা জানান, জেলেদের জালে ১০টি ইলিশ ধরা পড়লে তার ৯টির পেটেই ডিম বোঝাই। তাদের মতে অবরোধের সময়টা আরো ১৫ দিন পিছিয়ে দিলে এসব মাছ ডিম ছাড়ার সুযোগ পেত। গভীর সাগর থেকে ডিম ছাড়ার জন্য ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ বলেশ্বরের মিঠা পানিতে উঠে এসে এখন তা জেলেদের জালে আটকা পড়ছে।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ফিশিং ট্রলার মালিক সমিতির সহসভাপতি এম সাইফুল ইসলাম খোকন বলেন, যারা গবেষণা করে ৯ অক্টোবর থেকে ২২ দিন ইলিশের প্রধান প্রজনন মৌসুম নির্ধারণ করেছে তাদের গবেষণা ভুল। কারণ অবরোধের পর যে পরিমাণ মাছের পেটে ডিম পাওয়া যাচ্ছে, তাতে এমনটাই বোঝায়। এটা শুধু বলেশ্বর নদ না, সারা দেশের নদ-নদীতে যে ইলিশ ধরা হচ্ছে তার বেশিরভাগের পেটেই ডিম রয়েছে। তাই গবেষণা করে বর্তমান সময় পরিবর্তন করে প্রজননের সঠিক সময় নির্ধারণ করা না হলে অচিরেই ইলিশ শূন্য হয়ে পড়বে দেশ।
শরণখোলা উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা বিনয় কুমার রায় বলেন, বরোধের পর বিভিন্ন মাছের বাজার ঘুরে মনে হয়েছে অবরোধ এখনো শেষ হয়নি। সমস্ত ইলিশের পেটেই ডিম দেখা গেছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।
মৎস্য বিশেষজ্ঞ ও বাগেরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ড. মো. খালেদ কনকের মতে, জিএসআই ও গোনাড হিস্টোলজির ওপর ভিত্তি করে মাছের প্রজননকাল নির্ধারণ করা হয়। বাংলাদেশে ঘন ঘন আবহাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে ইলিশের গতি-প্রকৃতি এবং জীবনাচরণেও পরিবর্তন এসেছে। যে কারণে কয়েক বছর আগের এই গবেষণা কোনো কাজে আসছে না।
এ ব্যাপারে নতুন করে গবেষণার মাধ্যমে অবরোধের সময়টা আরো ১৫ থেকে ২১ দিন পিছিয়ে অথবা বর্তমান সময়ের সাথে আরো সাত থেকে দশ দিন বাড়িয়ে দিয়ে ইলিশ প্রজননের সঠিক সময় নির্ধারণ করা উচিৎ।