২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে ফাঁকা মাঠে গোল দেওয়া হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার ড. এ টি এম শামসুল হুদা। তিনি বলেন, নির্বাচন বয়কট করে কখনো কোনো রাজনৈতিক দল লাভবান হয়নি। দেশে এখন গণতন্ত্রের নামে নির্বাচিত অটোক্রেসি চলছে। যখন যে দলই ক্ষমতায় থাকুন না কেন বিরোধী দল সরকারকে সাহায্য করেনি। তাই দেশে গণতন্ত্র ভালোভাবে চলতে পারে না। রাজধানীর ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্সে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন)-এর পঞ্চম জাতীয় সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও সুজন সভাপতি এম হাফিজউদ্দিন খানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সম্মেলনে আরও বক্তব্য রাখেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. আকবর আলি খান, এ এস এম শাহজাহান, সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার আবু হেনা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর এমাজউদ্দিন আহমেদ, সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদার, ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মাহবুবুর রহমান, গণস্বাস্থ্যের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, সাংবাদিক-কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ, ইনাম আহমেদ চৌধুরী, অধ্যাপক আসিফ নজরুল, প্রকৌশলী মুসবাহ আলীম, ব্যারিস্টার জোতির্ময় বড়–য়া, অধ্যাপক নাজমা হাসিন, রোবায়েত ফেরদৌস, ড. জালাল উদ্দিন প্রমুখ। সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার সাংগঠনিক প্রতিবেদন ও জাতীয় সনদ পাঠ করেন।
এ টি এম শামসুল হুদা আরও বলেন, যারা নির্বাচন বয়কট করেছিল তাদের উচিত ছিল নির্বাচন কমিশনে নিয়োগপ্রাপ্তরা যোগ্য কি-না। তারা কোন ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে এসেছে এসব বিষয়ে আলোচনা করা। কিন্তু তারা সেটা করেনি। ফলে দেশে নির্বাচন হয়ে গেছে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে এখন চলছে নির্বাচনী গণতন্ত্র। পাঁচ বছর পর নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতার পরিবর্তন। এর ফলে সংসদ কার্যকর হয় না। ড. হুদা বলেন, পাকিস্তানকে আমরা ব্যর্থ রাষ্ট্র বলি। অথচ তাদের নির্বাচন কমিশনসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানগুলো ভালো চলছে। বর্তমানে আমাদের দেশে অথনৈতিক উন্নয়ন হচ্ছে, এটা ভালো সংবাদ। কিন্তু বর্তমানে একটি নাগরিক সনদও নিতে ঘুষ দেওয়া লাগে। তার মানে প্রতিটি স্তরে দুর্নীতি, এমনকি গ্রামাঞ্চলেও দুর্নীতি ছড়িয়ে পড়েছে। তাই এখন আমাদের ভাবতে হবে কীভাবে দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে পারি। দেশের চলমান রাজনৈতিক সংকট সমাধানে গণভোট অনুষ্ঠানের পরামর্শ দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. আকবর আলি খান বলেন, গণতন্ত্র ছাড়া উন্নয়ন হয় না। গণতন্ত্র ও উন্নয়নের মধ্যে কোনো বৈপরীত্য নেই। কিন্তু দেশে এখন গণতন্ত্রের জন্য আকুতি চলছে। সরকার বদল হচ্ছে, কিন্তু গণতন্ত্র দুর্বল হচ্ছে। এর কারণ হলো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো সঠিকভাবে কাজ করছে না। আমাদের সংসদ দুর্বল, নির্বাচনী ব্যবস্থা দুর্বল। আমরা সুশাসন থেকে অনেক দূরে চলে যাচ্ছি। তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা ভোটারদের বিষয় উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, ভোটাররা যদি বলে এটা প্রয়োজন- আমরা মেনে নেব। গণভোটের ব্যবস্থা থাকলে হরতালের প্রয়োজন হতো না। এম হাফিজ উদ্দিন খান বলেন, দেশে বর্তমানে দলীয়করণ চলছে। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পরমত সহিষ্ণুতা নেই। গাজীপুরের ব্যাপারে এটা আমরা দেখতে পেয়েছি। বর্তমানে দেশে আইন আছে, শাসন আছে, কিন্তু সুশাসন নেই। আবু হেনা বলেন, আজকে জনপ্রশাসনে অবক্ষয়ের কথা শুনি। আজকে দুর্নীতি বেড়েছে। আমরা তো এ রকম সমাজ ভাবিনি। বাংলাদেশের মানুষ সেই সমাজ চায়, যে সমাজে দুর্বৃত্তায়িত রাজনীতি থাকবে না। এ থেকে মুক্তি দরকার। ড. এমাজ উদ্দিন বলেন, গণতান্ত্রিক উন্নয়ন না হলে সুশাসন নিশ্চিত হয় না। মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যই সুশাসন প্রয়োজন। এ জন্য প্রথমেই প্রয়োজন গণতন্ত্র। ইনাম আহমেদ চৌধুরী বলেন, ‘দেশে আইন আছে, শাসন আছে, কিন্তু সুশাসন নেই। বৈরী রাজনৈতিক আবহাওয়ার মধ্যেও সুজন যে মঙ্গল জ্বালিয়ে রেখেছে তা একদিন সমাজে সুশাসনের আলো জ্বালাবে। মাহবুবুর রহমান বলেন, বর্তমানে সব কথা মেপে বলতে হয়। অর্থাৎ রাজনৈতিক বৈরী পরিবেশ। আশা করি, সুজন এ বৈরী পরিবেশের মধ্যেও সুশাসনের পথকে এগিয়ে নেবে। অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, ‘অনেক সংগঠনই তাদের কার্যক্রম চালান কারা ক্ষমতায় সে অবস্থা বুঝে। কিন্তু সুজন এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। যারাই ক্ষমতায় থাকুন না কেন, যেখানেই কুশাসন, সেখানেই সোচ্চার সুজন। সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার রাজনৈতিক সংকটের টেকসই সমাধানের লক্ষ্যে ‘জাতীয় সনদ’ উপস্থাপন করে বলেন, বিরাজমান সংকট নিরসনে তিনটি ক্ষেত্রে জাতীয় ঐকমত্য সৃষ্টি হওয়া প্রয়োজন। প্রথমত, নির্বাচনকালীন সরকার সম্পর্কে একটি ঐকমত্য। দ্বিতীয়ত, নির্বাচনকালীন ব্যবস্থা নিয়ে ঐকমত্য। যাতে নির্বাচন সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য হয়। ঐকমত্যের তৃতীয় ক্ষেত্রটি হতে হবে পরবর্তী সরকারের জন্য করণীয় সম্পর্কে।