ঢাকা: একাত্তরের গেরিলা যোদ্ধা সাদেক হোসেন খোকা। দেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে একটি উজ্জ্বল নক্ষত্রের নাম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানের ছাত্র থাকাবস্থাতেই যোগ দেন মুক্তিযুদ্ধে। তৎকালীন এই ছাত্র নেতা কসবা-মন্দভাগ, মির্জাপুর সীমান্ত
এলাকার সাব সেক্টরে কয়েকটি সম্মুখযুদ্ধে অংশ নেন। ট্রেনিং শেষে একটি গেরিলা গ্রুপের কমান্ডার হিসাবে ঢাকায় আসেন সাদেক হোসেন খোকা। ঢাকায় অনেকগুলো সফল অপারশেনের নেতৃত্ব দেন এই সাহসী গেরিলা যোদ্ধা। পরবর্তীতে রাজনীতিতে আসা এই যোদ্ধা মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি অপরিসীম দরদ দেখিয়েছেন। ঢাকার মেয়র থাকার সময় মুক্তিযোদ্ধাদের নামে ঢাকার অনেক সড়কের নামকরণ করেছেন।
দলমত নির্বিশেষে মুক্তিযোদ্ধা খোকা বিপুল মানুষের প্রিয় নাম। তার প্রয়াণে শোক প্রকাশ করেছেন তার সহযোদ্ধা থেকে শুরু করে বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ। খোকাকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধারা। সাবেক মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ নেতা মুক্তিযোদ্ধা মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া স্মৃতিচারণ করে বলেন, খোকা একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। দুই নম্বর সেক্টরে আমরা একসঙ্গে যুদ্ধ করেছি। রাজনৈতিকভাবে আমরা দু’জন দুটি দল করি। কিন্তু আমাদের মধ্যে ভালো বন্ধুতা ছিলো। সাদেক হোসেন খোকার দেশে ফেরার আকাঙ্খা ও তার লাশ দেশে সমাহিত করা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম বলেন, এ প্রসঙ্গে আমি কিছুই বলতে চাই না। আমি বলবো মহান আল্লাহ তাকে বেহেশত নসীব করুন। সাদেক হোসেন খোকার প্রয়াণ দেশে হলো না, এটা অত্যন্ত দুঃখজনক জানিয়ে তারই সহযোদ্ধা শহীদুল্লাহ খান বাদল বলেন, সাদেক হোসেন খোকা অত্যন্ত সাহসী যোদ্ধা ছিলেন। আমরা একসঙ্গেই যুদ্ধ করেছি। দুই নম্বর সেক্টরে বিগ্রেডিয়ার খালেদ মোশাররফ ও কাজল হায়দারের অধীনে ছিলাম। পরবর্তীতে ঢাকার মেয়র হয়ে খোকা একটা প্রশংসনীয় উদ্যোগ নিয়েছেন। খেতাবপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নামে বিভিন্ন সড়কের নামকরণ করেছেন। এটাও আমাদের সঙ্গে পরামর্শ করেই করেছেন। কিন্তু দুঃখজনক হলো খোকার প্রয়াণ দেশে হলো না। শুনেছি, দেশে আসার জন্য খোকা ছটফট করেছিলেন। নিউইয়র্কে চিকিৎসার জন্য যান সাদেক হোসেন খোকা। ২০১৭ সালে তার পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে যায়। নিউ ইয়র্কের বাংলাদেশ কনস্যুলেটে পাসপোর্ট নবায়ন’র জন্য আবেদন করেন। কিন্তু আর পাসপোর্ট জুটেনি। পাসপোর্ট জুটেনি বলেই তার আর দেশে ফেরা হয়নি। এই বিষয়টি অত্যন্ত দুঃখজনক মন্তব্য করে মুক্তিযোদ্ধা শহীদুল্লাহ খান বাদল বলেন, পাসপোর্ট যে কোনো নাগরিকের অধিকার। কিন্তু কেন এটা হলো বুঝতে পারছি না। অনেক সময় আমাদের দেশে পাত্রের চেয়ে ঢাকনা বেশি বড় হয়। অতি উৎসাহীরা এটি করতে পারে।
সাদেক হোসেন খোকার রাজনীতি সম্পর্কে শহীদুল্লাহ খান বাদল বলেন, ছাত্র জীবনে খোকা মওলানা ভাসানীর অনুসারী ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি বিএনপি’র রাজনীতি করেন। এটা তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। নব্বইয়ের দশকে আমরা অনেকেই খোকার সঙ্গে স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে মাঠে নেমেছি। গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা সাদেক হোসেন খোকা সম্পর্কে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে একাত্তরের গেরিলা, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু বলেন, সাদেক হোসেন খোকা একজন মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৭১ সালে তিনি সরাসরি রণাঙ্গনে যুদ্ধ করেছিলেন। তিনি ঢাকা শহরে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন। ইতিহাসের বড় সত্য এটাই। যে যাই বলুক না কেনো, এই সত্য অবশ্যই আমাদের স্বীকার করতে হবে। মুক্তিযোদ্ধা নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু বলেন, আমি, মায়া, খোকা আমরা যে কয়জন নেতৃস্থানীয় ছিলাম, তাদের সঙ্গে প্রথমে যোগাযোগ হয়েছে। আগরতলার মেলাঘরে যোগাযোগ হয়েছে। আমরা ছিলাম ক্র্যাক প্লাটুনের গেরিলা। খোকা ক্র্যাক প্লাটুনের গেরিলা না হলেও ঢাকার অপারেশনে অংশ নিয়েছিলেন। মুক্তিযোদ্ধা সাদেক হোসেন খোকার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার খোকার প্রতি আমার গভীর শ্রদ্ধা। মুক্তিযুদ্ধের সময় আমাদের যোগাযোগ ছিলো। ওই সময়ে আমাদের দেখা হয়েছে। পরবর্তী পর্যায়ে আদর্শিক রাজনীতিতে আমার সঙ্গে তার দ্বিমত ছিলো। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তাদের যোগাযোগ ছিলো।