জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ উপজেলার সীমান্ত ঘেষা মাখনেরচর ও কুমারের চর নামক দু’টি গ্রামের মানুষ গত তিন দিন থেকে ঘরবাড়ি ছেড়ে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছে। ভারতের গাড়ো পাহাড় থেকে নেমে আসা একটি বন্য হাতির দল প্রতিরাতে সীমান্ত অতিক্রম করে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ওই গ্রাম দু’টিতে তান্ডব চালাচ্ছে। এতে বসতবাড়ি, বোরো ক্ষেতের সেচযন্ত্র, বীজতলা, সরিষা, গম ও আখখেত তছনছ করছে। গত বৃহষ্পতিবার রাত থেকে শনিবার পর্যন্ত প্রতিরাতেই হাতির দল নামছে এবং বসতঘরে হামলা করছে। হাতির ভয়ে ওই দুই গ্রামের প্রায় ৫ হাজার মানুষ রাতে বাড়ি ছেড়ে নিরাপদ রাতযাপন করছে। রাত হলে গ্রামের মানুষ ঢোলবাজনা ও আগুন জ্বালিয়ে পাহাড়া দিচ্ছে। সরেজমিনে মানুষের সঙ্গে কথা বলে ওইসব তথ্য জানা গেছে।
আজ রবিবার সরেজমিনে মাখনেরচর ও কুমারের চর গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে মানুষের চোখেমুখে আতংকের ছাপ। মাখনের চর গ্রামের তায়েব আলী জানান, ৩দিনে ২০টি বাড়িঘরে হামলা করে তছনছ করেছে ওই হাতির দল। এছাড়াও বোরো ক্ষেতের বীজতলা এব ক্ষেতে বসানো ৮সেচযন্ত্র উপড়ে ফেলেছে। হাতির পদভারে তছনছ হয়েছে সরিষা নষ্ট করেছে আখ ক্ষেতও। প্রতিবছর এই সময়ে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের কালুরঘাট পাহাড়ি এলাকা থেকে ২০/২৫টির মতো এক হাতির দল সন্ধায় সীমান্ত অতিক্রম করছে সারারাত অবস্থান করে ভোররাতে আবার তা চলে যায়।
দেওয়ানগঞ্জের ডাংধরা ইউনিয়নের অধিনে ওই গ্রাম দু’টির মানুষ এখন আতংকে অবস্থান করছে। ওই ইউনিয়নের ওয়ার্ড মেম্বার লুৎফর রহমান জানান, ভারত বাংলাদেশ সীমান্তের আন্তর্জাতিক মেইন পিলার ১০৭৪ ও ১০৭৫ এর মাঝামাঝি দিয়ে যখন হাতির দল সীমান্ত অতিক্রম করে তখন ভারতের সীমান্ত রক্ষীবাহিনী বিএসফ তাদের কাঁটাতারের গেট খুলে দেয়। আর এ কারনে সহজেই হাতি বাংলাদেশের লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে। ওই ইউপি সদস্যের দেওয়া তথ্যে জানা গেছে, এরই মধ্যে প্রায় একশ’ একর গম ক্ষেত, দুইশ’ একর সরিষাসহ বীজতলা ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে পড়েছে। কয়েক বছর আগে একই ভাবে ওই হাতির আক্রমনে মাখনের চর গ্রামের দুই ভাই মারা গেছে। বর্তমান যে পরিস্থিতি বিরাজ করছে তাতে ভারত থেকে নেমে আসা ওই হাতির দলকে প্রতিহত করা না গেলে সীমান্তের কৃষক ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়বে।
কুমারের চরের বাসিন্দা খোরশেদ আলম, জানিক উদ্দিন, সাইদুর রহমান, কিসমত আলী, আবদুল খালেক জানান, এখন রাতে বাড়িতে থাকতে পারছে না মানুষজন। ডাংধরা ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুর রশীদ ফটিক জানান, ভারতীয় হাতির তান্ডবে বাংলাদেশি দুই গ্রামের ক্ষয়ক্ষতি ও মানুষের হুমকির বিষয় উপজেলা ও জেলা প্রশাসনকে অবহিত করা হয়েছে। বিষয় বর্ডার গার্ড বিজিবি জামালপুর ব্যাটালিয়নে অবহিত করা আছে।
দেওয়ানগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আমিনুল হক জানান, বিষয়টি আমাদের জানা আছে। এজন্য সীমান্ত ঘেষা দুই গ্রামের মানুষের সর্তক থাকতে বলা হয়েছে। বিজিবি জোয়ান ও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মেম্বারদের বলা গ্রামবাসিকে সহযোগিতা করতে নির্দেশ দেওয়া আছে। এ ব্যাপারে কী ব্যবস্থা নেওয়া যায় তা জেলা প্রশাসকের সঙ্গে আলোচনা চলছে।