ঢাকা: যারা দুষ্কর্মে জড়িত তাদের তওবা করে ভালো হয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, অপরাধীদের কেউ রক্ষা পাবেন না।
শুক্রবার দুপুরে বাগেরহাটের শেখ হেলাল উদ্দিন স্টেডিয়ামে সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত ঘোষণার বর্ষপূর্তি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানের আয়োজন করে র্যাব।
মন্ত্রী বলেন, ‘সুন্দরবনকে নিরাপদ রাখা হবে। এতে দস্যুতা করতে দেয়া হবে না। দস্যুতা করার চেষ্টা করলে কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।’
পর্যটক এবং সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল পেশাজীবীদের জন্য এক সময় এ বন ভয়ংকর ছিল জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এখন সুন্দরবন জলদস্যু ও বনদস্যু মুক্ত হয়েছে। আত্মসমর্পণ করা সাবেক দস্যুরা এখন স্বাভাবিক জীবনযাপন করছেন। সুন্দরবন এখন সবার জন্য নিরাপদ স্থান। হাজার হাজার পর্যটক সুন্দরবনে নিরাপদে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। ভয়ভীতি ছাড়া পেশাজীবীরা সুন্দরবনে কাজ করছেন।’
২০১৮ সালের ১ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুন্দরবনকে দস্যুমুক্ত ঘোষণা করেন।
কিন্তু এখনো যারা বনে হুমকি ও ঝুঁকি তৈরি করছেন তাদের ভয়ংকর পরিণতি হবে জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘যে যা-ই করেন না কেন আমাদের কাছে সবার খোঁজখবর আছে। একে একে সবাইকে চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমরা কাউকে ছাড় দেব না। যেকোনো মূল্যে সুন্দরবনকে নিরাপদ রাখব, এটাই আমাদের প্রতিজ্ঞা।’
‘যারা দস্যুদের উৎসহ দেন এবং দুষ্কর্ম করেন তারা এসব ত্যাগ করে তওবা করে ভালো মানুষ হয়ে যান। নতুবা রক্ষা পাবেন না। আইনের মুখোমুখি হতে হবে,’ যোগ করেন তিনি।
মন্ত্রী জানান, আত্মসমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা দস্যুদের নামে যেসব মামলা আছে তার মধ্যে খুন ও ধর্ষণ ছাড়া বাকি মামলাগুলো একের পর এক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শেষ করা হবে।
অনুষ্ঠানে অপারেশন সুন্দরবন নামে নির্মানাধীন চলচ্চিত্রের লোগো উন্মোচন করেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। সেই সাথে দস্যুতা জীবনের ওপর নাটক এবং বাউল গান পরিবেশন করা হয়।
দস্যুদমনে ভূমিকা রাখায় র্যাব ও পুলিশ এবং দুজন গণমাধ্যমকর্মীর হাতে ক্রেস্ট তুলে দেয়া হয়।
র্যাব জানিয়েছে, এ বাহিনী প্রতিষ্ঠার পর থেকে সুন্দরবনে এখন পর্যন্ত ২৪৬টি সফল অভিযান পরিচালনা করে ৫৮৬ জন জলদস্যু-বনদস্যুকে আটক করা হয়েছে। সেই সাথে এক হাজার ৭৮০টি আগ্নেয়াস্ত্র এবং ৪১ হাজার ৯৫৫ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে সুন্দরবনে র্যাবের অভিযানে গোলাগুলিতে নিহত হয়েছেন ১৬৩ জন জলদস্যু-বনদস্যু।
এ সময়ে র্যাব ৯টি জীবিত রয়েল বেঙ্গল টাইগারের শাবক, ২৩টি রয়েল বেঙ্গল টাইগারের চামড়া, ২৯টি জীবিত হরিণ, ১২৯টি হরিণের চামড়া এবং বিভিন্ন প্রজাতির পশুপাখি উদ্ধার করে।
সুন্দরবনের দস্যু দমনের লক্ষ্যে ২০১২ সালে র্যাবের মহাপরিচালককে প্রধান সমন্বয়কারী করে র্যাব, পুলিশ, কোস্টগার্ড, বিজিবি ও বন বিভাগের সমন্বয়ে টাস্কফোর্স গঠন করা হয়।
র্যাবের দেয়া তথ্যমতে, ২০১৬ সালের ৩১ মে থেকে ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর পর্যন্ত সুন্দরবনের ৩২টি বাহিনীর প্রধানসহ ৩২৮ জন জলদস্যু আত্মসমর্পণ করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছেন। এ সময় তারা ৪৬২টি আগ্নেয়াস্ত্র এবং ২২ হাজার ৫০৪ রাউন্ড গোলাবারুদ জমা দেন। সূত্র : ইউএনবি