ঢাকা:সহকারী প্রধান শিক্ষক পদ হচ্ছে ১২তম গ্রেডে
বেতনবৈষম্য নিরসনের দাবিতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা আন্দোলনে আছেন। প্রধান শিক্ষকদের জন্য দশম গ্রেড এবং সহকারী শিক্ষকদের জন্য ১১তম গ্রেডের দাবিতে আন্দোলন করছেন তাঁরা। আগামী ১৩ নভেম্বরের মধ্যে দাবি মানার সুনির্দিষ্ট আশ্বাস না পেলে প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) পরীক্ষা বর্জন করার হুমকিও দিয়েছেন শিক্ষকরা। ১৭ নভেম্বর থেকে শুরু হয়ে পিইসি পরীক্ষা চলবে ২৪ নভেম্বর পর্যন্ত। এতে অংশ নেবে প্রায় ৩০ লাখ শিশু।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, প্রধান শিক্ষকদের দশম গ্রেড এবং সহকারী শিক্ষকদের ১১তম গ্রেডের দাবি তাদের পক্ষে এখনই পূরণ করা সম্ভব নয়। এর আগে প্রধান শিক্ষকদের জন্য দশম গ্রেড এবং সহকারী শিক্ষকদের জন্য ১২তম গ্রেডের প্রস্তাব করা হয়েছিল অর্থ মন্ত্রণালয়ে; কিন্তু সেই প্রস্তাবে সম্মতি মেলেনি। তাই অর্থ মন্ত্রণালয়ে নতুন প্রস্তাব পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
জানা যায়, প্রাথমিকের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকরা এখন বেতন পাচ্ছেন ১১তম গ্রেডে। আর প্রশিক্ষণবিহীন প্রধান শিক্ষকরা পাচ্ছেন ১২তম গ্রেডে। তবে মন্ত্রণালয় দুই গ্রেডকে এক করে এখন প্রধান শিক্ষকদের বেতন শুধু ১১তম গ্রেডে উন্নীত করার প্রস্তাব দিচ্ছে। অন্যদিকে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষকরা এখন বেতন পাচ্ছেন ১৪তম গ্রেডে আর প্রশিক্ষণবিহীন সহকারী শিক্ষকরা পাচ্ছেন ১৫তম গ্রেডে। মন্ত্রণালয় তাদের জন্য একটি বেতন গ্রেড ১৩তম দেওয়ার প্রস্তাব করছে।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব মো. আকরাম-আল-হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘শিক্ষকদের ব্যাপারে আমরা সব সময়ই আন্তরিক। তাঁদের সঙ্গে আলোচনার জন্য প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তবে মাঠ পর্যায় থেকে যে তথ্য পেয়েছি, তাতে সব শিক্ষক এই আন্দোলনের সঙ্গে নেই। তাই সমাপনী পরীক্ষা বর্জনের হুমকিকে আমরা হুমকি মনে করছি না।’
সচিব বলেন, ‘প্রধান শিক্ষকদের জন্য দশম এবং সহকারী শিক্ষকদের জন্য ১২তম গ্রেডের প্রস্তাব আমরা এর আগে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছিলাম; কিন্তু তাতে সম্মতি পাওয়া যায়নি। কারণ এখন উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তারা দশম গ্রেড পান। তাহলে তাঁদের কী হবে? তবে আমরা এখনো অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা অব্যাহত রেখেছি। সেই অনুসারে, প্রধান শিক্ষকদের জন্য ১১তম ও সহকারী শিক্ষকদের জন্য ১৩তম গ্রেডের প্রস্তাব পাঠানো হবে।’
আকরাম-আল-হোসেন আরো বলেন, ‘সহকারী প্রধান শিক্ষকের পদ সৃষ্টির বিষয়টি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে আছে। আশা করছি, শিগগির তা পাস হবে। তাহলে তারা ১২তম গ্রেড পাবেন। আর এই পদটি হবে শতভাগ পদোন্নতিযোগ্য। সহকারী শিক্ষকরাই এই পদে পদোন্নতি পাবেন। এতে নতুন করে প্রায় ৬৬ হাজার সহকারী শিক্ষকের পদও শূন্য হবে। সেখানেও শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হবে।’
জানা যায়, সরকারি প্রাথমিকের প্রধান শিক্ষক পদ দ্বিতীয় শ্রেণিতে উন্নীত হওয়ায় তাঁরা দশম গ্রেডে বেতন পেতে হাইকোর্টে রিট আবেদন করেছিলেন। আদালত শিক্ষকদের পক্ষে রায় দিয়েছেন।
মন্ত্রণালয় বলছে, আদালতের আদেশ তারা মানতে বাধ্য। তবে এই রায়ের বিষয়ে আপিল করা হবে। এরপর আদালতের রায় অনুযায়ীই বেতন কাঠামো বাস্তবায়ন করা হবে।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষায় কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য একটি নিয়োগ বিধিমালা এবং শিক্ষকদের জন্য আরেকটি নিয়োগ বিধিমালা আছে। তবে দুটি বিধিমালা এক করে একটি বিধিমালা তৈরি করার কাজও করছে মন্ত্রণালয়। এতে শিক্ষকদের উচ্চপদে যাওয়ার সুযোগ রাখা হচ্ছে।
মন্ত্রণালয়ের যুক্তি হচ্ছে, প্রধান শিক্ষকদের দশম গ্রেড দেওয়ার রায় আদালতের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে আসতে আরো সময় লাগবে। এর মধ্যে দুই বিধিমালা ভেঙে একটি বিধিমালা করার কাজ শেষ হয়ে যাবে। নতুন বিধিমালায় উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের জন্য নবম গ্রেড রাখা হচ্ছে। আর প্রধান শিক্ষকদের দশম গ্রেড, সহকারী প্রধান শিক্ষকদের ১১তম গ্রেড এবং সহকারী শিক্ষকদের জন্য ১২তম গ্রেড রাখা হচ্ছে। ফলে আদালতের চূড়ান্ত রায় হতে হতে শিক্ষকদের বেতন গ্রেড উন্নীতকরণ নিয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়কেও আর বাধার মুখে পড়তে হবে না।
তবে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নানা যুক্তির মধ্যেও আন্দোলন চালিয়ে যেতে বদ্ধপরিকর প্রাথমিক শিক্ষকরা। বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক ঐক্য পরিষদের প্রধান উপদেষ্টা আনোয়ারুল হক তোতা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বেতনবৈষম্য নিরসনের দাবিতে ২৩ নভেম্বর আমরা ঢাকায় শান্তিপূর্ণ মহাসমাবেশ করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আমাদের শুধু বাধাই দেওয়া হয়নি, পুলিশ লাঠিচার্জও করেছে। ফলে আমরা কঠোর কর্মসূচিতে যেতে বাধ্য হয়েছি।’
ঐক্য পরিষদের সদস্যসচিব মোহাম্মদ শামছুদ্দীন মাসুদ বলেন, ‘মন্ত্রণালয় এখন যে প্রচেষ্টা চালাচ্ছে, তাতে আমরা একমত নই। আমাদের দাবি, প্রধান শিক্ষকদের দশম গ্রেড ও সহকারী শিক্ষকদের ১১তম গ্রেড। এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট ঘোষণা না আসা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।’