ঢাকা: দেশে দুর্নীতিবিরোধী অভিযান শুরুর পর গ্রেপ্তার এড়াতে সরকারি দলের কোনো কোনো নেতা আত্মগোপন করেছেন সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ডে। দেশ থেকে প্রথমে তাঁরা সিঙ্গাপুরে যান। পরে সেখান থেকে থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ায় পাড়ি জমাচ্ছেন। এই নেতারা সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ডে কী পরিমাণ সম্পদ গড়েছেন সে তথ্য অনুসন্ধানে মাঠে নেমেছেন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। একটি সূত্রের দাবি, কয়েকজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা বর্তমানে সিঙ্গাপুরে অবস্থান করছেন।
অন্যদিকে যুবলীগের বহিষ্কৃত নেতা ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটের সিঙ্গাপুরে দুটি ফ্ল্যাট থাকার তথ্য মিলেছে। বিলাসবহুল ওই দুটি ফ্ল্যাটের মালিক হিসেবে প্রচার রয়েছে রাজা ও মুন্নী নামের দুজনের। কিন্তু প্রকৃত মালিক সম্রাট। সিঙ্গাপুরে প্রবাসী বাংলাদেশিদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
গেণ্ডারিয়া থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি এনামুল হক এনু ও তাঁর ভাই একই থানা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক রুপন ভূঁইয়া ক্যাসিনোবিরোধী অভিযান শুরুর পর সিঙ্গাপুরে পালিয়ে যান। পরে তাঁরা সেখান থেকে চলে যান থাইল্যান্ডে। জানা গেছে, দেশের মতো তাঁদেরও বিদেশে বিপুল সম্পদ রয়েছে। এ ছাড়া দেশের কোন কোন নেতা দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত বিপুল টাকা সিঙ্গাপুরে জমা করেছেন, গোয়েন্দা কর্মকর্তারা সিঙ্গাপুরে অবস্থান করে তারও সন্ধান করছেন।
সিঙ্গাপুরে প্রবাসী বাংলাদেশিদের কাছ থেকে জানা যায়, ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের আগে গ্রেপ্তার সম্রাট ও সেলিম প্রধানকে সিঙ্গাপুরের সিটি স্কয়ার মলে আড্ডা দিতে দেখা যেত। সেখানে তাঁদের সঙ্গে দেখা যেত ওয়ার্ড কাউন্সিলর মমিনুল হক সাইদকেও। সম্রাট ও সেলিম গ্রেপ্তার হওয়ার পর সাইদকে আর সিঙ্গাপুরে দেখা যাচ্ছে না।
খোঁজ নিয়ে আরো জানা গেছে, সিঙ্গাপুরের ক্যাসিনোতে বাংলাদেশিদের বিশেষ সম্মান দেওয়া হয়। ওই দেশের লোকদের এন্ট্রি ফি দিয়ে প্রবেশ করতে হলেও বাংলাদেশিদের তা লাগে না। সহজেই ক্যাসিনোর সদস্য হতে পারেন বাংলাদেশিরা। এসব ক্যাসিনোতে জুয়া খেলে সিঙ্গাপুরে নাম কামিয়েছেন সম্রাট। তাঁর জন্য বরাদ্দ ছিল সিঙ্গাপুরের ঐতিহ্যবাহী মেরিনা বে এলাকার একটি হোটেলের পুরো একটি তলা, যেখানে এক বান্ধবীকে নিয়ে থাকতেন সম্রাট।
সিঙ্গাপুরে সম্রাটের জুয়া খেলার বিষয়ে খোঁজ নিতে গিয়ে জানা গেছে, সম্রাট সিঙ্গাপুরের ক্যাসিনোতে জুয়া খেলার জন্য বিশেষ সম্মান পেতেন। সিঙ্গাপুরে ৫৭ তলা মেরিনা বে সেন্ট (এমবিএস) হোটেলের নবম তলা বরাদ্দ ছিল সম্রাটের জন্য। প্রায়ই তিনি সিঙ্গাপুরে গিয়ে সেখানে বান্ধবীকে নিয়ে থাকতেন। এমবিএস হোটেলটি এমনভাবে নির্মাণ করা, যেটির ওপরের দিক দেখতে জাহাজের মতো। এ কারণে বাংলাদেশিদের কাছে সেটি জাহাজ ভবন নামে পরিচিত। আর এই ভবনের উল্টো পাশের ছয়তলা মেরিনা বে ক্যাসিনোতে কোটি কোটি টাকার জুয়া খেলতেন সম্রাট। এই ভবনের তিনতলায় ছিল সম্রাটের বিশ্রাম কক্ষ।
মেরিনা বে ক্যাসিনোতে গেছেন এমন লোকের কাছ থেকে জানা গেছে, মেরিনা বে এলাকায় ছয়তলা ভবনের নিচতলা থেকে তৃতীয় তলা পর্যন্ত ক্যাসিনো রয়েছে। সেখানে রয়েছে শতাধিক ক্যাসিনো খেলার বোর্ড। ভিআইপি জুয়াড়িরা দ্বিতীয় তলার ক্যাসিনোতে খেলেন। সম্রাটের বসদেরও ওই তলায় খেলতে দেখেছেন বলে কালের কণ্ঠকে টেলিফোনে জানিয়েছেন সিঙ্গাপুরে অবস্থান করা রাজশাহীর আকরাম হোসেন।
মেরিনা বে ক্যাসিনোটি অত্যন্ত চাকচিক্যপূর্ণ। রয়েছে কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা। ক্যাসিনো বোর্ডের প্রতিটি টেবিলে রোবট ঘুরে ঘুরে জুয়াড়িদের চা, কফি ও জুস পরিবেশন করে। বিদেশিদের জন্য ক্যাসিনোটি সংরক্ষিত। সম্রাট ছিলেন এই ক্যাসিনোর পাইজা মেম্বার। জানা যায়, এই সদস্য পদ পেতে ১০ লাখ ডলার খরচ করেন সম্রাট।
সিঙ্গাপুরে অবস্থান করা চট্টগ্রামের আলী আকবর জানান, সিঙ্গাপুরে শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন এমন ব্যক্তিরাও যান ক্যাসিনোতে। তাঁদের অনেকে জুয়া খেলে নিঃস্ব হয়েছেন। ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট একমাত্র বাংলাদেশি, যিনি ওই ক্যাসিনোতে পাইজা প্রিমিয়াম, পাইজা প্লাটিনাম ধাপ পেরিয়ে অর্জন করেছিলেন পাইজা চেয়ারম্যান খেতাব। এ কারণে তৃতীয় তলায় তাঁর জন্য বিশ্রামের আলাদা কক্ষ বরাদ্দ রয়েছে বলে জানিয়েছেন সিঙ্গাপুরে অবস্থান করা আরেক বাংলাদেশি মুন্সীগঞ্জের জামসেদ আহমেদ।