শতাব্দী আলম: ২০১৮’র ছাত্রলীগ সম্মেলনের ভাষণে শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘‘মনে রাখতে হবে, ছাত্র রাজনীতি আমরা করব। কিন্তু শিক্ষা গ্রহণ করাটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় এবং সবার আগের কাজ।’’
এই উপদেশ বাণী কোন নির্দ্দিষ্ট দল বা গোষ্ঠির জন্য উচ্চারিত না। তিনি বলেছেন সর্বস্তরের ছাত্র সমাজের উদ্দেশ্যে। যদি নেতাকর্মীরা এই উপদেশ মেনে চলতো তাহলে আজকের শুদ্ধি অভিযানের দরকার পরতো না।
অন্য এক ভাষণে বলেছিলেন, ‘‘ছাত্রলীগ দেশ ও জাতির কল্যাণে কাজ করবে। ছাত্রলীগের কাছে আমার একটিই চাওয়া। তাহলো, শুধুমাত্র ভালো কর্মী নয়, নিজেদের শিক্ষিত হিসাবে গড়ে তোলো, ভালো মানুষ হিসাবে গড়ে তোলো। সততা ও যোগ্যতার উপর ভিত্তি করে পথ চললে কোন বাধাই তোমাদের পথ রুদ্ধ করতে পারবেনা।’’
সততা এবং যোগ্যতাকে কোন বাধাই প্রতিহত করতে পারে না। অসৎ পন্থা এবং অবৈধ অর্থ সাময়িকভাবে মরিচিকার মত কলরব তুলে। তৃণমুলের কর্মীরা অনেকক্ষেত্রে তাদের প্রিয় নেতার আসল চরিত্র বুঝেই না। তারা না জেনে বুঝেই আমার ভাই তুমার ভাই স্লোগান দেয়। এমন শুদ্ধি অভিযানে খুব সহজেই ওইসব অসৎ ব্যক্তিরা ধুলিস্যাৎ হয়। যখন নেতার আসল চরিত্র তৃণমূল নেতাকর্মীদের উন্মোচন হয়, তখন তারা কতই না আফসোস করে। হায়! এতকাল এই চরিত্রহীন দুষ্টু লোকটার পেছনে ছিলাম।
কখনো কখনো বিশেষ অনুগ্রহে শুদ্ধি অভিযান থেকে রেহাই পেলেও উপরওয়ালার বিচারে ঠিকই শাস্তি ভোগ করে। আমরা কি সেইসব নেতাকে চিনি না যাদের সন্তান অবৈধ অর্থে কেনা গাড়ির ভিতরে আগুনে জ¦লে পুরে মরে, গাজীপুর এক বিএনপি নেতার একমাত্র সন্তান ভবনের ছাদ থেকে লাফিয়ে আত্মহত্যা করেছে। ভুরি ভুরি উদাহরণ আমাদের চোখের সামনেই দেখতে পাচ্ছি।
শেখ হাসিনা আরও বলেছেন, ‘‘জাতির পিতার ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ পরলে তোমরা জানতে পারবে তার একাগ্রতা, নিষ্ঠা, দেশপ্রেম আর সততার কথা। শুধু পরলেই হবেনা, বঙ্গবন্ধুর জীবনী থেকে শিক্ষা নিয়ে নিজেদের আগামী দিনের যোগ্য নেতৃত্ব হিসাবে গড়ে তুলতে হবে।’’
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুযোগ পেলেই নেতাকর্মীদের উপদেশ দেন। জনসভার ভাষণে স্বভাবসুলভ উপদেশ বানী কিছু না কিছু থাকেই। কখনো কখনো ঘরোয়া সভায়ও গুরুত্বপূর্ণ উপদেশ দেন। তাঁর রাজনৈতিক উপদেশ এবং দূরদর্শীতাই বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাফল্যের মূলমন্ত্র।
তিনি যা বলেন বা দিক নির্দেশনা দেন তা বাস্তবায়নে দলের নিবেদিত প্রাণ নেতাকর্মীরা ঝাপিয়ে পরে। যা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব থেকে ধাপে ধাপে তৃণমুল কর্মীর দ্বারা সাধারন মানুষের কানে পৌছে। দলটির দীর্ঘ পরিক্রমায় দেখা গেছে ত্যাগী নিবেদিত প্রাণ নেতাকর্মীদের পাল্লাই ভারি।
নেতাদের মধ্যে একটি সুবিধাবাদী শ্রেনী মাথাচাড়া দিয়েছে। তারা শেখ হাসিনার উপদেশ শুনেন। কিন্তু মানেন না। তাদের উদ্দেশ্য পরিস্কার। যে কোনভাবে লুটপাট। রাজনীতি হচ্ছে ঢাল। অবৈধ অর্থ, বেশুমার ধন দৌলত, ভূমি দখলবাজী, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজী, নারী লিপ্সা, জুয়া, মদ, মাদক কোন কিছুই বাদ যায় না। কখনো এসবে জড়িত হয়ে অঢেল অর্থ বিত্তের মালিক হচ্ছে। আবার কখনো কখনো পূর্বের সরকারের আমলে উপার্জিত অর্থ ও অবৈধ সাম্রাজ্য রক্ষা করতে ক্ষমতাসীন দলের আশ্রয় নিয়েছে।
বর্তমান বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটা প্রচলিত কথা আছে। শেখ হাসিনা ছাড়া বাকী সবাইকে টাকা দিয়ে ম্যানেজ করা সম্ভব। হতেও পারে। না হলে স¤্রাট, বদি, শাওন, শামসুল হক, মোল্লা কাউছার, কাউন্সিলর- সাইদ, রাজিব, মিজান গংরা খোদ রাজধানীতে বসেই নিজেদের সাম্রাজ্য বিস্তার করার সাহস পেতো না। এমন রবিনহুড টাইপ নেতা দেশে আরও আছে। তাদের অনেকে দেদারছে টাকা বিলিয়ে দলের গুরত্বপূর্ণ এমপি, মেয়র, মন্ত্রীত্ব পেয়ে গেছে। চেয়ার পেলে বছর না ঘুরতেই দেখা যায় তারা শত কোটি টাকার মালিক। আলিশান বাড়ি, গাড়ি, ধনদৌলত করেই ক্ষান্ত হয় না। আবার টিভি, পত্রিকার মালিকও হয়। স্থানীয় গোয়েন্দা সংস্থা, দলের বড় ভাই ম্যানেজ রেখেছে। আর টাকা ছড়ালে মিছিলের লোকতো পাওয়াই যায়। এই সব দুষ্টু নেতাদের চিহ্নিত করার সময় এসেছে।
শেখ হাসিনা হাসিমুখে যেমন উপদেশ দিতে জানেন। আবার বিপথগামীদের আইনের আওতায় এনে কারাগারেও পাঠাতে পারেন। এমন শুদ্ধি অভিযানের মাধ্যমে তিনি বার বার তা প্রমাণ করেছেন। প্রশাসনের ভিতরে অভিযান আরও আগেই শুরু হয়েছে। সাবেক স্বাস্থ্য সচিব এম এম নিয়াজ উদ্দিন, এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী ওয়াহিদুর রহমান কেউ ছাড় পাননি। এখনো অনেক দূর্ণীতিবিদ আমলা দুদুকে নিয়মিত হাজিরা দেন।
সভা সমাবেশ ছাড়াও প্রতিনিয়তই শেখ হাসিনা শুদ্ধ রাজনীতির উপদেশ বানী উচ্চারণ করেন। এসব উপদেশ বানী কেবল তাঁর নিজ দলের নেতাকর্মীদের জন্যই না সব দল মতের জন্যই শুদ্ধ রাজনীতির পাঠ হিসাবে পরিগণিত হতে পারে।
শেখ হাসিনার আদেশ-উপদেশ মেনে চলা নেতৃবৃন্দ দেশের সবস্তরেই সমাদৃত প্রশংসিত। তৃণমূল থেকে শীর্ষ নেতৃত্বে অধিকাংশই ত্যাগী এবং পোড়খাওয়া। অনেককেই পাওয়া যাবে, যারা উচ্চ শিক্ষতি হয়েও চাকুরী বা ব্যবসাও করে না। দলের কর্মকান্ডে ব্যস্ত থাকে। তাদের সংসার চলে স্ত্রী বা সন্তানের উপার্জনে। সেইসব ত্যাগীদের মূল্যায়ন অতিতেও হয়েছে। এখন আরও বেশী বেশী হবে।
তিনি বঙ্গবন্ধু কন্যা। গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী। সব কিছু ছাপিয়ে বর্তমান বিশ^ রাজনীতিতে শেখ হাসিনা বহুল উচ্চারিত নাম। তাঁর রাজনৈতিক দর্শণ এবং মানবিকতার চর্চা দেশের গ-ি পেরিয়ে সারা বিশে^ প্রশংসিত চর্চিত হয়।
বাংলাদেশী হিসাবে ‘হুজুগে বাঙালি’ বলে আমাদের বদনাম। কথাটা একেবারে মিথ্যা না। কারন হুজুগে পরেই রবিনহুড টাইপের নেতাদের পিছনে আমরা হুমড়ি খাই। তার অতিত বর্তমান বা আয়ের উৎসের কথা কেহই জানতে চাই না। গালভরা কথায় সব ভুলে থাকি। বঙ্গবন্ধু কণ্যা শেখ হাসিনা চলমান শুদ্ধি অভিযানের মাধ্যমে শুধু যে অপরাধীদের শাস্তি দিচ্ছেন। তা নয়। সাধারণ মানুষকেও সচেতন হতে হবে।
এক ভাষণে শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘‘আমার জীবনের লক্ষ্য একটিই, বাংলার মানুষের উন্নয়ন। ক্ষুধামুক্ত, দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ। সাধারণ মানুষের ভাগ্য যেদিন গড়তে পারব, সেদিনই নিজেকে সফল মনে করব।’’
হে জনতা আসুন প্রতিজ্ঞা করি, এমন রবিনহুড নেতাদের পেছনে আর যাব না। দেশের নাগরিক হিসাবে ভালকে গ্রহন এবং মন্দকে বর্জন আমাদের দায়িত্ব। সরকার প্রধান হিসাবে শেখ হাসিনা যতই শুদ্ধি অভিযান করুন না কেন! যতদিন সাধারণ মানুষ সচেতন না হবে ততদিন পরিবর্তন সম্ভব না।
শেষ করবো মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের বর্জন ঘটনা লিখে। প্রথম আলোসহ গণমাধ্যমে বেশ ভাইরাল ঘটনা। তিনি নিলফামারীতে মুক্তিযুদ্ধাদের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির আসনে বসা। সেখানে একজন জামাত সমর্থক বা নেতা বক্তব্য রাখতে শুরু করেন। মন্ত্রী তৎক্ষণাত অনুষ্ঠান বর্জন করে মঞ্চ ত্যাগ করেন। আসুন আমরা এভাবে বর্জন করি। আমাদের অভিভাবক হিসাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপদেশ মেনে চলার চেষ্টা করি।
লেখক ঃ সাংবাদিক ও সাহিত্যিক
২৬/১০/২০১৯