ঢাকা: আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘আমাদের নেত্রী (প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা) কী কঠোর, শুদ্ধি অভিযানে তা তিনি প্রমাণ করেছেন।’
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভার পর সাংবাদিকদের সামনে ওবায়দুল কাদের এসব কথা বলেন। বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এ সভা হয়।
কাদের বলেন, দীর্ঘদিন পর একটি শুদ্ধি অভিযান শুরু হয়েছে। কারও স্বার্থে আঘাত লাগতে পারে, কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে চলা শুদ্ধি অভিযান সারা দেশ ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রশংসিত হচ্ছে। শেখ হাসিনার সৎসাহস আছে। দলের কেউ অপকর্ম করলে তাঁকে শাস্তি পেতে হবে।
গত সেপ্টেম্বর থেকে ক্যাসিনোবিরোধী অভিযানের মাধ্যমে শাসক দল আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোর মধ্যে শুদ্ধি অভিযান শুরু হয়। ইতিমধ্যে সহযোগী সংগঠনগুলোর একাধিক নেতাকে অবৈধ ক্যাসিনো ব্যবসায় জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নানা বিতর্কে দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন আওয়ামী যুবলীগের সভাপতি ওমর ফারুক চৌধুরী, স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মোল্লা মো. আবু কাওছার। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক পংকজ নাথকে সম্মেলন কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়।
দলীয় সূত্রে জানা যায়, আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই নির্দেশ দিয়েছেন।
আজ পংকজ নাথের বিষয়ে জানতে চাইলে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদককে নিয়ে কোনো অভিযোগের বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারছি না। তবে তাঁকে কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এটা নেত্রীর নির্দেশ। সহযোগী সংগঠনের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি সম্মেলনের কাজ করবে।’
দলীয় এই শুদ্ধি অভিযানের মধ্যেই আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ ও শ্রমিক লীগের সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা হয়েছে। আগামী নভেম্বর ও ডিসেম্বর মাসে এসব সম্মেলন হবে।
আজ দলীয় সম্মেলন নিয়ে কাদের বলেন, ‘জাতীয় কাউন্সিল আসছে। সম্মেলন মানেই কিছু নতুন মুখ আসবে। কাউকে আমরা রিটায়ারমেন্ট দিই না, দায়িত্বে পরিবর্তন হয়। শক্তিশালী দল ছাড়া শক্তিশালী সরকার হয় না। দলকে শক্তিশালী করতে নিয়মিত সম্মেলন দরকার।’
দলীয় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ, আপনারা সম্মেলনের প্রস্তুতি নিন। আমরা তারিখ পরে জানাব। সিটি করপোরেশন নির্বাচন এগিয়ে আসছে। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে আলাপ–আলোচনা করে, সম্ভাব্য তারিখ জেনে আমরা সম্মেলনের তারিখ জানব। প্রার্থী বিষয়ে নেত্রী সিদ্ধান্ত নেবেন।’
সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘মনোনয়ন বোর্ড বসবে। নেত্রী সিদ্ধান্ত দেবেন কারা মেয়র প্রার্থী হবেন। তবে একক কাউন্সিলর প্রার্থী নিয়ে আপনারা আলাপ–আলোচনা করুন, সিদ্ধান্ত নিন। পানি ছাড়া যেমন মাছ বাঁচতে পারে না, তেমনি জনগণ ছাড়াও আওয়ামী লীগ বাঁচতে পারবে না। জনগণকে আমাদের সঙ্গে রাখতে হবে।’
ওবায়দুল কাদের বলেন, ‘দেশে সীমাহীন উন্নয়ন হয়েছে, কিন্তু দলীয় পরিচয়ে দু-একজন মাস্তানের জন্য আমাদের কাজ যেন ম্লান হয়ে না যায়। বসন্তের কোকিলদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। আওয়ামী লীগ জোর করে ক্ষমতা রাখার পার্টি নয়। জনগণের ইচ্ছার বাইরে ক্ষমতায় থাকার কোনো ইচ্ছা আমাদের নেই।’
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪–দলীয় জোটের শরিক বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেননের বক্তব্য নিয়ে বেশ আলোচনা চলছে। গত শনিবার বরিশাল নগরের অশ্বিনীকুমার টাউন হলে ওয়ার্কার্স পার্টির বরিশাল জেলা শাখার সম্মেলনে রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মানুষ ভোটকেন্দ্রে যায়নি। এর বড় সাক্ষী আমি নিজেই। আজ মানুষ তাদের ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত।’
আজ মেননের নাম না নিয়ে কাদের বলেন, ‘মাঝে মাঝে নিজেদের অ্যালায়েন্সের কেউ কেউ উল্টাপাল্টা কথা বলেন। সরকারকে দুর্বল ভাববেন না। সততার ভিত্তির ওপর, জনগণের ইচ্ছার ওপর নেত্রী দাঁড়িয়ে আছেন।’