মস্তিস্কে রক্তক্ষরণ: অভিনেতা ‘ঊন-মানুষ’ হুমায়ূন সাধু মারা গেছেন

Slider জাতীয় বিনোদন ও মিডিয়া লাইফস্টাইল


ঢাকা: প্রকৃতির খেয়ালে তাঁর শরীরে স্বাভাবিক গড়ন ছিল না। তুলনামূলকভাবে খর্বাকার ছিলেন। এতে অবশ্য থেমে থাকেনি জয়যাত্রা। কোনো বাধাবিপত্তি তিনি আমলে নেননি কখনো। জীবনের টানে বাড়ি ছেড়ে ঢাকায় কিছুদিন কাটান রেলস্টেশনে, বাসস্টেশনে। ঠিকানাবিহীন জীবনে এক সময় ঠিক ঠিক নিজের জায়গা করেন নেন, নির্মাতা ও অভিনেতা হয়ে, লেখালেখি করে। গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে থেমে গেল আলোচিত ‘ঊন-মানুষ’ নাটকের সেই অদম্য মানুষটির জীবনযাত্রা। নির্মাতা ও অভিনেতা হুমায়ূন সাধু মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।

গতকাল দিবাগত রাত দেড়টার দিকে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে হুমায়ূন সাধু শেষনিশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর মৃত্যুর খবরটি জানিয়েছেন নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। তিনি বলেন, ‘সাধুকে তিন দিন ধরে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছিল। অবশেষে সে জীবনযুদ্ধে হেরে আমাদের ছেড়ে চলে গেল।’ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তিনি লিখেছেন, ‘তুই সময় দিছিলি আমাদের তৈরি হওয়ার। আমরা হয়তো তৈরিও হইছিলাম। কিন্তু মানুষ বোধ হয় কখনোই প্রিয়জনের বিদায়ের জন্য তৈরি হইতে পারে না রে, সাধু!’

ফারুকী জানিয়েছেন, আজ বাদ জুমা রাজধানীর তেজগাঁওয়ের রহিম মেটাল জামে মসজিদে অনুষ্ঠিত হবে হুমায়ূন সাধুর জানাজা। রহিম মেটাল জামে মসজিদের কবরস্থানে তাঁর দাফন সম্পন্ন হবে।

মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ‘ঊন-মানুষ’ টেলিছবিতে অভিনয় করেছেন হুমায়ূন সাধু। একজন বামন মানুষকে হেয় করা, তাঁকে নিয়ে সবার তিরস্কার, সমাজে টিকে থাকার কঠিন বাস্তবতা, তাঁর আশা, আকাঙ্ক্ষা—এসব নিয়েই গল্প লিখেছেন হুমায়ূন সাধু। সেখান থেকে চিত্রনাট্য লিখেছেন ও পরিচালনা করেছেন মোস্তফা সরয়ার ফারুকী। ওই সময় টেলিছবিটি দারুণ প্রশংসিত হয়। আলোচিত হয় হুমায়ূন সাধুর অভিনয়। হুমায়ূন সাধু এভাবেই নিজের অভিনয় দিয়ে সবার মন জয় করেছেন।

নয় ভাইবোনের মধ্যে হুমায়ুন সাধু সপ্তম। চট্টগ্রামে তাঁর জন্ম ও বেড়ে ওঠা। ২০০১ সালে নিজের তাগিদেই বাড়ি ছেড়ে ঢাকায় চলে আসেন সাধু। একপর্যায়ে কাজ শুরু করেন নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর সহকারী পরিচালক হিসেবে। একই সঙ্গে লেখালেখি করতে থাকেন।

মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ চলচ্চিত্রে প্রথম অভিনয় করেন হুমায়ূন সাধু। এরপর অসংখ্য নাটক, টেলিছবি, চলচ্চিত্র ও বিজ্ঞাপনচিত্রে অভিনয় করেছেন। কাহিনি ও চিত্রনাট্য লেখার পাশাপাশি তিনি পরিচালনা করেছেন। এবার বাংলা একাডেমির অমর একুশে গ্রন্থমেলায় হুমায়ূন সাধুর লেখা একটি বই বেরিয়েছে। বইটির নাম ‘ননাই’।

হাসিখুশি মানুষটার শিল্পজীবন বেশ চলছিল। কিন্তু ২ অক্টোবর তাঁর পরিবারের মানুষজন জানতে পারেন, হুমায়ূন সাধু অসুস্থ। ঢাকায় যেখানে তিনি শুটিং করছিলেন, সেখানেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁর বড় বোন চট্টগ্রামে থাকেন। তিনি ভাইকে সেখানে নিয়ে যান। ৫ অক্টোবর হুমায়ূন সাধুকে চট্টগ্রাম শহরের পার্ক ভিউ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তখন চিকিৎসকেরা জানান, তাঁর রক্তে ইনফেকশন ধরা পড়েছে। শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় ১৩ অক্টোবর হুমায়ূন সাধুকে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়। তাঁকে রাজধানীর বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জানা যায়, তাঁর মস্তিষ্কে স্ট্রোক হয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে তাঁর মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচার করতে হবে। কিন্তু পরিবারের লোকজন চিকিৎসার জন্য ভারতে নিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি হিসেবে সম্প্রতি তাঁকে বাসায় নিয়ে যান। পরে গত রোববার রাতে শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হওয়ায় হুমায়ূন সাধুকে দ্রুত রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে নেওয়া হয়। চিকিৎসকেরা তাঁকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) ভর্তি করেন। সেখানে নেওয়ার পর জানা যায়, হুমায়ূন সাধুর মস্তিষ্কে আবারও স্ট্রোক হয়েছে। তাঁকে লাইফ সাপোর্ট দেওয়া হয়। সেখান থেকে আর ফেরা হয়নি তাঁর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *