ঢাকা: নতুন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির দীর্ঘ কাঙ্ক্ষিত ঘোষণা দেওয়া হবে আজ বুধবার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে দুপুর ১২টায় এই ঘোষণা দেবেন। গতকাল মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে এমপিওভুক্তি বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এই তথ্য জানান শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। একই সঙ্গে নন-এমপিও শিক্ষকদের অনশন কর্মসূচি প্রত্যাহার করে ক্লাসে ফিরে যাওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
শিক্ষামন্ত্রীর আহ্বানে সাড়া দিয়ে শিক্ষকরা গতরাতে অনশন কর্মসূচি স্থগিত করেন।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা যায়, এবার দুই হাজার ৭৩০টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হচ্ছে। সেগুলোর মধ্যে স্কুল ও কলেজের সংখ্যা এক হাজার ৬৫১,মাদরাসার সংখ্যা ৫৫৭ এবং কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৫২২। সম্পূর্ণ নতুন স্কুল-কলেজ এমপিওভুক্ত হচ্ছে ৬৮০টি এবং নতুন স্তর এমপিওভুক্ত হচ্ছে এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৯৭১। নতুন এমপিওভুক্তির মধ্যে নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৪৩৯টি, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ১৪৬টি, স্কুল অ্যান্ড কলেজ দুটি এবং কলেজ ৯৩টি। আর স্তর এমপিওভুক্ত হয়েছে এমন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৮৪৯টি, স্কুল অ্যান্ড কলেজ ৬৬টি এবং কলেজ ৫৬টি।
সূত্র মতে, নতুন এমপিওভুক্ত দাখিল মাদরাসার সংখ্যা ৩৫৯, নতুন স্তর এমপিওভুক্ত হচ্ছে এমন প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আলিম ১২৭টি, ফাজিল ৪২টি ও কামিল ২৯টি। কারিগরির সব প্রতিষ্ঠানই নতুন এমপিওভুক্ত হচ্ছে। এর মধ্যে কৃষি ৬২টি, ভোকেশনাল স্বতন্ত্র ৪৮টি, ভোকেশনাল সংযুক্ত ১২৯টি, বিএম স্বতন্ত্র ১৭৫টি এবং বিএম সংযুক্ত ১০৮টি প্রতিষ্ঠান।
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেন, ‘আমরা শুরুতে জুন মাসের মধ্যে এমপিওভুক্তির তালিকা সম্পূর্ণ করতে চেয়েছিলাম। নীতিমালা অনুযায়ী মানদণ্ডের ওপর ভিত্তি করে তালিকা করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানগুলোর দেওয়া তথ্য ক্রস চেক করা হয়েছে। তালিকাটি প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ে পাঠানোর পরও কিছু যাচাই-বাছাইয়ের জন্য আবারও পাঠানো হয়েছে। সব সঠিকতা যাচাই করেই এমপিওভুক্তির ফাইলে প্রধানমন্ত্রী স্বাক্ষর করেছেন। সর্বশেষ যত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হয়েছিল এবার সংখ্যায় তা প্রায় দ্বিগুণ। তবে একটু দেরি হলেও গত জুলাই মাস থেকেই এই এমপিওভুক্তি কার্যকর হবে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘যোগ্য নির্বাচিত প্রতিটি প্রতিষ্ঠানই এমপিওভুক্ত করা হয়েছে। তবে কিছু উপজেলা রয়েছে, যেখান থেকে কোনো আবেদনই পাওয়া যায়নি। আবার নারীশিক্ষা, পাহাড়ি অঞ্চলসহ অনগ্রসর এলাকা বিবেচনা করে নীতিমালা অনুযায়ী কিছু প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হয়েছে। খুবই কম উপজেলা আছে যেখান থেকে প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত হয়নি। তবে এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানকে মান ধরে রাখতে হবে। সেটা না পারলে এমপিও স্থগিত করা হবে।’
দীপু মনি আরো বলেন, ‘নন-এমপিও শিক্ষকদের সঙ্গে আমি বৈঠকে বসেছিলাম। তাঁদের প্রথম দাবি ছিল, স্বীকৃতিপ্রাপ্ত সব প্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা। কিন্তু আমরা নীতিমালার বাইরে কাউকে এমপিও দিতে রাজি নই। তবে এই এমপিওভুক্তি চলমান থাকবে। এরপর যদি নীতিমালায় কোনো সমস্যা থাকে, পরিবর্তন আনতে হয় সেটা আমরা করব বলে জানিয়েছি। আর যারা এবার যোগ্য হয়নি, তারা আগামীতে নিজেকে যোগ্য প্রমাণ করে এমপিওভুক্তি নেবে। তবে আমি শিক্ষকদের বলব, তাঁরা রাজপথে থাকলে শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তারা যোগ্যতা অর্জনে পিছিয়ে পড়বেন। তাঁরা যেন ক্লাসে ফিরে যান।’
তবে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘শিক্ষকরা যে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে চান, তা আমি জানিয়েছি। আগামী মাসের কোনো এক সময় তাঁদের সঙ্গে সাক্ষাত করিয়ে দেওয়ার চেষ্টা আমি করব।’
জানা যায়, সর্বশেষ ২০১০ সালে এক হাজার ৬২৪টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত করা হয়েছিল। এর পর থেকে শিক্ষকরা এমপিওভুক্তির জন্য আন্দোলন করে আসছেন। এমনকি সংসদ সদস্যরাও এমপিওভুক্তির জন্য জাতীয় সংসদে একাধিবার বলেছেন। গত বছরের জুন মাসে এমপিও নীতিমালা জারি করার পর শিক্ষা মন্ত্রণালয় এমপিওভুক্তির জন্য দুটি কমিটি গঠন করে। অনলাইনে আবেদন নেওয়ার পর তা যাচাই-বাছাইয়ে দীর্ঘ সময় লাগে। তবে চলতি অর্থবছরের বাজেটে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্তির জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে জানানো হয়।
মতবিনিময়সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. সোহরাব হোসাইন, কারিগরি ও মাদরাসা বিভাগের সচিব মুনশী শাহাবুদ্দীন আহমেদ প্রমুখ।