রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি: ছিনতাইকারীর হাতে মারধরে গুরুতর আহত হয়েছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী। এ ঘটনার পর পরই ছিনতাইকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
পরে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে গেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সহকারী প্রক্টরকে লাঞ্ছিত করেন দুই শিক্ষার্থী। বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ৮টার দিকে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটলে সাড়ে ১০টার দিকে বিক্ষোভ শুরু করেন শিক্ষার্থীরা।
ছিনতাইকারীদের মারধরে আহত শিক্ষার্থী ফিরোজ অর্থনীতি বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। সে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের ৮ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন।
ক্যাম্পাস সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ৮টার দিকে নোটপত্র ফটোকপি করার জন্য বান্ধবীকে সঙ্গে নিয়ে স্টেডিয়াম মার্কেটে যাচ্ছিলেন ফিরোজ। পথিমধ্যে কয়েকজন যুবক তাদের পথরোধ করে ফিরোজের বান্ধবীর হাতে থাকা ফোন ছিনিয়ে নিয়ে শহীদ হবিবুর রহমান হলের মাঠের দিকে হাঁটতে শুরু করে। ফিরোজ তাদের পিছু ধাওয়া করে।
একটু সামনে যেতেই ছিনতাইকারীরা ফিরোজকে ধরে উপর্যুপরি মারধর করতে শুরু করে। ছিনতাইকারীদের হাতুড়ির আঘাতে ফিরোজের মাথা ফেটে যায়। এ সময় পালিয়ে যায় ছিনতাইকারীরা। পরে রক্তাক্ত অবস্থায় ফিরোজকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়া হয়।
ফিরোজকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষার্থী আবির জানান, চিৎকার শুনে তিনি ঘটনাস্থলে যান এবং রক্তাক্ত অবস্থায় ফিরোজকে দেখতে পান। পরে তিনি রিকশায় করে রাবির চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়ে আসেন। সেখান থেকে ফিরোজকে রামেক হাসপাতালে পাঠানো হয়।
এদিকে, এ ঘটনার পরপরই রাত সাড়ে ১০টার দিকে শিক্ষার্থীরা মহাসড়কে বিক্ষোভ শুরু করেন। তারা ছিনতাইকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবিতে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। এ সময় রাবির সহকারী প্রক্টর হুমায়ুন কবীর আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে উচ্চ বাক্যে কথা বলেন। এতে উত্তেজিত হয়ে পড়ে আন্দোলনকারীরা।
একপর্যায়ে এস আর কে রাজ ও কিশোর কুমার নামের দুই শিক্ষার্থী হুমায়ুন কবীরের গায়ে হাত তোলেন। এস আর কে রাজ রাবি ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। সে রাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনুর অনুসারী। কিশোর ইতিহাস বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী।
তবে রাজ হুমায়ুন কবীরকে মারতে নয় বরং বাঁচাতে গিয়ে হোঁচট খেয়েছেন বলে দাবি করেন। ঘটনাস্থলে থাকা প্রক্টর, সহকারী প্রক্টর ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক সদস্য প্রক্টরকে লাঞ্ছিতের বিষয়টির প্রত্যক্ষদর্শী।
হুমায়ুন কবীরকে লাঞ্ছিত করায় পাশেই দাঁড়িয়ে থাকা ডিবি পুলিশের কয়েকজন প্রক্টরের গায়ে হাত দিয়েছিস বলতে বলতে জোরপূর্বক কিশোরকে তুলে নিয়ে যায় বলে জানান আন্দোলনকারীরা। যদিও তখন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং ডিবি তাকে তুলে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে।
নগরীর মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাফিজুর রহমান জানান, ডিবি কাউকে তুলে নিয়ে গেছে এ বিষয়ে কিছু জানেন না তিনি।
মতিহার জোনের উপ-পুলিশ কমিশনার জয়নাল আবেদীন ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ছিনতাইকারীদের গ্রেপ্তার করবেন বলে আন্দোলনকারীদের আশ্বাস দেন। তিনি বলেন, ‘আমরা তিনজনকে ইতিমধ্যেই শনাক্ত করেছি। তদন্তের জন্য নাম প্রকাশ করছি না।’ আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হবে বলেও জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।
জয়নাল আবেদীনের কথায় কর্ণপাত না করে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে যেতে থাকেন। ক্রমেই আন্দোলন জোরদার হয়। পরে কিশোর কুমার ফিরে আসলে আন্দোলন স্থগিত করা হয়।
প্রক্টর অধ্যাপক লুৎফর রহমান বলেন, কিশোর নামের একজনকে তুলে নিয়ে গেছে বলে শুনেছি। তবে সে ফিরে এসেছে। আর আমরা ছিনতাইকারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত আইনি ব্যবস্থা নিতে পুলিশ প্রশাসনকে পদক্ষেপ নিতে বলব।