ঢাকা: সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত আবরার হত্যার প্রতিবাদ চলবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন আ স ম আব্দুর রবসহ ডাকসুর সাবেক নেতারা। বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক মানববন্ধনে নেতারা এই ঘোষণা করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদ- ডাকসু’র সাবেক নেতৃবৃন্দের উদ্যোগে বুয়েট ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যার প্রতিবাদে এই মানববন্ধন হয়।
ঐক্যফ্রন্টের নেতা ও জেএসডি সভাপতি আ স ম আব্দুর রব মানববন্ধনে অংশ নিয়ে বলেন, প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবরার ফাহাদ হলো প্রতিবাদের পতাকা। মুক্তিযুদ্ধের পতাকা যেমন ছিলো, আবরারও প্রতিবাদের পতাকা হয়ে আমাদের কাছে থাকবে। আবরারের রক্ত সমস্ত জাতিকে আজ ঐক্যবদ্ধ করছে। এই রক্তে ঐক্যবদ্ধ যে আন্দোলন গড়ে উঠেছে, তা অব্যাহত রাখতে হবে সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত। বর্তমান সংকট উত্তরনে একটি জাতীয় সরকার গঠনের দাবিও তুলে ধরেন রব।
তিনি বলেন, আমরা স্পষ্ট করেই বলতে চাই, দলমত নির্বিশেষে যারা মুক্তিযুদ্ধে করেছে, সরকারের বিরুদ্ধে যারা আন্দোলন করছেন তাদের সবাইকে নিয়ে একটা জাতীয় ঐক্যমতের একটা জাতীয় সরকার গঠন করা দরকার। যেখানে শুধু রাজনৈতিক দলের নেতারাই থাকবেন না। পেশাজীবীরা থাকবেন, শ্রমজীবী থাকবেন, কর্মজীবী থাকবেন, ডাক্তার- ইঞ্জিনিয়ার-সাংবাদিক-কবি-শিল্পী-সাহিত্যিক-বৃদ্ধিজীবী-ছাত্র-শ্রমিকসহ সমাজের সর্বস্তরের প্রতিনিধিত্ব থাকবে।
রব বলেন, ১৩ অক্টোবর আমাদেরকে আবরারের শোক মিছিল করতে দেন নাই। আমি আশা করি, এই দেশের জনগন এই সরকারের শোক মিছিল করবে, সেটার জন্য প্রস্তুতি গ্রহন করুন। আপনাদের বিচার হবে, আপনাদেরকে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হবে।
আসম আবদুর রব বলেন, আজকে কেউ কেউ ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করতে চান। অপরাধ ছাত্ররাজনীতির নয়, অপরাধ আপনাদের (আওয়ামী লীগ সরকার)। যারা লেজুড় বাহিনী, সন্ত্রাসী বাহিনী, ছাত্র লীগ-যুব লীগদের খুন করার জন্য লাগিয়ে দিয়েছে তাদের।
ডাকসুর সাবেক ভিপি ও নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, বুয়েটে ছাত্র-ছাত্রীরা মিলে সন্ত্রাস ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে শপথ নিয়েছে। আমি তাদের অভিনন্দন জানাই। কিন্তু আমি আরো বেশি অভিনন্দন জানাই ওখানকার শিক্ষক সমিতিকে। কারণ তারা এই শপথ গ্রহন অনুষ্ঠান বর্জন করেছেন। বলেছেন, ওই ভিসি’র (অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম) সাথে শপথ নেবার কোনো যুক্তি নাই। ওই ভিসির কারনে আবরার মারা গেছে।
আবরার হত্যাকান্ডের ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, আবরার হত্যাকান্ড কারা ঘটালো? জবাব এককথায় ছাত্র লীগের পান্ডারা। সেই ছাত্রলীগের ১৯ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজকে আওয়াজ উঠবার কথা ছিলো- এইরকম খুনী একটা ছাত্র সংগঠনকে নিষিদ্ধ করে দেয়া হোক। কিন্তু কৌশলে সরকার এরকম করলেন যে, ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করে দেয়া হোক। মাথা এতো ব্যথা করে মাথাই কেটে ফেলো, কোনো চিকিৎসা দিয়ে মাথাকে সুস্থ করা হবে তার ব্যবস্থা করা হলো না।
তিনি বলেন, যারা যারা ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করার কথা বলে তাদেরকে বলি, ওই সময়ে বুয়েটে যদি ছাত্র দল থাকতো, যদি বামপন্থি ছাত্র সংগঠন থাকতো, অপরাপর ছাত্র সংগঠন থাকতো ওই সময়ে কেউ ওখান থেকে কাউকে ধরে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হতো? মিছিল বেরুতো, প্রতিবাদ হতো। এগারো বছর ধরে এই নরকের মতো অবস্থা কারা তৈরি করেছে? বিএনপি, জেএসডি, নাগরিক ঐক্য নাকী শুধু আওয়ামী লীগ? আজ একথা বলবার সময় হয়েছে, যে সরকার নিজে ছাত্রদের হত্যা করে ওই সরকারকে আমরা চাই না।
প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র লীগের গ্রেপ্তারকৃত নেতারা জবানবন্দিতে যেসব ‘বড় ভাই’র কথা বলেছে তাদের নাম প্রকাশের দাবি জানিয়ে মান্না বলেন, একটা খুনের মামলা যখন হয়, যারা খুন করে তারা আসামী হয়। তাদের বিরুদ্ধে বিচার হয়। কিন্তু সবার উপরে থাকে এই খুন বা হত্যার নির্দেশদাতা কে? তাকে বিশেষ আসামী করা হয়। এই মামলাায় সেটা কী হয়েছে? ওই বড় ভাইটা কে? নাম বলেন। ছাত্র লীগের সাংগঠনিক নেতা কে? উনি কি দায় এড়াতে পারবেন?
মান্না বলেন, আগামী ২২ ডিসেম্বর ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশ। ঢাকা মহানগরের যে কোটি কোটি মানুষ আছে, আমাদের ওই কর্মসূচিতে আসুন। আমাদেরকে যদি অনুমতি দেয়া না হয়, বাধা দেয়ার চেষ্টা করা হয় তারপরেও আমরা সেই কর্মসূচি পালন করবো। কারণ আমরা জানি আবরারের মৃত্যু শুধু মৃত্যু নয়। তার মৃত্যু একটা প্রতিবাদ। এই সরকারের ওই গদি ধরেই টানবো এবারে, হঠাৎ করে এই সরকারের গদির পায়া এমনভাবে ভেঙে যাবে যা আর সোজা হয়ে দাঁড়াবার সময় পাবে না।
ডাকসুর সাবেক ভিপি বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান বলেন, এই সরকার মেধাবীদের হত্যা করছে, এই সরকার জনগনের মৌলিক অধিকার হরণ করেছে। আপনারা জানেন, আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আমাদেরকে আবরারের বাড়িতে পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু যেতে দেয়া হয়নি।
তিনি বলেন, এই সরকার সভা-সমাবেশ করতে দিচ্ছে না। তারা তাদের প্রভুদের কথায় চলে। আজকে গণতান্ত্রিক অধিকার ভুলন্ঠিত। যে গণতন্ত্রের জন্যে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন আসম আবদুর রবরা, যে গণতন্ত্রের জন্য নব্বইয়ে আন্দোলন করেছিলাম আমরা সেই গণতন্ত্র আজকে অবরুদ্ধ, মানবাধিকার আজকে ভুলন্ঠিত। এই গণতন্ত্রকে মুক্ত করতে হলে এবং আবরার হত্যার সত্যিকার বিচার করতে হলে জনগনের জান-মালের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করতে হবে।
আসম আবদুর রবের সভাপতিত্বে এই মানববন্ধনে ডাকসুর সাবেক জিএস বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, ডাকসু সাবেক এজিএস বিএনপির নির্বাহী সদস্য নাজিমউদ্দিন আলমসহ সাবেক ছাত্র নেতারা বক্তব্য রাখেন।