সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে অবশেষে না ফেরার দেশেই চলে গেলো শিশু জিহাদ। ওয়াসার গভীর নলকূপের পাইপ থেকে শনিবার বেলা তিনটায় তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক) নিয়ে যাওয়া হয়। বেলা তিনটা ৩৫ মিনিটে তাকে মৃত ঘোষণা করেন ঢামেকের জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক আবাসিক সার্জন ডা. রিয়াজ মোর্শেদ।
২৩ ঘণ্টার রুদ্ধশ্বাস নাটকীয়তার পর শনিবার বেলা তিনটায় শিশু জিহাদকে সংজ্ঞহীন অবস্থায় ওয়াসার গভীর নলকূপের পাইপ থেকে বের করে আনেন স্বেচ্ছাসেবীরা। তবে শিশুটি জীবিত না মৃত তা তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত করা সম্ভব না হয় তাকে সঙ্গে সঙ্গেই প্রেরণ করা হয় ঢামেকে।
এর আগে দুপুর আড়াইটার পর পাইপে শিশু জিহাদের অস্তিত্ব নেই ঘোষণা দিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে উদ্ধার অভিযান স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছিলেন ফায়ার সার্ভিসের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার আহাম্মেদ আলী খান।
এর কিছুক্ষণের মধ্যেই শিশু জিহাদকে পাইপ থেকে বের করে এনে ফায়ার সার্ভিসের হাতে তুলে দেন তিন দুঃসাহসিক স্বেচ্ছাসেবী পাম্প ক্লিনার রহমত, আব্দুল্লাহ আল মুন এবং সুজন দাস। শিশুটিকে উদ্ধারে নিজস্ব বিশেষ ধরনের জাল বা স্ক্যাচার ব্যবহার করেন তারা।
এদিকে শিশুটিকে জিহাদকে উদ্ধারে গাফলতির অভিযোগে স্থানীয় লোকজন বিক্ষোভ করে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েছে। তারা রেলওয়ে কলোনিতে অবস্থিত ওয়াসার স্থাপনায় ভাঙচুর চালায়।
শুক্রবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে শাহজাহানপুরের রেলওয়ে মাঠসংলগ্ন পরিত্যক্ত পানির পাম্পের ৩শ‘ ফুট গভীর পাইপে পড়ে যায় ৪ বছরের শিশু জিহাদ।
এরপরই শুরু হয় ওয়াসা, ফায়ার সার্ভিস সহ বেশ কয়েকটি সরকারি সংস্থার সমন্বয়ে রাতভর রুদ্ধশ্বাস অভিযান। স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী নিজে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে উদ্ধার অভিযান তদারকি করেন।
তবে পাইপের ভেতর অত্যাধুনিক ক্যামেরা প্রবেশ করিয়েও শিশু জিহাদের খোঁজ না পাওয়ার দাবি করেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা। ফায়ার সার্ভিসের সব প্রচেষ্টা নিষ্ফল হলে উদ্ধার অভিযানের দীর্ঘ ২৩ ঘণ্টা পর আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযান স্থগিতের ঘোষণা দেন সংস্থার মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার আহাম্মদ আলী।
এরপরপরই মাঠে নামে স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবীরা। তারা কাজে নামার মাত ১৫ মিনিটের মধ্যেই আসে ফল। বিকেল তিনটার দিকে নিজস্ব স্ক্যাচার দিয়ে শিশু জিহাদকে পাইপের ভেতর থেকে বের করে আনেন রহমত, আব্দুল্লাহ আল মুন ও সুজন দাস নামের এই তিন দুঃসাহসী স্বেচ্ছাসেবী। জিহাদকে উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তাদের হাতে তুলে দেন তারা। সঙ্গে সঙ্গেই জিহাদকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। কিন্তু ততক্ষণে না ফেরার দেশে চলে গেছে শিশু জিহাদ। তিনটা ৩৫ মিনিটে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।