ঢাকা: সার্বিয়া পার্লামেন্টের স্পিকার ও ১৪১তম ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের (আইপিইউ) সম্মেলনের প্রেসিডেন্ট মাজা গজকোভিচ বলেছেন, বাংলাদেশ নারী উন্নয়ন ও নারী ক্ষমতায়নে বিশ্বের কাছে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত। পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে বাংলাদেশ ও সার্বিয়ার মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্ক আরও সুদৃঢ় হতে পারে। গতকাল সংসদ সচিবালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সোমবার সন্ধ্যায় বেলগ্রেডে আইপিইউর ভেন্যু সাভা সেন্টারে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সঙ্গে সাক্ষাৎকালে তিনি একথা বলেন। সাক্ষাৎকালে তারা দ্বিপাক্ষিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়, সংসদীয় চর্চা, সংসদীয় মৈত্রী গ্রুপ, সংসদীয় ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা, টেকসই উন্নয়ন (এসডিজি), জলবায়ুর বিরূপ প্রভাব এবং বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন বিষয়ে আলোচনা করেন। এ সময় বাংলাদেশ সংসদীয় প্রতিনিধিদলের সদস্য ডেপুটি স্পিকার মো. ফজলে রাব্বী মিয়া, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি তোফায়েল আহমেদ, শিল্প মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি আমির হোসেন আমু এবং ইতালিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত আবদুস সোবহান সিকদার উপস্থিত ছিলেন। এর আগে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের সদস্য আবদুস সালাম মূর্শেদী এমপি ১৪১তম আইপিইউ সম্মেলনের ‘দ্য রোল অব পার্লামেন্টেরিয়ানস ইন এনহ্যান্সিং ন্যাশনাল ইমপ্লিমেন্টেশন অব দ্য কেমিক্যাল উইপন্স কনভেনশন’ শীর্ষক সেশনে বক্তব্য রাখেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে সার্বিয়ার সম্পর্ক ঐতিহাসিক। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরপরই যুগোস্লাভিয়া বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়।
১৯৭৩ সালে যুগোস্লাভিয়ায় বঙ্গবন্ধুর সফরই দুই দেশের সম্পর্কের সূচনা ভিত। যুগোস্লাভিয়ার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট মার্শাল টিটোর বাংলাদেশ সফর এ সম্পর্কে নতুন মাত্রা যোগ করে। ড. শিরীন শারমিন বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বাংলাদেশ সামাজিক ও অর্থনৈতিকসহ সকল সূচকে সুদৃঢ় অবস্থানে রয়েছে। বর্তমান সরকার নারী উন্নয়ন ও ক্ষমতায়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেতা, বিরোধী দলের নেতা এবং জাতীয় সংসদের স্পিকারও একজন নারী উল্লেখ করে তিনি বলেন, বাংলাদেশে নারী অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন আজ দৃশ্যমান। নারীর ক্ষমতায়নের ফলে তৃণমূলে উন্নয়ন সেবা সহজেই পৌঁছে যাচ্ছে। এতে ধারাবাহিকভাবে জিডিপি ৮ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করাও সম্ভব হয়েছে।
জলবায়ু তহবিল গঠনে আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়কে ডেপুটি স্পিকারের আহবান: এদিকে সার্বিয়ার বেলগ্রেডে অনুষ্ঠেয় ১৪১তম আইপিইউ সম্মেলনে ইমারজেন্সি আইটেমের উপর বক্তৃতাকালে ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বি মিয়া বলেন, প্যারিস জলবায়ু সম্মেলনকে কেন্দ্র করে জলবায়ুর বিরুপ প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত দেশের জন্য আন্তর্জাতিক তহবিল গঠন করা জরুরি। বাংলাদেশ অভিযোজন ও উপশম খাতে ক্লাইমেট চেঞ্জ ট্রাস্ট ফান্ড (বিসিসিটিএফ)-এ নিজস্ব তহবিল থেকে ৪৫০ মিলিয়ন ইউএস ডলার (৩৮০০ কোটি টাকা) বরাদ্দ দিয়েছে। উন্নত দেশগুলোকে কার্বণ নির্গমণ হ্রাসে নেতৃত্ব দেয়ার জন্য তিনি প্রস্তাব করেন। ডেপুটি স্পিকার বলেন, বাংলাদেশের উপকুলবর্তী ১৯টি জেলায় প্রায় ৩ কোটি মানুষ বসবাস করে। জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জের সঙ্গে এ মানুষগুলো সরাসরি সম্পৃক্ত। যদি সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা ১ মিটার বেড়ে যায় তাহলে ১৫ শতাংশ ভূমি পানির নিচে তলিয়ে যেতে পারে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে উপকুলবর্তী মানুষগুলো উদ্বাস্তুতে পরিণত হতে পারে। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষয়-ক্ষতি রোধ করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বেশকিছু কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। এরই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ ক্লাইমেট চেঞ্জ স্ট্রাটেজি এন্ড অ্যাকশন প্ল্যান (বিসিসিএসএপি) ২০০৯ গঠন করা হয়। পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নেয়ার জন্য সংস্থাটিকে জাতীয় পর্যায়ের সেরা প্রতিষ্ঠান বলা যেতে পারে। ডেপুটি স্পিকার বলেন,আঞ্চলিক এবং সমন্বিত দুই ধরণের পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি কমাতে সংসদ সদস্যরা জোরালো ভুমিকা রাখতে পারে।