ঢাকা:মদ, জুয়া, চাঁদাবাজিসহ সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর পদক্ষেপকে সাধুবাদ জানিয়ে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেছেন, আমি শুনেছি ইটনা মিঠামইন অষ্টগ্রামে ইয়াবা ঢুকে গেছে। সবাইকে লক্ষ্য রাখতে হবে যেন এর বিস্তার আর না ঘটে। তা না হলে সবকিছু ধ্বংস হয়ে যাবে।
আজ সোমবার (১৪ অক্টোবর) বিকেলে কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রামে নাগরিক কমিটি আয়োজিত সুধী সমাবেশে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।
রাষ্ট্রপতি বলেন, হাওরের থানাগুলোতে এক সময় স্কুল-কলেজ ছিল না। আমাকে স্কুল ও কলেজে পড়তে ভৈরব ও কিশোরগঞ্জে থাকতে হয়েছে। তখন ওরা আমাদের ‘উত্তইরা ভূত’ ও ‘ভাইট্যা গাবর’ বলেছে। এখন হাওরের প্রতিটি থানায় এক বা একাধিক স্কুল ও কলেজ প্রতিষ্ঠা করেছি। এখন হাজার হাজার ছাত্রছাত্রী এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করছে। কিন্তু এখান থেকে বেরিয়ে গিয়ে কেউ বিসিএস-এ টিকতে পারছে না’। তিনি হাওরাঞ্চলের শিক্ষার মান নিয়ে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে প্রশ্ন রাখেন, ‘এমন হবে কেন’?
হাওরের অষ্টগ্রাম থেকে মিঠামইন হয়ে ইটনা পর্যন্ত প্রায় ৩০ কিলোমিটার দীর্ঘ অল অয়েদার রোড (‘আবুরা’ বা উঁচু রাস্তা) করার সময় অধিগ্রহণ করা জমির মালিকরা এখনো ক্ষতিপূরণ না পাওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে রাষ্ট্রপতি সমাবেশে বলেন, অধিগ্রহণের সময় জমির বাজার মূল্য থেকে ক্ষতিপূরণ হিসাবে দেড়গুণ দাম দেওয়ার নিয়ম ছিল। এখন সেই ক্ষতিপূরণ বাবদ তিনগুণ মূল্য পরিশোধ করা হয়। সে কারণে হাওরের মানুষ যেন তাদের অধিগ্রহণ করা জমির মূল্য বেশি পায় তা ভেবে দেরিতে ক্ষতিপূরণ পরিশোধ করার ব্যবস্থা করেছি।
রাষ্ট্রপতি বলেন, অষ্টগ্রাম থেকে বাঙ্গালপাড়ার রাস্তা করা হয়েছে। নোয়াগাঁও থেকে চাতলপাড় ব্রিজ হলেই হাওরবাসী খুব সহজেই সড়কপথে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে যেতে পারবে। তবে নদীর ওপর ব্রিজ করার জন্য আন্তর্জাতিক ট্রেন্ডার ইত্যাদির জন্য সময় লাগবে। আপাতত ফেরি দিলেই মানুষ চলাচল করতে পারবে।
রাষ্ট্রপতি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, দেশের অর্থনীতি যেভাবে এগিয়ে চলেছে, এর ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে হাওরে একদিন ফ্লাইওভার হবে। তিনি সকলকে অল অয়েদার রোড ও বিভিন্ন বাঁধের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, হাওরের পরিবেশ নষ্ট করা যাবে না। অল অয়েদার রোড ঘেঁষে ঘরবাড়ি ও স্থাপনা করা যাবে না। হাওরে অপরিকল্পিতভাবে গ্রাম সৃজন করা যাবে না। বাইরের কোনো বড় কোম্পানি যেন হাওরে জায়গাজমি কিনতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
মানুষের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করার আহ্বান জানিয়ে জনপ্রতিনিধিদের উদ্দেশ্যে রাষ্ট্রপতি বলেন, মানুষের সঙ্গে ভাব ধরলে চলবে না। বেটাগিরি দেখানো যাবে না। আমি এমপি থেকে ডেপুটি স্পিকার, বিরোধীদলীয় উপনেতা, স্পিকার থেকে রাষ্ট্রপতি হয়েছি। জনগণই আমাকে এ জায়গায় নিয়ে গেছে। আমি তো কারো সাথে কখনো বেটাগিরি দেখাইনি! তিনি স্পষ্ট ভাষায় বলেন, জনপ্রতিনিধিরা ঠিকাদারি করতে পারবে না। নেতাদের উদ্দেশ্যে বলেন, থানার দালালি বন্ধ করতে হবে।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ সোমবার সমাবেশে কিশোরগঞ্জের হাওরের সকল উপজেলায় স্টেডিয়াম, শিল্পকলা একাডেমি ও মডেল মসজিদ নির্মাণের আশ্বাস দেন। এ ছাড়া অষ্টগ্রামের আব্দুল্লাহপুর ও আদমপুর ইউনিয়নবাসীকে তাঁর ভাষায় ‘মারামারি, কাটাকাটি, খোনাখুনি’ বন্ধের আহ্বান জানিয়ে বলেন, ওইসব এলাকার অন্তত ৫০০ লোক বিদেশে থাকে। এসব করে মামলা-মোকদ্দমার পেছনে টাকা খরচ না করলে ওই এলাকা শহরে রূপান্তরিত হতো।
অষ্টগ্রাম সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় খেলার মাঠে আয়োজিত সুধী সমাবেশে কিশোরগঞ্জ-৫ আসনের এমপি রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক সভাপতিত্ব করেন। অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন কিশোরগঞ্জ-২ আসনের এমপি ও সাবেক আইজিপি নূর মোহাম্মদ, কিশোরগঞ্জ-৫ আসনের এমপি মো. আফজাল হোসেন, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মো. জিল্লুর রহমান, জেলা পরিষদ সদস্য ও মুক্তিযোদ্ধা ফজলুল হক হায়দারি, অষ্টগ্রাম উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শহীদুল ইসলাম, অষ্টগ্রাম সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ মুজতাবা আরিফ খান প্রমুখ।
এ সময় মঞ্চে কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক সারওয়ার মোর্শেদ চৌধুরী, পুলিশ সুপার মাশরুকুর রহমান খালেদ, পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট শাহ আজিজুল হক, জেলা আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সৈয়দ শাহজাহান উপস্থিত ছিলেন।
সোমবার রাতে রাষ্ট্রপতি অষ্টগ্রাম সরকারি ডাকবাংলায় রাত্রিযাপন করবেন। কাল মঙ্গলবার তিনি অল অয়েদার রোড, অষ্টগ্রাম-বাঙ্গালপাড়া রাস্তাসহ চলমান বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিদর্শন করবেন। দুপুরের পর হেলিকপ্টারযোগে তিনি ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবেন।