ঢাকা:গত বছর বাংলাদেশে দেড় লাখের বেশি ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন এক লাখ ৮ হাজার মানুষ। খাদ্যনালী, ফুসফুস ও মুখমন্ডলের ক্যানসারে পুরুষরা আর স্তন ও জরায়ু মুখের ক্যানসারে নারীরা বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। জীবনযাত্রা, পরিবেশ দূষণ, নিরাপদ ও সুষম খাদ্যের অভাব, অনৈতিক জীবনযাপনের কারণে দেশে ক্যানসার ঝুঁকি বাড়ছে। গতকাল আনোয়ার খান মডার্ণ মেডিকেলের অনকোলজি বিভাগের উদ্যোগে জিনজিয়ান রেস্টুরেন্টে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা বিশ্ব ক্যানসার পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের প্রতিবেদন তুলে ধরে একথা বলেন। আনোয়ার খান মডার্ণ মেডিকেলের অনকোলজি বিভাগ প্রতিবারের মতো এবারও অক্টোবর মাসব্যাপী ক্যানসার সচেতনতা মাস উদযাপন উপলক্ষে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। অনুষ্ঠানে হাসপাতালটির ক্লিনিক্যাল অনকোলজি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. মো. এহ্তেশামুল হক লিখিত বক্তব্যে বলেন, ক্যানসার শুধু একটি মরণ ও ঘাতক ব্যাধিই নয়; এটি মানবজাতির জন্য এক ভয়ংকর অভিশাপ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২০১৮ সালের তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, বিশ্বে ক্যানসারে নতুন আক্রান্তদের সংখ্যা এক কোটি ৮১ লাখ।
মারা গেছেন আনুমানিক ৯৬ লাখ মানুষ। যা ২০১৭ সালের তুলনায় বেশি। প্রতি ৫ জনের একজন পুরুষ এবং প্রতি ৬ জনের একজন নারী তাদের জীবনে ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছেন। আক্রান্তদের মধ্যে মারা যাচ্ছেন পুরুষদের ৮ জনে একজন এবং নারীদের ১১ জনে একজন। তিনি আরো বলেন, দেশে ক্যানসারের চিকিৎসা ব্যবস্থা ধীরে ধীরে উন্নত হলেও বিভিন্ন ক্যানসারের ঝুঁকি ও আক্রান্ত বাড়ছে। রোগীরা শেষ পর্যায়ে ক্যানসারের চিকিৎসার জন্য ডাক্তারদের কাছে আসেন, যে অবস্থায় আসেন তখন চিকিৎসা দিয়েও ক্যানসার সম্পূর্ণরূপে নির্মূল করা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সম্ভব হয় না। এর প্রধান কারণ অজ্ঞতা, অসাবধানতা ও কুসংস্কার। ক্যানসার প্রতিরোধে রোগীকে শুরুতে চিকিৎসকের কাছে আসতে হবে। যথা সময়ে ক্যানসার নির্ণয় করতে হবে। নিয়মিত ক্যানসার স্ক্রিনিং-এর বিকল্প নেই। হতে হবে সচেতন। ক্যানসারের কারণগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, জীবনযাত্রা, পরিবেশ দূষণ, নিরাপদ ও সুষম খাদ্যের অভাব, অনৈতিক জীবনযাপনের কারণে ক্যানসার ঝুঁকি বাড়ছে। ডা. মো. এহ্তেশামুল হক প্রশ্নের জবাবে বলেন, বাংলাদেশে ক্যানসার চিকিৎসা ব্যবস্থা অনেক দুর্বল। রোগী বাড়ছে। সংকট তৈরি হচ্ছে। চিকিৎসার কেন্দ্র থাকা দরকার ১৭০টি। কিন্তু আছে মাত্র ১৭টি। এক প্রশ্নের উত্তরে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মোস্তাক হোসেন তুহিন বলেন, ক্যানসার চিকিৎসায় বাংলাদেশে জাতীয় নীতিমালা না থাকায় সমস্যা হচ্ছে। বিভ্রান্তির কারণে রোগীরাও ভুগছেন। আনোয়ার খান মডার্ণ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অনকলোজি বিভাগ ২০১৮ সালে ক্যানসার স্ক্রিনিং কর্মসূচি চালান এক হাজার ৮২ জনের উপর। এর মধ্যে পুরুষ ৩৫৬ জন এবং নারী ৭২৬ জন। তাদের মধ্যে ৮৫ জন পজেটিভ ধরা পড়ে। অর্থাৎ ৮ শতাংশ ক্যানসার হিসেবে শনাক্ত হন। ক্যানসার হিসেবে ৫৫ জন নারী ও ৩০ জন পুরুষ শনাক্ত হন। গবেষণায় দেখতে পান ৪৩ শতাংশ স্তন ক্যানসার, ১১ শতাংশ জরায়ু, ১৬ শতাংশ লাং, ১৬ শতাংশ মুখমন্ডল, পাকস্থলীতে ৬ শতাংশ এবং ৮ শতাংশ কলোরেক্টল ক্যানসারে ভুগছেন। ২৬ থেকে ৩৫ এবং ৩৬ থেকে ৪৫ বয়সের নারী বেশি স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত। আনোয়ার খান মডার্ণ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অনকলোজি বিভাগ ২০১৫ সাল থেকে এই বিষয়ে গণসচেতনতা বৃদ্ধি ও নিয়মিত স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে ক্যানসার নির্ণয় করে আসছে। হাসপাতালটির বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দ্বারা সপ্তাহব্যাপী ফ্রি স্তন ক্যানসার স্ক্রিনিং ও সচেতনতামূলক কর্মসূচি পালন করে থাকে। ৩ বছরে প্রায় আড়াই হাজার মানুষকে স্ক্রিনিং করে দেখতে পান গরিব ও নিম্ন আয়ের মানুষরা বেশি ক্যানসারে আক্রান্ত। হাসপাতালটি এ বছর আজ থেকে ৩০শে অক্টোবর পর্যন্ত নানা কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। এর মধ্যে সপ্তাহব্যাপী স্ক্রিনিং ও সচেতনতামূলক কর্মকাণ্ড চলবে। ২০শে অক্টোবর পর্যন্ত বর্হিবিভাগে ফ্রি ক্যানসার স্ক্রিনিং ও স্বল্পমূল্যে ক্যানসার চিকিৎসা দেয়া হবে। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন ডা. ফরিদ আহমেদ, ডা. মোস্তাফিজ, ডা. জাকিয়া সুলতানা, ডা. আলী নাফিজা, ডা. নূর-ই-আম্বিয়া প্রমুখ।