ঢাকা: বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় জড়িত আরও তিন শিক্ষার্থীকে পাঁচ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দিয়েছেন আদালত।
পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালত আজ বুধবার এই আদেশ দেন।
তিন আসামি হলেন বুয়েটের ছাত্র শামসুল আরেফিন (২১), মনিরুজ্জামান (২১) ও আকাশ হোসেন (২১)। তাঁদের মধ্যে মনিরুজ্জামান বুয়েটের ওয়াটার রিসোর্সেস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ১৬তম ব্যাচের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। আকাশ একই ব্যাচের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তৃতীয় বর্ষের এবং শামসুল মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের ১৭তম ব্যাচের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র।
মনিরুজ্জামান ও আকাশ হোসেন আবরার হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আসামি।
এর আগে আবরার হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার অপর ১০ জন ছাত্রকে পাঁচ দিনের পুলিশ রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা আদালতকে বলেন, বুয়েটের মেধাবী ছাত্র আবরার ফাহাদকে পরিকল্পিতভাবেই নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এ নিয়ে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের হলের ভেতরে ঢুকতে দেননি আসামিরা। নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে আর যাঁরা জড়িত, তাঁদের গ্রেপ্তার করার জন্য এই আসামিদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা জরুরি।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী হেমায়েত উদ্দীন খান আদালতকে বলেন, আবরার ফাহাদ ছিলেন নিরীহ ছাত্র। বিনা অপরাধে বুয়েটের ছাত্ররা আবরার ফাহাদকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছেন।
গ্রেপ্তার তিন আসামির মধ্যে দুজনের পক্ষে আদালতে কোনো আইনজীবী ছিলেন না।
তবে শামসুল আরেফিনের পক্ষের আইনজীবীরা আদালতে বলেন, শামসুল আরেফিন ছাত্রলীগের কোনো নেতা নন। একজন সাধারণ ছাত্র। ঘটনার দিন রাত আটটার সময় শামসুল আরেফিন ঢাকার একটি হলে সিনেমা দেখছিলেন। তিনি এ ঘটনার সঙ্গে কোনোভাবেই জড়িত নন।
মনিরুজ্জামান ও আকাশের আইনজীবী ছিল না। আদালত তাঁদের কাছে জানতে চান, তাঁরা কোনো কিছু বলতে চান কি না? তখন আকাশ আদালতের কাছে দাবি করেন, তিনিও আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। আর মনিরুজ্জামান আদালতে কোনো কথা বলেননি।
সব পক্ষের বক্তব্য শুনে আদালত আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার তিন আসামির প্রত্যেককে পাঁচ দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দেন।
আদালতে এ তিন আসামিকে হাতকড়া পরিয়ে কাঠগড়ায় তোলা হয়।
এর আগে আবরার ফাহাদ হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার অপর ১০ জন ছাত্রকে পাঁচ দিনের পুলিশ রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। ১০ আসামিকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। আবরার ফাহাদ বুয়েটের তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের (১৭তম ব্যাচ) ছাত্র ছিলেন। তিনি থাকতেন বুয়েটের শেরেবাংলা হলের নিচতলায় ১০১১ নম্বর কক্ষে। গত রোববার রাতে আবরারকে পিটিয়ে হত্যা করেন বুয়েট ছাত্রলীগের একদল নেতা-কর্মী। আবরার হত্যার ঘটনায় ১৯ জনকে আসামি করে তাঁর বাবা বরকত উল্লাহ ঢাকার চকবাজার থানায় মামলা করেছেন।
প্রথমে মামলার এজাহারভুক্ত ১০ আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়। আর গতকাল মঙ্গলবার গ্রেপ্তার করা হয় আরও তিনজনকে। আবরার হত্যার ঘটনায় গত সোমবার বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফুয়াদ হোসেন, অনীক সরকার, মেফতাহুল ইসলাম, ইফতি মোশারেফ, বুয়েট ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান ওরফে রবিন, গ্রন্থ ও প্রকাশনা সম্পাদক ইশতিয়াক আহমেদ ওরফে মুন্না, ছাত্রলীগের সদস্য মুনতাসির আল জেমি, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম ওরফে তানভীর ও মোহাজিদুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।