ঢাকা: ক্যাসিনো ডন যুবলীগ নেতা খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার ৯টি ব্যাংক অ্যাকাউন্টে জমা আছে অন্তত ৩১ কোটি টাকা। এর মধ্যে তিনটি বিদেশি ব্যাংকও রয়েছে। খালেদ মাহমুদ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য র্যাবের হাতে রয়েছেন। এর আগে পুলিশ তাকে সাত দিনের রিমান্ড নেয়। ওই রিমান্ড শেষে অধিকতর তদন্তের জন্য র্যাব ১০ দিনের রিমান্ডে নেয় খালেদকে। তদন্ত সূত্র জানায়, জিজ্ঞাসাবাদে খালেদ তার অবৈধ আয়ের উৎস, কোথায় অর্থ রাখা আছে এবং কারা এই অর্থের ভাগ পেতো তা জানিয়েছেন। খালেদ জানিয়েছেন, তার অর্থের ভাগ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিও পেতেন। তাদের মধ্য রাজনীতিক ও আইন শৃঙখলা বাহিনীর কর্মকর্তাও রয়েছেন।
তদন্ত সূত্র জানায় খালেদ স্বীকার করেছেন, মুক্তিযোদ্ধা চিত্তবিনোদন ক্লাব থেকে তার মাসে ৩ লাখ টাকা আয় হতো। ইযংম্যান্স ক্লাবে ক্যাসিনো চালিয়ে মাসিক ৪০ লাখ টাকা আয় করতেন। এছাড়া শাহজানপুর রেলওয়ে গেইট সংলগ্ন মাছের বাজার থেকে মাসিক আয় হতো ৬০ হাজার টাকা। শাহজানপুর এলাকার লেগুনা থেকে মাসে আসতো ৩০ হাজার টাকা। ফুটপাত থেকে চাঁদা আসতো ২০ হাজার টাকা। এছাড়া তার আরও আয়ের উৎস আছে যার বিস্তারিত তথ্য নেয়া হচ্ছে। সূত্র জানায়, খালেদ জানিয়েছেন, তার ব্যাংকে অন্তত ৩১ কোটি টাকা জমা আছে। এর মধ্যে স্ট্যান্ডার্ট চাটার্ড ব্যাংকে ৬ থেকে সাড়ে ৬ কোটি টাকা, ব্র্যাক ব্যাংকে আড়াই কোটি টাকা। এনসিসি ব্যাংকে এফডিআর আছে ১৯ কোটি টাকা (নিজ নামে)। ব্র্যাক ব্যাংকে ৫০ লাখ টাকা আছে তার স্ত্রী সুমাইয়া আক্তারের নামে। এছাড়া অর্পণ প্রোপার্টিজ এর নামে এনসিসি ব্যাংকে ১৫ লাখ টাকা, একই নামে ব্র্যাক ব্যাংক আছে আরও ১৫ লাখ টাকা।
এছাড়া মালয়েশিয়ার আরএইচবি ব্যাংকে আছে ৬৮ লাখ টাকা, সিঙ্গাপুরের ইউওবি ব্যাংকে আছে দেড় কোটি টাকা, থাইল্যান্ডের একটি ব্যাংকে আছে এক লাখ থাই বাথ। তদন্ত সূত্র বলছে, খালেদ যে অবৈধ অর্থ আয় করতেন তার অংশ বেশ কয়েকজন রাজনৈতিক নেতা ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কতিপয় কর্মকর্তাদের দিতেন। জিজ্ঞাসাবাদে খালেদ দাবি করেন, ২০১৫ সালে তিনি স্বেচ্ছাসেবক লীগের শীর্ষ নেতাকে ৫০ লাখ টাকা দেন। এছাড়া পূর্বাচলের একটি প্রকল্পের জন্য আওয়ামী লীগের একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতাকে দেন চার থেকে পাঁচ কোটি টাকা। ঢাকা মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইস হোসেন চৌধুরী সম্রাটকে দেন ৫০ লাখ টাকা। এছাড়া যুবলীগের কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদক কাজী আনিসুর রহমানকে দেন ৪০ লাখ টাকা।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা ও নূরুল হুদা নামের আরেকজনকে দেন দুই কোটি টাকা। ২০১৭ সালে খালেদ যুবলীগ সভাপতিকে দুই দফায় ২০ লাখ টাকা দেন বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছেন। এছাড়া ঢাকা মহানগর পুলিশের দুই জন এডিসিকে খালেদ নিয়মিত বিভিন্ন অংকের অর্থ দিতেন বলে জানিয়েছেন। সূত্র জানায়, খালেদ জানিয়েছে, তার অপরাধ সম্রাজ্যে অনেকে সহযোগী হিসেবে কাজ করে। এর মধ্যে আছে, গোরানের কাউন্সিলর আনিস ও তার সহযোগী রুবেল, ৯নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর এ, কে মুমিনুল হক সাইদ এবং তার সহযোগী হাসান উদ্দিন, আরামবাগ ক্লাবের প্রহরী জামাল এবং কাজিন সুমন। এছাড়া গোরানের রাউফুল আলম শুভও তার অপরাধ কাণ্ডে জড়িত ছিল। তার কাছে ৪/৫টি বিদেশি পিস্তল আছে বলে খালেদ তথ্য দিয়েছে। এছাড়া ১১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর রিজভী, মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের এনামুল হক আরমান, রানা মোল্লা, কাইল্লা আমিনুল, অঙ্কর এবং উজ্জল মোর্শেদ, ক্যাসিনো বকুল, ল্যাংড়া জাকির ও ড্রাইভার জিসান তার সহযোগী বলে জানিয়েছেন খালেদ।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা র্যাব-৩ এর এএসপি বেলায়েত হোসেন বলেন, আগামী সোমবার খালেদের রিমান্ড শেষ হবে। এর আগে কিছু বলা সম্ভব না। রিমান্ড শেষে আমরা এ বিষয়ে জানাতে পারবো। গত ১৮ ই সেপ্টেম্বর র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া। তার বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। মতিঝিল-ফকিরাপুল ক্লাবপাড়ায় ক্যাসিনো থেকে শুরু করে কমপক্ষে সাতটি সরকারি ভবনে ঠিকাদারি নিয়ন্ত্রণ ও সরকারি জমি দখলের মতো নানা অভিযোগ তার বিরুদ্ধে। ২০১২ সালের পর মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের সভাপতি ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাটের ছত্রচ্ছায়ায় মতিঝিল ও আশপাশের এলাকার অপরাধ জগতের নিয়ন্ত্রণ আসে তার হাতে। অভিযোগ থেকে জানা যায়, রাজধানীর মতিঝিল, ফকিরাপুল এলাকায় কমপক্ষে ১৭টি ক্লাব নিয়ন্ত্রণ করতেন এই যুবলীগ নেতা। এর মধ্যে ১৬টি ক্লাব নিজের লোকজন দিয়ে আর ফকিরাপুল ইয়াং ম্যানস নামের ক্লাবটি সরাসরি তিনি পরিচালনা করতেন।