ইরাকজুড়ে বিক্ষোভ, নিহত কমপক্ষে ৬

Slider জাতীয় সারাবিশ্ব


ডেস্ক | সরকার বিরোধী বিক্ষোভে উত্তাল ইরাক। দেশজুড়ে এই বিক্ষোভে এরই মধ্যে কমপক্ষে ৬ জন নিহত হয়েছেন। ফলে দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় কয়েকটি শহরে জারি করা হয়েছে কারফিউ। দেশজুড়ে ইন্টারনেট সংযোগ কার্যত বিচ্ছিন্ন করে রাখা হয়েছে। বেকারত্ব, দুর্নীতি ও নাজুক সরকারি সেবার বিরুদ্ধে এই প্রতিবাদ দ্বিতীয় দিন অতিবাহিত করে বুধবার। এদিন বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। এতে দক্ষিণের নাসিরিয়া শহরে কমপক্ষে তিনজন বিক্ষোভকারী ও এক পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন। বিক্ষোভে পুলিশ সরাসরি গুলি ও কাঁদানে গ্যাস ছুড়েছে বলে দাবি করেছে নজরদারি একটি গ্রুপ।
এ খবর দিয়েছে অনলাইন আল জাজিরা।

মঙ্গলবার রাজধানী বাগদাদে একজন এবং নাসিরিয়া শহরে একজন নিহত হন। আহত হয়েছেন কয়েকশত মানুষ। এক বছর বয়সী প্রধানমন্ত্রী আদেল আবদুল মাহদির সরকারের বিরুদ্ধে দেশজুড়ে এটাই সবচেয়ে বড় জনবিক্ষোভ। ইরাকি অবজার্ভেটরি ফর হিউম্যান রাইটসের পরিচালক মুস্তাফা সাদুন বলেছেন, বুধবার নাসিরিয়া শহরে সংঘর্ষে তিনজন বিক্ষোভকারী ও একজন পুলিশ সদস্য নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৭৮ জন। তবে মেডিকেল ও নিরাপত্তা সূত্রের উদ্ধৃতি দিয়ে নিউজ বিষয়ক এজেন্সিগুলো বলছে, মঙ্গলবার ও বুধবার মিলিয়ে নিহতের সংখ্যা ৯। তবে এই সংখ্যা নিরপেক্ষভাবে যাচাই করা যায় নি।

বুধবার নাসিরিয়া শহরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয় পুলিশ। ফলে দিনের শেষে কর্তৃপক্ষ সেখানে মোতায়েন করে সন্ত্রাসবিরোধী সেনা। পরে নাসিরিয়া ও দক্ষিণের অন্য দুটি শহর আমারা, হিল্লা’তে কারফিউ জারি করা হয়। ইন্টারনেট বন্ধ করে দেয়ার বিষয়ে পর্যবেক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান নেটব্লকস বলছে, রাজধানী বাগদাদ সহ দেশের বেশির ভাগ এলাকায় অনলাইনে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ছিল। ইন্টারটে সংযোগ নামিয়ে দেয়া হয় শতকরা ৭০ ভাগেরও বেশি। সশস্ত্র সেনাবাহিনী, কয়েক ডজন দাঙ্গা পুলিশ মোতায়েন করে বুধবার সিল করে দেয়া হয় রাজধানী বাগদাদের তাহরির স্কয়ার। তবে এর আশপাশে সমবেত হয়েছিলেন বেশ কিছু বিক্ষোভকারী। মঙ্গলবার বিক্ষোভ করেছেন ইউনিভার্সিটির কয়েক হাজার বিক্ষোভকারী।

বুধবার উত্তর বাগদানের আল শাব এলাকার রাস্তায় বিক্ষোভ হয়েছে। দক্ষিণের জাফরানিয়াতেও বিক্ষোভ হয়েছে। এ সময় ফাঁকা গুলি ছুড়ে ও কাঁদানে গ্যাস নিক্ষেপ করে তাদেরকে ছত্রভঙ্গ করার চেষ্টা করে দাঙ্গা পুলিশ। বিক্ষোভকারী আবদাল্লাহ ওয়ালিদ বলেছেন, আমার ভাইদের সমর্থন করতে তাহরির স্কয়ারে গিয়েছি। সেখানে তারা রাস্তার ওপর গাড়ির টায়ার পোড়াচ্ছিলেন। তিনি বলেন, উন্নত সরকারি সেবা ও ভাল চাকরি চাই আমরা। আমরা বছরের পর বছর ধরে এমন দাবি জানিয়ে আসছি। কিন্তু আমাদের কথায় কোনো সাড়া দিচ্ছে না সরকার।

আল জাজিরার সাংবাদিক ইমরান খান বলছেন, র‌্যালিতে এত মানুষের সমাগম দেখে বিস্ময় প্রকাশ করেছে ইরাক সরকার। এই বিক্ষোভ আয়োজন করা হয়েছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে। তিনি আরো বলেছেন, এই বিক্ষোভ যেভাবে ছড়িয়ে পড়ছে তাতে খুবই উদ্বিগ্ন সরকার। তাই তারা বিক্ষোভের স্থান থেকে সরাসরি সম্প্রচারে বিধিনিষেধ দিচ্ছে। ফেসবুক ও টুইটারের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ওপরও একই রকম ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এ অবস্থায় পূর্বের শহর কুট-এ মিউনিসিপ্যালিটির ভিতরে প্রবেশ করার চেষ্টা করেন বিক্ষোভকারীরা। হিল্লা ও দিয়ানিয়ার রাস্তায় রাস্তায় বিক্ষোভ করেন শত শত মানুষ। কয়েক হাজার মানুষ জমায়েত হন তেলসমৃদ্ধ শহর বসরায়। তারা প্রাদেশিক প্রশাসনিক ভবনের সামনে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ করতে থাকেন। বিক্ষোভ হয়েছে সামওয়াতেও। ছোটা আকারে বিক্ষোভ হয়েছে কিরকুক, তিকরিত এবং দিয়ালা প্রদেশে।

এ অবস্থায় জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠক হয়েছে বুধবার। এতে সভাপতিত্ব করেছেন প্রধানমন্ত্রী আবদুল মাহদি। এই পরিষদ থেকে নিহতের ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে বিবৃতি দেয়া হয়। প্রতিবাদ ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার বিষয় নিশ্চিত রাখার কথা বলা হয়। তবে এতে বুধবারের বিক্ষোভের কোনো কথার উল্লেখ ছিল না। এতে বলা হয়েছে, নাগরিকদের, সরকারি এবং বেসরকারি সহায় সম্পদ রক্ষায় কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেবে। সব সামরিক ইউনিটকে উচ্চ সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়েছে বলে জানিয়েছে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়।

ওদিকে বেকার গ্রাজুয়েটদের কর্মসংস্থানের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী মাহদি। একই সঙ্গে স্থানীয়দের জন্য শতকরা ৫০ ভাগ কোটা রাখার জন্য তিনি তেল বিষয়ক মন্ত্রণালয় ও সরকারের অন্য সংস্থাগুলোকে নির্দেশনা দিয়েছেন। বিশ্বব্যাংকের হিসেবে, ইরাকের যুবকদের মধ্যে বেকারত্বের শতকরা হার কমপক্ষে ২০ ভাগ। তাই বাগদাদে অবস্থিত মুস্তানসিরিয়া ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক সম্পর্কের প্রফেসর আলী আল নাশমি সর্বশেষ এই বিক্ষোভকে বর্ণনা করেছেন এযাবতকালের মধ্যে সবচেয়ে গুরুতর হিসেবে। তিনি বলেন, বিক্ষোভ থেকে অনেক দাবি নিয়ে স্লোগান দেয়া হয়েছে। তারা চাকরি চায়। দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই চায়। বিদ্যুত চায়। তাদের একক কোনো স্লোগান বা একক কোনো নেতা নেই। তারা সবকিছুর দিকে দৃষ্টি দিয়েছে। তারা কোনো বিশেষ ধর্মীয় গ্রুপের বা রাজনৈতিক দলের অনুসারী নন। তাই তাদেরকে নিয়ন্ত্রণ করা বা তাদের সঙ্গে সমঝোতা করা খুব কঠিন বিষয় হয়ে দাঁড়াবে।

বুধবার দিনের শেষের দিকে শিয়া মতাবলম্বী শক্তিধর নেতা মুক্তাদির আল সদর শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ ও ধর্মঘট করার আহ্বান জানিয়েছেন। অন্যদিকে তুরস্কের আঙ্কারায় বিশ্লেষক ইউসুফ আলাবারদা ইরাকের পরিস্থিতিকে অত্যন্ত ভঙ্গুর বলে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেছেন, ইরাক একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ। একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হওয়ার খুব কাছাকাছি। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র, ইরান ও তুরস্কের মধ্যে রয়েছে শত্রুতা। এসব কারণে ইরাকের ভিতরকার পরিস্থিতি অত্যন্ত ভঙ্গুর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *